ইমরুল হাসান
………………………………………………………………………………………………………………
ঋতুচিহ্নগুলি’র ভূমিকা কবিতা
মনে হয় বহুদিন পর, জেগে ওঠতে চেয়েছি আজ, চারপাশ বৃত্তের মতো ঘূর্ণায়মান ভেবে
ভয় হয়, ক্লান্তির কতো কি, ঘুমের মতো তবু ভয় হয়, মৃত্যুর মতো আনন্দ হয় অথবা
না-জানা কেবলই ইচ্ছে হয় চুপচাপ বসে থাকবার; বহুদিন পর তোমারে কেমন দেখায়
দেখবার মতো করে এতসব সময় এসেছে আর যাচ্ছে চলে, কোনদিন হয়তো তা-ই রয়ে যাবে
ফুল আর চাঁদ, বৃক্ষের স্বাভাবিক ফল, ঋতুনির্ভর সবকিছুতে, হয়তো পরিবর্তন এসে যাবে।
চিঠিগুলি
নিস্তরঙ্গ ঘুমের ভিতর চিঠি-লেখার দিনগুলি ফুরায়ে গেলে আবার, মৃদু পায়ে কারা উঠে আসে?
ডাকঘরের বাক্স থেকে ঘরে ঘরে বিলীয়মান শব্দে, আবারো মুছে যায়;
অস্ফুট আলো আসে জানালা দিয়ে, শীতের নরোম দিন, বানর নাচছে সকালে
#
সেলাই মেশিনে করা ফুল-তোলা রুমাল পাঠিয়েছো
(সিঙ্গার কোম্পানীর মেশিনে করা, ১০,০০০ টাকা দাম)
বারান্দায় বসে বসে করা, তাই তাতে নানান আকৃতি, বিক্ষিপ্ত ও চঞ্চল-মন
ফুল আছে ৩টা, লাল রঙের; পাতাগুলা সবুজ আর হলুদ সুতায় তোলা;
সেলাইকলে হাত রেখে অনেক সময় কাটলো তোমার
মেঘনাব্রীজ পার হয়ে ট্রেন চলে গেলো ভৈরব জংশনের দিকে;
গাঢ় সেন্টের গন্ধ-মাখা তোমার রুমাল, পোস্টম্যান দিয়ে গেলো
কি লিখবো এর উত্তর?; ‘আর কবিতা না,
তুমি লিখ অনেক দীর্ঘ, দি-ই-র-ঘ আমার চিঠি’
প্রত্যাভিক্ষা তোমার!
#
জবাব লিখছি তোমার চিঠির
ঘর-সংসারের আরো কতো কথা তুমি জানতে চেয়েছো
আর আমিও এখন বলতে পারি অনেককিছু;
যেমন ধরো, এখনো মেঘনা নদী ছড়ায় নাই তার আঁচল খাড়ি অব্দি,
সবুজ ধানের ক্ষেত সোনালি হয় নাই এখনো আর
নতুন রাস্তায় মাটি জমা করার পর ইট ফেলা হচ্ছে মাত্র
ঢালাইয়ের কাজ শেষ হতে না হতেই বৃষ্টি চলে আসবে
তোমার রিকশা খানা-খন্দে আটকে বারবার ঢেঁকুর তুলবে
ওর বারোটা বাজবেই, যদি ওই পথে তোমার চিঠি না এসে, তুমিই চলে আসো
দেখবে মলিন, হাওয়ারা পাল্টাচ্ছে ডানা;
কতকিছু থেমে আছে, থেমে নাই
পোস্টকার্ড পাঠাও আরো, সম্ভব হলে;
চিঠি লিখার দিনগুলি শেষ হয়ে যাচ্ছে, দ্রুত
স্নিগ্ধ হাসি
স্নিগ্ধ হাসি, চলে গেছ, প্রত্যাবর্তনের কোন চিহ্ন না রেখে
হয়তো আবার দেখা হবে, হয়তো আবার দেখা হবে না
গাছের পাতা থেকে রোদ ঝরে, জবাফুলটি আরো নুয়ে পড়ে
শেষ সম্ভাবনাটুকুও শেষ হয়ে যাবে একদিন।
পরিত্রাণ পেয়েছি
পরিত্রাণ পেয়েছি; আহা, এই পাপবোধের কাছে কত কী যে ছিল আমার!
পরিত্রাণ পেয়েছি, ঈশ্বর; শান্তমুখ নরকে যাইনি, পবিত্রতায়
নিজেকে খেয়েছি; বিশাল আকাশের মতো পরিপূর্ণ হয়ে
আমাকে দেখেছো, লুকিয়ে থাকার এই কৌশল আর হেসেছো
হাস্যকর আমার এই অভিপ্রায়; মুছে গেছে, দৃশ্য প্রতিদিন
ফিরে আসে আর চলে যায়, আর তার সাথে এই খেলাও
চিরকাল অর্ধশায়িত মন্দিরে আমার
চিরকাল অর্ধশায়িত মন্দিরে আমার, দেখে যাবো প্রাণভয়; হতবিহ্বল মুখ ও অস্ফুট শব্দাবলী
দেবতা-ঋণে কারো যজ্ঞ-উৎসবে হবো ভীত ও কুণ্ঠিত; একটি একটি প্রলাপের ঘুমে
নিজেরে জাগিয়ে তোলবো, দেখবো স্বপ্নমেঘে তেপান্তর পাড়ি দিলো কারা
কারা পথে হেঁটে যায়, বিস্মরণ ফুলের;
মন্ত্রমুগ্ধ ভাস্কর্য দেয়ালে দেয়ালে, যে কোন চিত্রার্পিত মানুষের মতোই;
তবু তাকে স্থির ভেবে জানাবো প্রণতি,
পাথরকেই ফুল বলো, পাথরকেই মন্দির; কখন যে হুড়মুড় ভেঙ্গে পড়বে এই শরীর!
সেপ্টেম্বর ১, ১৯৯৮
হ্যামলেট
এইবার আমারে মাফ করো
যখন মঞ্চের ভিতর নেমে আসতেছে অন্ধকার
আর মানুষগুলা শুধু ছায়া ছাড়া আর কিছুই না, তখন
এই নির্বোধ পাঠ থিকা আমারে বাদ দাও
নিভে-যাওয়া চুলার ভিতর ফাঁপা ধোঁয়াও যে
তারও আছে শেষ হয়া যাওয়ার পূর্ণতা, বিরতি ও বিশ্রাম;
আমারেই বইলো না শুধু
দুর্গ-প্রাচীরে লেখা শোকলিপিগুলা পড়তে বারবার
অনুকরণ করতে
যুদ্ধবন্দী আর মৃতদের চিৎকার…
[প্রথম-লেখা: অগাস্ট ৪, ১৯৯৯;] রি-রাইট: ২০১১
কবিতা লেখা
প্লুতস্বর, আরো অনাকাঙ্খিত হলে
তোমারে ফেলে চলে যাবো পথের ধারে
সন্ধ্যাবেলা, ঝিঁঝিঁদের আর্তনাদে, নিরব
অন্ধকারের ডানায় তোমারে উড়ে চলে যেতে দেখে
ফিরে যাবো; ঘরে বসে, টেবিল চেয়ারকে বলবো
‘ক্ষমা করো, এই প্রবঞ্চণা, ভারবাহী মহিষের’
রিয়ালিটি
পাখিগুলি ফিরছিলো স্কুল থেকে
তাদের কিচির-মিচিরে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে হিন্দি গান;
রোদে চোখ জ্বলবে, সানগ্লাসটা পরে নাও’
হাওয়া বলছে গাছকে, দুপুরবেলায়।
১৯৯৮
কবি
‘যে কবি, সে শুয়ে থাকা মুহ্যমান’ সারাদিন ভেবেছি ভয়ে ভয়ে
উদ্বেগাকুল শীত ঋতুর চলে যাওয়া, স্তব্ধতার ঘন্টাধ্বনি
চারপাশ গমগম শব্দে আওয়াজ তুলে, আবার চুপচাপ;
সম্মতি-সূচক ভাবনায় নাই কোন স্বীকৃতি,
ধূলায় পড়ে আছে শিরস্ত্রাণ – ‘কবে আর হবো উত্থানরহিত?’
মুগ্ধ দিন গেলো কেঁদে কেঁদে, তার ছায়ায় আটকে পড়ে হয়েছি মুহ্যমান;
কবি, যে কুটবুদ্ধি-বিকল, দিতে পারে নাই কোন সমাধানও।
বোতল-বন্দী
সাগরপাড়ে এসে মনে হল পুরানো দিন। ঢেউ এর জয়গান। মাদকাসক্ত কিশোর ছেলের মাথায়হাত রেখে মা সূর্যাস্ত দেখছে। উত্তাল পবন ভাসাবে এই দৃশ্যও! বালির বুকেস্যান্ডেলের ছাপ রেখে এসো নামি বোতলে। ছিপি আঁটা ভালো করে; উল্টা করে নিলেচুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে একটু; তীব্র রোদের আঁচ নিয়ে পিঠে টুপ করে নেমে পড়িতাতে। দেখি, একি ম্যাট্রিক্স দৃশ্য! শ্যাওলা-পড়া পানির ভিতর আমি না পারছিসাঁতরাতে, না পারছি ভেসে যেতে! চিৎপটাং হয়ে শুয়ে প্লাস্টিকের পর্দা দিয়েপৃথিবী দেখছি, ভাবছি এ কি মনোরম খেলা ইল্যুশনের। আর রিয়ালিটি – বোতলঝাঁকালে, লুফালুফি খেললে ছেলেমেয়েরা অথবা স্বামী-স্ত্রীর গাদাগাদিতেপাল্টাচ্ছে আমার পারসেপশন। ভ্রমণে আমি হীনমন্ম্য হয়ে উঠি। ভাবি এর শেষকোথায়! ঠান্ডা হাওয়ায়, শীতের স্রোতে শত শত মানুষের ভিতর আমিও চলেছি বোতলভরা পানি হাতে, সাগরের তীরে। প্রাণ-ভোমরা ওই বোতল, তার ভিতর পানি আরহতহ্বিবল আমার হৃদয়; চলো ওইখানে, ওই ঝাউয়ের ভিতর গুটি সুটি, মোটামুটিদূরত্বে অস্পৃশ্য হয়ে বসে থাকি। সব পানি খেয়ে নিলে, তাও আমি আষ্টেপৃষ্ঠেপ্লাষ্টিকে জড়িয়ে রয়ে গেছি, বিদগ্ধ বাতাসের দোলা আমিও পেয়েছি, ভেজা কাপড়ওদোললো, দেখ প্রমাণ! হাইড এন্ড সিক। হাইড এন্ড সিক। তারপরও তো বেরিয়ে আসাএকদিন, তখন চোখ ঘোলাটে, হৃদয় চটচটে, অভিজ্ঞতা হায়, সে তো ভোলার নয়!
গান
এমন দৃশ্যের গানে বেদনা হয়, প্রশ্ন জাগে
জগৎভোলা আলোচনা আর সময়ে যেতে যেতে
কার আর এমন হয়, কোন পরস্পর বিরোধেও যদি এই
অহেতুকটা কাটে আর মিনিংলেস জীবন-প্রক্রিয়া ঘিরে যাত্রা
অবিরত তাদের বসবাস প্রিয় এই গোপন কুপিত হৃদয়বালা হতোদম্য
বাসনাপ্রিয় গিজগিজ গপসপ তারপর হাঁটতে না হাঁটতেই গান যে ছুটল বাপ রে
প্রতিটা দিনের সকাল
১.
অনেকদিন পর শুনি, তোমার আবার বিয়ে হয়ে গেছে
সস্তা প্রেমের কবিতা লিখতে লিখতে আমার হাত প্রায় জুবুথুবু।
দেখি, তুমি ভোরের আকাশের নীল জামা গায়ে হেঁটে চলেছো
‘দূরত্ব মহান’ শ্লোগান দিতে দিতে রিকশা চলে গেলো
বাতাস হামাগুড়ি দিচ্ছে শূন্য রাস্তার উপর আর আমিও
নুয়ে আসি তরুণ বৃক্ষটির কাছাকাছি, পাশে চা-ঘর, ওয়ার্কশপ….
দিন শুরু হলো, কল্পনার আগুন, সেও তো নিভলো না আর।
২.
তোমার জন্য যে ফুল, ফুটে ঝরে গেলো বসন্তে, শীতার্ত বাতাসে
তার ধ্বনি বাজে – নরোম, নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পথের ওপর
সকালের রোদ এসে হানা দেয়, জানালার ওপাশে পৃথিবী
মনোরম আলোয় ভাসতে ভাসতে দু’জন মিস্ত্রি লোহার রড পেঁচাচ্ছে
রেডিওতে ৭ টা ৩০ শে’র সংবাদ; একটানা বেজে চলেছে শব্দ
মনে হচ্ছে , এমন কোথাও কিছুই ঘটেনি অথবা ঘটছেও না আজকাল আর।
মনেশ্বর রোডে
মনেশ্বর রোডে একদিন পলিটিকস হয়েছিল খুব, সকাল দশটায়; আমরা ক’জন
পড়িমড়ি করে ঘুম থেকে ওঠেই, হাত-মুখ ধোয়া, গোসল-নাশতা; তারপর রিকশা নিয়ে ছুটছি
ভাবতে-না-চাওয়ারনৈরাশ্য থেকে এই ভ্রমণ, ট্যানারির পাশ দিয়ে ময়লা ড্রেন আর দুর্গন্ধেরসকালবেলায় উপলদ্ধি আসতে থাকলো ক্রমশ, মোজাইক করা মেঝের দিকে তাকিয়ে বসেথাকা সোফাতে গাদাগাদি, কিছুক্ষণ পর টিভিতে পাক-ভারত ম্যাচ দেখলো আমি হারিয়েযাচ্ছি বক্তব্য, কর্মসূচী ও উত্তরণের ভিতর, মিড উইকেট দিয়ে চার হয়ে গেলো, তারপর উঠে দাঁড়ানো, হ্যান্ডশেক আরো কি কি ভাবে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারতাম আমিক্ষণকালের প্রতারণার মুহূর্তগুলিতে
যেখানেদর্শক বা সর্মথক কিছুই আমি ছিলাম না তবু অস্পষ্ট ও ঘন বিন্দুগুলির মধ্যেদীর্ঘায়িত আমারই ছায়া; নিশপিশ করতে করতে একসময় বেরিয়ে আসতে থাকলাম সকালবেলাপেরিয়ে পলিটিক্স কাতরতায় মশগুল বন্ধুদের সাথে, মনেশ্বর রোড থেকে
অবসর
তোমাদের অবসরগুলি কিভাবে কাটে আজ
বিকেল জুড়ে শুধুই কি স্নিগ্ধতা
ম্রিয়মাণ গাছের পাতা আর ঢেউয়ের পর ঢেউ
আমি বসে, আতংকিত হয়ে লক্ষ্য করি
কিভাবে বাতাস রাস্তার ধূলা, পাতা উড়িয়ে নিয়ে চলে
চাকাগুলি মন্থর, গড়িয়ে গড়িয়ে বাঁক ঘুরে হারিয়ে যাচ্ছে আবার
যেন শীতলতা, দৃশ্যের শেষে পর্দা ফেলে দেয়
তার অন্তে ভাবনা কেবল, ভাবছি
এই হাসি-খেলা ছিল কত না মধুময়!
মন তুমি করো মনোনিবেশ
যুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছি,
পালিয়ে কৃষিকাজে করেছি মনোনিবেশ
কিছুদিন কেটে গেলো এই করে
ভাবছি পালানোর সময় এলো, আবারো
যুদ্ধ থেকে পালাবো
কৃষিকাজ থেকে পালাবো
সবকিছু থেকে সরিয়ে নিবো নিজেরে
আসলে নিজ বলে তো কিছু নাই
যুদ্ধ আর কৃষিকাজ পড়ে আছে।
গাধা
গাধা দিয়া হইতেছে হালচাষ
চাষী বৃদ্ধ
স্থান: ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরবর্তী অঞ্চল
সময়: বিকালবেলা।
তার পাশে
দৃশ্যের বোঝা টানতেছি
আমি আরেক গাধা।
মাটির উর্বরতায় গেঁথে যাচ্ছে মন
দিগন্তব্যাপী ফসলের মাঠ
দূরে দূরে একটি একটি মানুষ।
গাধা ঘুরছে চক্রাকারে
ছোট্ট জমি, আয়তকার;
তার চলাফেরায় চিরে যাচ্ছে
মাটি, মাতৃসম বসুন্ধরা।
বনানী ১১
একটা সোনম কাপুর বসে আছে
ঠোঁট বাকাচ্ছে, চুলে হাত দিচ্ছে …
পিজাতে কামড় দিয়া ঘোরাচ্ছে চোখ
ডানা ভেঙ্গে, খোঁড়াচ্ছে পা
দিল্লী৬ দেখতেছি
কফি ওয়ার্ল্ড, বনানী১১ তে বইসা
সত্যবাদী
যে বাক্যে তোমার অধিষ্ঠান
যে বাক্যে আমি মরে ভুত
কেবল তুমি আছ, মানব-প্রেমিক
আমি গ্র“প-পলিটিক্সের শিকার,
আইডেনটিটি বিহীন আমার বাক্য
আমি তো মরে ভুত, কি আর বাক্য
যেহেতু কে আর আমি
কবিতা-লেখা
আসলেমাঝে মাঝে কিছু রাত আসে, আসে দিনযাপন; মনে হয় সবটাই কবিতার। যে কোন কিছুলেখা সম্ভব। আর যা কিছু ভাবছি, তার সবটাই কবিতা। একরাতে একটা কাব্যগ্রন্থলিখে শেষ করে উঠার মতো বিষয়। এত যে কবিতা, লিখে শেষ করা যায় না। হতচকিত, একটার পর একটা, ভাসছে দুর্দমনীয় ভাবনাগুলি, আকাঙ্খার; কাকে-ই বা প্রতিহতকরি, বলি, একটু দাঁড়াও! দুইহাত দিয়ে যা পাই, তার সবটাই নিতে চাই। বলি; সময়, ডাইনী বুড়ি, তুই একটু দাঁড়া। রাতগুলি দীর্ঘ হয়ে ওঠে, দিনের ক্লান্তিগুলিওম্লান হয়ে আসতে থাকে। কী যে বিহ্বলতায়, মুহূর্তগুলি কেঁপে কেঁপে ওঠে, মোহগ্রস্থতায়, স্থাণুর মতো বসে থেকে থেকে। তবু সে কি আসে? হৃদয়হরণ, চপলচরণ, নটী বেটির মতোন; হেসে হেসে প্রতিচ্ছায়া ফেলে যায়, বলে, আসছিলাম তো!
এই শুনে মূঢ় প্রেমিকের মতোই হতবিহ্বল, ভাবি; তাহলে কে সত্যি, আমি, প্রেম না কবিতা?
নিরবতা
সবকিছুইযে লিখতে হবে এইরকম কোনকিছু মনে হয় না, মাঝে মাঝে মনে হয় দিনগুলিবিস্মৃতির, অস্তিত্বগুলি অসংলগ্ন, পাঠগুলি মৌন, নিরবতাগুলি জরুরি ওঅভিব্যক্তিময়; জরুরি যে কথাগুলি, তা হচ্ছে, নিরবতা… শব্দগুলি, অস্তিত্বগুলি, বর্ণনাগুলি এতোটাই অসম্পূর্ণ যে প্রকাশমাত্রই তা বিহ্বল…এইরকম নিরবতার ঘোরটোপে আটকে পড়ে আছে দিন, তার বাগবিধি ও প্রকরণ ভাষারদৃশ্যমান প্রকোষ্ঠে, শব্দের অর্থবোধকতার পাশে… মসৃণ, পেলব হয়ে থাকে…এইভাবে ভাষার ভিতরে নিরবতাগুলি জরুরি… জরুরি নিরবতাগুলির ভাষা হয়েওঠাটাও… কথার মাঝখানে বিরতিগুলি… শ্বাস নেয়ার অভিঘাতগুলি… ক্রোধেবিস্ফোরিত হওয়ার আগে সঞ্চিত শক্তিগুলি… অন্তিম উচ্চারণের আগে কেঁপে ওঠারভিতর স্থবিরতাগুলি… কথা বলতে বলতে ডুবে যাবার ভিতর আরো কথা খুঁজে নেবারঅভিযাত্রাগুলি… মৌন, নিরবতার ক্লেদ নিয়ে শুধুই নিরব, নিরবতাগুলি…উচ্চারণের পূর্ব-মুহূর্তগুলি… যেন এখনই কথা বলে ওঠতে চাইছে… আরকথাগুলিও বলছে, নিরবতা… দ্রুত ও অভিঘাতময় নিরবতার শব্দগুলি আছড়ে পড়ছে…ছন্দ-আকুল তার একটি… কর্কশ বেয়াদবি… মিহি মিছরির ছুরি… গোপন মলম…প্রলেপ বন্ধুত্বের… আশ্বাস ও সাত্বনাবাণী… হুশিয়ারি… আর বলো না কোনকথা তুমি… নিরবতার ঘরবাড়ি ডুবে যাচ্ছে সময়ের পানিতে আবার… ভেসে ওঠছেনৌকা কথার… নিরবতার ভিতর কত যে কথা… কথাগুলি বলছে, ‘নিরবতা, তুমি চুপকরবে নাকি?’
না-লিখা
না-লিখারগর্তে পড়ে এরা আছে ঠিকই; লিখা নাই, না-লিখার হতাশা তো আছে! আছে কবিজন্ম, কবিতামুহূর্ত। অশরীরী বোধ নাই, আছে ভাবনাহীন অস্তিত্ব বিন্যাস। না-লিখা তোভালোই, যখন লিখার ভিতরকার জলজ্যান্ত সাপগুলি ওঠে এসে দাঁড়িয়ে আছে, ছোবলদিচ্ছে, ঢুকে যাচ্ছে শরীরের ভিতর না-লিখার বিষ। যারা লিখছে, তারা লিখছেতাদেরটাই, আমার না-লিখা লিখার অতীত, চলছে ভবিষ্যতে; হাত-পা নিয়া আগাইয়াযাচ্ছে… ভুস ভুস করে যাচ্ছে সময়… যাক না বাবা, কোথায় যাবে তারা…আমাকে ফেলে দিলে আমার না-লিখাও লিখার ভিতর থেকে ওঠে আসতে থাকবে…
সকালবেলা
ডিম হয়ে ভেঙ্গে পড়ি
গরম কড়াইয়ের তেলে
বলি মন উঠো, সকাল হয়েছে!
চিম্বুক পাহাড়ে
একটা পাহাড় ডাকছে, ‘ও ভাই, যাও কন্ডে?’
আরেকটা পাহাড় বলে, ‘মেঘ ধরতে দাঁড়ায়া আছি’
মেঘগুলি উড়ে উড়ে … পাহাড় থেকে পাহাড়ে …
তারাগঞ্জ টু দিনাজপুর
তারাগঞ্জের সুন্দরীরা তারা হয়ে বসে আছে টিনের বাড়িগুলির ভিতর …
রোদের আলোয় হেসে উঠছে ধান …
দেয়ালে দেয়ালে তেলের শিশি খাড়া হয়ে আছে, কোথাও ডিটারজেন্ট পাউডার, স্বাস্থ্যসচেতন-বিজ্ঞাপনগুলি …
দূর ফসলের মাঠে একটানা পল্লী-বিদুতের কালো তার, হঠাৎ-ই দাঁড়ায়ে গেছে মোবাইল কোম্পানীরটাওয়ার …
টেম্পোতে করে যাচ্ছে মহিষ একটা …
মাটি সরে গিয়ে মৃত্যুর দাঁড়প্রান্তে, পানির ওপর ঝুঁকে দাঁড়ায়ে আছে একটা গাছ, নতুন সবুজ পাতায় ভরা …
রাইস মিলে শুকাচ্ছে ধান, জড়ো হচ্ছে বস্তায় বস্তায়, ওরা ঢুকবে সরকারী গুদামে, হা-পিত্যেশ ছাড়াই কাটিয়ে দেবে অনেকগুলি বছর
দশ মাইল ছেড়ে এসে, লিচুবাগানের গাছগুলি পার হয়ে, শস্য-প্রদর্শনীর মাঠ দেখতে দেখতে ঢুকে পড়ছি শহরে
দেখছি স্কুল-ব্যাগ কাঁধে করে যাচ্ছে ছেলে-মেয়ে, গমগম করছে মানুষ-জন, হর্ণ দিচ্ছে গাড়ি, রিকশা বাজাচ্ছে ঘন্টি …
তারাগঞ্জ থেকে আমি দিনাজপুর আসছি, মেডিকেলের মোড়ে দাঁড়ায়েই খুঁজতে নামছি তোমারে …
বিপণীকেন্দ্র
পাহাড়ি মহিলাদের বিপণীকেন্দ্রে আমরা গিয়েছিলাম।
আমি, আমার বউ আর আমাদের মেয়ে।
তারা খুবই উৎসাহী, নানান পোশাক দেখায়।
আমরা হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে সরল পোশাকগুলি দেখি
হ্যান্ডিক্রাফটস – উহাদের নাম।
আমার মেয়ের পোশাক কিনি, তামাটে লাল।
আমার বউ কথা বলে, ওরাও উত্তর দেয় একই ভাষায়
তারপরও নিজেদের পৃথক পর্যটক মনে হয়
তারাও হয়তো একই কথা ভাবে, খামোখাই।
কারণ আমরা তো ইউরোপিয়ান প্রতিনিধি নই,
আর ওরাও নয় শিক্ষানবিশ
মনোঃসমীক্ষণ কেন্দ্রে, পৃথিবীর।
উদ্ধার-কর্তা
উদ্ধার-কর্তা মহান, কিন্তু সে নিতান্ত-ই কিশোর।
আমার বউ তারে ধন্যবাদ জানায়,
আমি বিনম্রভাবে হাসি, মেয়েরে বলি,
‘আন্কেলকে টা টা দাও, গুডবাই বলো’।
ঝর্ণা
ঝর্ণার পানির সে কি শব্দ!
সে কি ঠান্ডা এই জল!
কোনদিন ফুরাবে না যেন প্রপাত
চির অস্ফুট এই কোলাহল!
পেদা টিং টিং
এই রকম একটা মনোরম দ্বীপরাজ্যে এসে
আর কি চাই তোমার বলো?
লাঞ্চ শেষে তোলা হোক
একটি ফ্যামিলি ফটো!
মিলিটারি
শালা, মিলিটারির দাপট কতো, দেখো!
মন কেন তুমি মিলিটারি হইলা না?
জিপ চালাইতা ফাঁকা রোড দিয়া
স্পীড বোটে যাইতা দূরে
পাহাড়ের চিপা দিয়া ক্যাম্প পরিদর্শনে!
আজ শুধুই দীর্ঘশ্বাস, ট্রাইবাল বেদনা চাপা, মনে।
ফিরে যাচ্ছি
ফিরে যাচ্ছি, আবার আসবো বলে।
এই যেমন, বিদুৎ কর্মকর্তার বউ উঠলেন, দুইজন বাচ্চাসহ
বাপের বাড়ি কয়েকটা দিন থেকে আবার ফিরে আসবেন বলে।
জেলা মৎস্য অফিসারের তিনজন বন্ধু বউ-বাচ্চাসহ
ভেকেশন কাটিয়ে ফিরে চলেছেন;
তারাও আবার আসবেন কখনো সময় পেলে,
কথা দিলেন।
হিন্দু নব-দম্পতির হানিমুন হলো এই রাঙামাটিতেই
কী লাল বউটার কপালের সিঁদুর!
যদি তারা নাও আসেন কখনো, চিরকাল গল্প করবেন
এই ভ্রমণের;
বিয়েটা টিকে গেলে নাতি-নাতনিদেরও বলবেন হয়তো
কাঠের ব্যবসায়ী যিনি, উনাকে তো আসতেই হয়
এক সপ্তাহ পর পর;
রাঙামাটি তো এখন উনার বাড়ি ঘরের মতোই।
শেষ বাসে আরো অনেকের সাথে আমরাও ফিরে চলছি।
সূর্য ডুবে গেছে।
বৃষ্টি হচ্ছে একটু একটু।
পথ ভিজে যাচ্ছে।
অনেক হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত আমদের মেয়েটা এখন
তার মায়ের কোলে ঘুমাচ্ছে।
জেগে উঠে শে কি বুঝবে কোনদিন, তার কি মনে থাকবে
শেও এসেছিল রাঙ্গামাটিতে একদিন;
দেখেছিল পাহাড়, উঁচু নিচু পথ
গ্লানিময় জলের ছোট্ট শহর!
উইন্ডো- শ্লেট
উইন্ডো, তুমি কই থাকো?
আনন্দিত এবং স্যাড (স্যাডিস্ট না) দৃশ্য তুমি আমারে দেখাও!
প্রকৃতি, আকুল করা গাছ-গাছালি, বেজি আর কাঠবিড়ালি…
আমি এইগুলা’র ছবিও তুলবো, ফটোগ্রাফি’র এক্সজিবিশন করবো না
মন-খারাপের দিনে এইসব দেখতে দেখতে আমি কানবো…
বলবো, ‘একদিন আমি এইসব পকরিতি দেখতাম, আর এখন
কেন জ্যামের ভিতর বইসা আমার দিন কাটাইতে হয়?
কেন মানুষের ঘামের গন্ধ আমার নাকে নিতে হয়?
ফুল-পাখি-নদী-খেত: তোমরা কই গো?’
মনে কোরো, এখন ঘরের ভিতর শোয়া; একটা উইন্ডোই আমার চাই
আমি অমল হইবো, দইওলা, তোমার মিহি-গলার ডাকটা ডাকো…
আমার ইউটিউব নাই, বব ডিলানের ক্রেজ শেষ, সুমন কাকুও আর ভাল্লাগে না
প্যানপ্যানানি রেভিউলোশন আর কদ্দিন!
এর চে’ ভালো ব্যক্তি-আবেগের কবিতা লিখি, সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়া প্যাশনেট গান গাই,
ওই ওই যে মেগ; আমার ভালোবাসা:
তুমি তারে দেখাও, উইন্ডো; আইফোন, স্যামসং অথবা সিম্ফনির মোবাইল সেটে…
কাইত হয়া শুইয়া রইছি আমি, তুমি উইন্ডো খুইলা ধরো, গবাক তরুর সারি…
তা নাইলে আমি ত লিখতেই থাকবো খালি বোকা বোকা ন্যারেটিভ কবিতাগুলি!
আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে
আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে।
যেহেতুআমি র ক্যাপিটালিজমের ইকনমিতে আছি, প্রতিদিন মিনিমাম ১২ ঘণ্টা ম্যাটেরিয়ালরিপ্রডাকশনে ইনভলব্ড থাকতে চাই। ৮ ঘণ্টা ঘুমাইতে চাই। ২ ঘণ্টাবউ-বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর পরে ২ ঘণ্টা আমি লিখতে চাই প্রতিদিন।সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি কাঁচা-বাজার, সুপারমার্কেট ও শপিংমলে যাইতে চাই।সিনেমা দেখতে এবং বই পড়তে চাই একটানা। সরকারি ছুটির দিনে আমি ঘুরতে যাইতেচাই। আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট ইমপ্লয়ি, পারফেক্ট হাজব্যান্ড (ওয়াইফ), পারফেক্ট ফাদার (মাদার) অ্যান্ড অ্যা রাইটার হু ক্যান বি রিকগনাইজড অ্যাজঅ্যা মেশিন।
সবকিছুর পরে, রেদার দ্যান টু বি ইন এনি ব্রাকেট অর এনি জেন্ডার বায়াসড স্পেসিস, সাম ডে আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা ট্রু মেশিন।
(ট্রিবিউট টু অ্যান্ডি ওয়ারহল। যৎকিঞ্চিৎ বাংলাভাষা রয়া গেলো!)
I want to be a perfect machine someday
I want to be a perfect machine someday.
Jehetu ami raw capitalism er economy te achi, protidin 12 ghonta material reproduction e involved thakte chai. 8 ghonta ghumaite chai. 2 ghonta bou-bacchader shathe shomoy khatanur pore 2 ghonta ami lekhte chai protidin. Shaptahik chutir din e ami kancha-bazar, supermarket o shopping mall e jaite chai. Cinema dhekte ebong boi porte chai ektana. Shorkari chutir din e ami ghurte jaite chai. I want to be a perfect employee, a perfect husband (wife), a perfect father (mother) and a writer who can be recognized as a machine.
Shobkichur pore, rather than to be in any bracket or any gender biased species, I want to be a true machine.
(Tribute to Andy Warhole. Jotkinchit bangle vasha roiya gelo!)
I want to be a perfect machine someday
I want to be a perfect machine someday.
As I exist in the economy of raw capitalism, I want to involved at least 12 hours in the material reproduction. Want to sleep for 8 hours. After spending 2 hours with spouse and children, I want write 2 hours daily. I want to go to the fish market, super store and shopping mall in the weekly holidays. In govt. holidays I want to move around. I want to be a perfect employee, a perfect husband (wife), a perfect father (mother) and a writer who can be recognized as a machine.
Above all, rather than to be in any bracket or any gender biased species, I want to be a true machine.
(Tribute to Andy Warhole. Some Bengali language is left there!)
আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে
আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে।
অ্যাজআই এগজিস্ট ইন দ্য ইকনমি অফ র ক্যাপিটালিজম, আই ওয়ান্ট টু বি ইনভলব্ডঅ্যাট লিস্ট ১২ আওয়ারস ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল রিপ্রডাকশন। ওয়ান্ট টু সিস্নপ ফর৮ আওয়ারস। আফটার স্পেন্ডিং ২ আওয়ারস উইথ স্পাউস অ্যান্ড চিলড্রেন, আইওয়ান্ট টু রাইট টু আওয়ারস ডেইলি। আই ওয়ান্ট টু গো টু ফিস মার্কেট, সুপারষ্টোর অ্যান্ড শপিংমল ইন দ্য উইকলি হলিডেইস। ইন গর্ভমেন্ট হলিডেইস আইওয়ান্ট টু মুভ অ্যারাউন্ড। আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট ইমপ্লয়ি, পারফেক্ট হাজব্যান্ড (ওয়াইফ), পারফেক্ট ফাদার (মাদার) অ্যান্ড অ্যা রাইটারহু ক্যান বি রিকগনাইজড অ্যাজ অ্যা মেশিন।
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
এরপরেহইলো কি, শি ওয়েন্ট এওয়ে! আমি কই, খাড়াও না; কই যাও? কিন্তু দাঁড়াইলে ত সেইটা চলতে থাকাই বরং, যেহেতু তোমার চারপাশ চইলা যাচ্ছে। আর এই আলাপ আমারেকই নিয়া যাইতে পারবে? খুব বেশি হইলে ভ্যান গগের আঁকা ছবিগুলা পর্যন্তই ত!লেটস ট্রাই ইট এগেইন।
২.
এরপরেহইলো কি বেকেট আইলো, কইলো এই যে চইলা যাওয়া এবং না যাইতে পারা, এইটাঅ্যাবস্ট্রাক্ট কিসিমের একটা কিছুর সম্ভাবনা নিয়াই বিব্রত আছে। আবার ক্যামুনা আইসা বাগড়া বাধায় সার্ত্রের চেলা হয়া। উথাল-পাতাল ঢেউ বাতাসের, ভাটিয়ালি কান্দে বসুন্ধরায়, সি-ব্লকে। শীত শেষে বসন্ত দুইদিনের। এর লাইগাইএত গুণপনা হাজির করা! পাখি কেন ডাকে গানে, আরেকটা পাখিরে। ডেভিড লিঞ্চ কিজানে?
১ত আসলে কোন নাম্বার না, কিন্তু যখনই ২ আসে তখনই মনে হয় আগে যে ছিল তারেইআগে ডিফাইন করা দরকার। তাই ১ তোমারে নিলাম না। না নিলেও তুমি ত থাকোনা-থাকা হয়া। ফিরিলাম না অদ্য। যদি শেষে আবার না আসি, গোল এই পৃথিবীর তরে!
লেটস প্রে অ্যান্ড হোপ দ্যাট যখন আমরা মারা যাবো, একটু একটু বৃষ্টি হইতে পারবে, তখনো। আমাদের ভিজে যাওয়া শরীর আর কাঁদিবে না।
৩.
তাইলেআমরা মারা যাইতেছি, কি বলো? আলাপ করতে করতে, আমাদের শব্দগুলার নৈঃশব্দেরমধ্যে একটু একটু কইরা কি যে আপ্লুত এই ভাবনা! ধরো যে বন্যার পানি আইলো, কিন্তু ঘর ভাসলো না।
৪.
আমারেকি বাঁচাইবো তোমার প্রেম, উন্মাদনা? যা যা কিছু হইলো না, তা তা আর নাই। যাযা আমি ভাবলাম তা তা আর তাড়াইয়া নিয়া গেলো তোমার দুয়ারে। বসে থাকি অমসৃণমুহূর্তের ভিতর। তোমার বসন্ত-দিন, পথে ও ধূলায় ছিল পরিত্যক্ত। হ্যাঁচকাটানে হঠাৎ রইলা যে পড়ে। আমা হতে বহুদূরে, আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে!
আমি যে কেবলই ছবি
আমারে দেখো আমারে দেখো
বলছে ছবি বলছে ছবি
আমার চাইতে আমি’র ইমেজই ভালো!
রিমা
পাতার পর পাতা আমি লিখে যাবো দুঃখ, দুর্বল কাহিনিগুলা
পাতার পর পাতা আমি লিখে যাবো তোমার নাম, মকারি কইরা
এরই নাম বসন্ত, বুঝলা?
বাঘ ও হরিণ
– আমি বাঘ। আই উইল প্রেফার টু ইট ইউ টুনাইট।
– কোন জায়গা থিকা শুরু করতে চাও? আগে পিঠে একটা কামড় দাও!
– আই ওয়ান্ট টু ইট ইউর আইজ র্ফাস্ট। কি যে কোমল চোখ তোমার! জীবন্ত, মায়াবী কত যে প্রশ্ন তার!
– তারপর কি ঠোঁট? যেহেতু শীতকাল, কমলার স্মৃতির মতোন?
– তোমার চামড়ার গন্ধ নিতেছে যে বাতাস, আজো তার ত্রাস – শূন্য ও হতাশ্বাস।
– তোমার পায়ের শব্দ, আমি ত শুনি নাই। সারারাত টুপটাপ শিশির ঝরার মতো স্পর্শে, আমার ঘাড়ে তুমি ড্রাকুলার দাঁত বসাও।
– আজ রাত অর্ধ-মৃতের; স্তনের বোঁটায় শিহরণ। তারপর মাংস খাবো আরো চার দিন পর।
– বাঘ, তুমি আসো শরীরে আমার!
– হরিণ, তোমার ঘুমের ভিতর স্বপ্ন আমি। তোমার মাংস, আমারই করুণ শিকার কাহিনি। লেখবেন কবি, হরিণা আপনা মাংসে বৈরী।
– তুমিও কি তাই মৃতদেহের শরীরী কল্পনাই? আমার রক্তে মুছে নাও তোমার ঘাম।
– আমি বাঘ। আই প্রেফার টু হাইড মাই ওয়াডর্স থ্রু দ্য মিনিংস, টুনাইট।
স্বপ্নের ভিতর
অনেকদিনপর স্বপ্নে তোমারে দেখলাম। স্বপ্নে তুমি আরো সহজ, আরো সাধারণ। প্রাত্যহিকজীবনে আমরা কথা-বার্তা বলতেছি; আর তখনো আলাদা থাকি আমরা। তুমি আসছো আমাদেরবাড়ি। স্বপ্নের ভিতর তোমার নাকে নাই কোন নাকফুল।
কীকরবো? – এই নিয়া চিন্তিত তুমি; আমি ক্রমাগত অপশন বলছি, তুমি পলিটিকস এরকথা ভাবতে পারো কিংবা গ্রামে নারী-শিক্ষা প্রসারে প্রতিটা ইউনিয়নে একটাগার্লস-স্কুল করার সামাজিক আন্দোলন করো। কতকিছু করার মতো আছে আর তুমিভাবতেছ শুধু। অথচ আমি বুঝি নাই, এইটাই ত ভালো! কী কী করা যায়, এই বিষয়ে যদিসারাদিন ধইরা কথা বলতে পারতাম আমরা!
বাস্তবে যখন তোমারে দেখছিলাম তখন তুমি স্বপ্নের ভিতর কোঁকড়ানো। স্বপ্নে, তুমি যে কোন একটা বাস্তবতার মতো।
জাউরা বাতাস
আমার কবরের উপর দিয়া বাতাস উইড়া যায়;
‘ও বাতাস, এই সন্ধ্যাবেলায়, পড়িমড়ি কইরা
তুমি যাইতেছ কোথায়?’
‘মনা-মরার খাল পার হইয়া, মেথরপট্টিতে যাই।’
এট্টুক পর্যন্ত-ই হায়, বাতাসের আয়ু!
কবরে শুইয়া শুইয়া আমি ভাবি;
ভাবনার দিন নাই, রাত নাই
এই একটা বাতাস শুধু একটু কাঁপাইলো…
তোমার অপেক্ষার মতো দীর্ঘ, আরো দীর্ঘ এই লাইন…
আমিও লাইনে দাঁড়াইয়া গেছি
এখন ত আর লাইনে দাঁড়ায় না কেউ
মোবাইলেই সবকিছু হয়
ইন্টারনেটেও নাকি সম্ভব
তাইলে কেন এখনো লাইন এতো লম্বা হয়?
দালাল ধরতে পারলেও হইতো;
তখন সিগ্রেট খাইতাম, গাছের নিচে দাঁড়াইয়া;
দেখতাম, তোমার অপেক্ষার মতো দীর্ঘ, আরো দীর্ঘ এই লাইন…
আচ্ছা, যারা যায় তোমারে কাছে, তারা কেমন প্রতারক?
ছিনতাই করতে জানে, পিস্তল ছাড়া?
অথবা ইনোসেন্ট; কেবলি হাসে, কেবলি কবিতা লেখে, এই টাইপ…?
শরতের রোদে কোন ঘাম নাই
একটু একটু বাতাস
আসে, যায়
লাইনে দাঁড়াইয়া ‘আমি’ ঘুমাইয়া পড়তে চায়
স্বপ্নে, তোমার রিসিট আইসা ধরা দিক আমায়!
পথহাঁটা
আরো কত দ্রুত হাঁটতে চাও তুমি!
তোমার ডানার ভিতর গুটাইয়া যাচ্ছি আমি
দ্রুততার ভিতর কি কমতেছে পথ?
নাকি আরো অসহ্য, সেই গন্তব্য?
প্রতিদিনকার যে পাকুড় বট
সে ত পথ হাঁটে না
তার পাশ দিয়া হাঁইটা যায়
দ্রুততম ছায়ারা
তোমার স্যান্ডেল উড়ায় ধূলা
ধূলায় মলিন পথ,
পথের কিনার ঘেঁষে হাঁটতেছ তুমি
রিকশা যায়
যায় স্কুটার
আরো কত কী!
তোমার হাঁটার ভিতর দিন কে দিন গুটাইয়া যাচ্ছি আমি…
ক্যাসিওপিয়া
এইটা গ্রহেরই ফের, বুঝলা
একতলা দালানের ছাদে সন্ধ্যাবেলা
চিৎ হয়া শুইয়া দেখি
কোন সে তারা নিয়া আসলো তোমারে
আর আমারে, এই গ্রামে
বললো লিখতে, সিদ্ধ-ধানের গন্ধ
কুয়ারপাড়ে যুবতী বউয়ের কালোচুলে
জ্বীনের পায়ের চিহ্ন
অথবা একটা নৌকা, মসজিদের ঘাটে বাঁধা
মিনারে উঠলে দেখা যায়
ডিগচরে জমি নাই, খালি পানি আর পানি
উত্তরে বাদাঘাট
পশ্চিমে বিস্ময়কর দিনের শেষে
আবছা পথের ছায়া
জিজ্ঞাসিছে; তুমি কেন আইলা, এতদিন পরে?
কী আর বলবো আমি তারে!
এইসবকিছু আসলে গ্রহেরই ফের, বুঝলা
কুয়াকাটা
ওইপারে, আরো একা
অ্যান্টার্কটিকা;
দাঁড়াইয়া আছে…
সিলেট শহর
ক্রমাগত বৃষ্টি একটা ইল্যুশন, সিলেট শহরের মতোন…
কালিঘাট ত কাদার খাল, সুরমার এক্সটেনশন
বন্দরবাজারের রাস্তায়, ভর দুপুরবেলা, সব রিকশা উধাও
জিন্দাবাজারে বন্ধ কসমেটিকস ষ্টোর, সাইবার ক্যাফেগুলা
বারুদখানায় হাঁটুপানি আর উপশহর আবারো সেই পুরানা বিল…
এইরকম দিনের পর দিন, প্রায় সপ্তাহ ধইরা একইরকম যখন
তখন মনে হয়, এইটাই ত স্বাভাবিক
বৃষ্টির যে বাস্তবতা, সেইটাই আসল, সেইটাই পুরানা…
আর যা কিছু পুরাতন, তারাই ইল্যুশন
আবার রোদ ফিরা আসলে মনে হয়
এত যে ভীড়-বাট্টা, বৃষ্টির ভয়ে তারা ছিল তাইলে
বাস্তবতার ভিতর লুকাইয়া?
আসামের মেঘেরও লাগিয়া
উতলা হয়া ছিল কি আম্বরখানার মোড়
হাউজিং এসস্টের দালানগুলা?
বছরে দুই একবার অন্ততঃ তারা
আসে জিয়ারত করতে শাহজালালের মাজার
তারপর সারাদিন ঘুরাফিরা করে গলিতে গলিতে
ড্রেনের ভিতর গোপনে রাইখা যায় কয়েকটা কইমাছ…
যখন আসে, আসতেই থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে; যাইতে আর চায় না
ক্রমাগত বৃষ্টির ভিতর সিলেট শহর
আটকা পইড়া থাকে, দিন রাত
ধুসর কালার…
একটা সময় বিরক্তি চইলা আসে,
বলি, “অহন থামুইন, আর মাতুইন না যে!”
মেঘের ভ্রমন যখন শেষ হয়, তখন মনে হয়
সিলেট শহর না থাকলে হয়তো
বুঝাই যাইতো না
ইল্যুশন কারে কয়? কারে বলে বাস্তবতা?
আর বাংলাভাষাটা যে কী রকম!
আর্ন্তজাতিক হইতে চায়, লোকাল টোনগুলা বাদ দিয়া…
আবার অম্বিকাপুর
যারা যায়, তারা কারা?
তাদের যাওয়ার পিছে কত শত
ফুল-পাখি-গান আর ক-ক-কবিতা
কইতে কইতে চৈত্রের বাতাস ঘুরাইলো ঘাড়
তার খবর নিয়া আসছি অম্বিকাপুর
আবার
আবদুল মান্নান সৈয়দ
নিরানন্দ দুপুরে
হেসে উঠলো মাছ, আমারে দেখে
বাসের ভিতর কানকো বের করে হাওয়া খাচ্ছিলো শে…
অবাক কবিতা
বাপরে!কেমনে যে লেখ তুমি লতা-পাতা-গাছ-গাছালি নিয়া, কুত্তা-বিলাইও বাদ যায় না…এই যে তুমি লেখতে পারো – জোছনারাত, তোমার মনে কাঁপন জাগে না! ওই যে আমলকিরওই ডালে ডালে’র মতো – আমি ত বলার ভাষা খুঁইজা পাই না… যেনতুমিজাদুকর, লাঠিরে সাপ বানাইতে না পারো, সাপরে ত বলতে পারো লাঠি… যতক্ষণ নাছোবল দিতেছে তোমার পায়ে, তুমি কামড়রে বলতে পারো নীল রংয়ের উদভ্রান্তভালোবাসা; যা কিছু একজিস্ট করে না, তারা যেন আর নাই… খালি তোমার কল্পনা; হাতি উড়ে আকাশে, মাছেরাও মেলেছে ডানা… এমন এমন অবাক কবিতা, আমি কী আরলেখবো না (কবি সুকুমার রায়’রে শ্রদ্ধা জানাইয়া)?
কয়েকটা ধর্মীয় কবিতা
নেকাব
নেকাবের মানে হইলো দিত্ব
এর মধ্যেই বাঁধা পইড়া থাকে সমগ্ররূপ, কাহিনির আড়াল
কখনো পতিব্রতা মেয়ে আসে সামনে, দাঁড়াইয়া যে থাকে, সেইটাই নিশ্চিতি
পূর্ণতা দেখা গেলে মনে হইতো অসম্ভব, মনে হইতো এতো পরিচয়ের সবটাই মিথ্যা
স্বপ্নের মায়াবী দিন, তার জাগতিকতা
কোনদিন, যে ছিল, আজ তা-ই মনে আসে; অর্ধ-চাঁদ দেখা গেলো মেঘের ওপারে!
শবে বরাতের দিন
শবেবরাতের দিন। মাংস আর মসলার দোকানে ভীড়। চাইলের রুটি দিয়া বুটের হালুয়াখাওয়ার পর মনে হইলো, গরুর মাংসের ঝোল দিয়া একটু খাইতে পারলেও খারাপ লাগতোনা। এইরকম সামান্য অতৃপ্তির ভিতরই যেনো আটকাইয়া থাকে সমস্ত বাসনা। আমার শবেবরাতের নমাজ, প্রার্থনা!
চড়ুইয়ের সকালবেলা
প্রায়প্রতিদিন সকালবেলা ঘুম ভাঙে চড়ুইয়ের ডাকাডাকিতে। চ্রিম চ্রিম কইরাওরাকিবলে আমারে? বলে যে, ‘ওঠ, তুমি অফিসে যাইবা না।‘ আমি বলি, চুইট চুইট চ্রিমচ্রিম । ওরা বলে, তাইলে ঘুমাও আরেকটু। ঘুম আসে না আর। শুইয়া থাকি। একটু পরেউইঠা মোবাইলে ইমেইল দেখি। ল্যাপটপটা নিয়া গুঁতাগুঁতি করি। চড়ুই দুইজন তখনোকথা বলে আমার সাথে, পর্দার ফাঁক দিয়া। বলে, তুমি মিয়া ফাউল, ঘুম থিকাতুললাম তোমারে আমরা, আর এখন তুমি আমাদের সাথেই কথা কও না! ওদের কথার কোনউত্তর আমি করি না। শুনিও না ঠিকমতো। ভাবি যে, ওরা হয়তো নিজেদের সাথেই কথাবলে। ওরা হয়তো চইলাই যায়, একটা সময়। খেয়ালও করা হয় না। যখন দিন শুরু হয়, তখন মনে হয়, দুইজন চড়ুইয়ের সাথে কথা হইছিল, চড়ুইয়ের মতো ছোট্ট সকালবেলায়।
রোগের বর্ণনা ২
চড়ুইটাআইসা যখন ডাকতেছিল, তখনই ঘুমটা ভাঙলো। ভাবলাম যে বারান্দায় যাই, গিয়া কথাকই। কিন্তু উঠতে গিয়াই মনে হইলো, মাথার ডান দিকটা ডাইবা গেছে একটু, ডানদিকের কান, চোয়াল থিকা কাঁধটা পর্যন্ত, ডানদিকের পাঁজর, ডান হাত, কোমরেরপাশ থিকা শুরু কইরা ডান পা পর্যন্ত… শুইয়া শুইয়াই মনে হইলো, এখন আমি কিকইরা উঠবো?
কিছুদিনআগে পিঠের ডান দিকেই ব্যাথাটা ছিল, আর এখন সেইটা পুরাই গায়েব, কোন ফিলিংসইনাই, মানে একটা বালুর বস্তা হয়তো বা ভারী একটা বালিশের মতো যা আমার শরীরেরসাথে আটকাইয়া আছে…
চড়ুইটাডাকতেছে এখন ডানদিকের জানালা দিয়া… ওর বাসাটা আমি দেখছি… ওর কি শীতলাগতেছে? ওরে কি আমি ডাকবো বামহাতটা দিয়া, বলবো, দেখো আমার শরীর বইসা গেছেঅর্ধেকটা, কোনকিছু আর ফিল করতে পারতেছি না আমার ডানদিকটাতে; কিন্তু আমারচিন্তা অর্ধেক হয় নাই, তোমার সাথে বলতে পারবো আমি সব কথাই…
গরমের দিনের গান
তারা যেন নাই আর তার পাশে; সে জানি একলাই চইলা গেছে;
তারা আজ তারাদের ঘিরা থাকে, যাইতে যাইতে কই আর যায়,
একুশে ফেব্রুয়ারি’র গান গায় হাওয়া বয়, দুরান্তের শিশু
মনে হয় প্রাণ নাই, ওগো মন স্তব্ধ কালা জল, পুকুরের সাইডে গু,
বাংলা-ভাষা’য় মরি, লন্ডনে যারা যায় পলিথিন, কাগজের ঠোঙ্গা, বল-সাবানের গুড়া
অরাকি সিলটি না বাঙ্গালি, জিজ্ঞাসিছে কোনজন? কী কী যে দেখলা, দেখারভিতরদিয়া রচিছে ঈশ্বর?
তারাদের পথে গিয়া দেখা, গোত্তা খাইতে খাইতে যাওয়া
যারা যায়, তারা কেমন পশু? যে থাকে সে কেমন ফেরেশতা?
দ্বৈততাবোধের আড়ালে যারা ঝুলে থাকে তারা কেমন বেদনা, ওগো
বাঁশবনে হাওয়া বয়, শনশন শনশন – টেম্পোর সাউন্ডে মোর
নিরবতা বাড়ি খায়; বাড়ি’র চিপায় বইসা থাকা কুত্তার লেজ, ঝিমায়
ঝিমঝিম গরমের দিন, গো-হারা বাছুরের মতোন, এক ফোঁটা দুধেরো লাগিয়া
হাঁসফাঁস করতেছে যে পেটের বাচ্চা, তারে বলো, ‘খ্যামা দে রে মায়া
তোমার ছায়ার তলে আর ত বসিব না, আর ত দেখব না গো তোর মলিন নয়ন’
দেখাগেছিলো যে চাঁদ দূরের রেললাইনের উপর, তার ছায়া নিইভা যাওয়ার আগেই জাগতেছেগরমের-দিনের সূর্য, কি যে অস্বত্বি, কি যে অস্বত্বি, আহা, যেন তার শেষ নাই, অনন্ত-দিনের শুরু, আজি এই প্রভাতে, কলকল কলকল ছলছল ছলছল… ট্যাপের পানিরধারা… ঝরিতেছে মনে মোর, নাই কোন তাড়া, জাগিবার, ভাব-ভার বহিবার, খালি সয়াযাওয়া, সই; বৃন্দাবনে কে আর এমনদিনে হইতে চাইবে, রাধা!
ঘুম
“তুমি কি ঘুমাইতে চাই?” মেয়ে জিগায় আমারে।
‘ হ রে মা, এখন একটু ঘুমাই’ আমি কই; পাশ ফিরা শুইতে শুইতে।
“তাইলে সকালবেলা গল্পটা বলবা তুমি”
আমি কই, ‘সকাল হওয়ার আগেই যদি মারা যাইতে পারতাম আমি!’
মেয়ে বলে, “ভূমিকম্প হইলে তুমি মারা যাইয়ো…”
‘সেইটাইভালো’ আমি বলি আর ভাবি; যা যা ভয় বন্ধুরা দেখায় আমারে, রোড অ্যাকসিডেন্ট, ক্রসফায়ার কিংবা দুর্ভিক্ষের… এর মধ্যে ভূমিকম্পটাই ভালো… বীভৎস একটাঘুম, দীর্ঘ ধ্বংসস্তুপের নিচে…
টলমল দালানগুলা ভাইঙ্গা পড়তেছে, আমার শরীরের উপ্রে!
শনিবার দুপুর
তোমাদের শৈশব দেখি; অজস্র, বিপুল…
উইমেনস কলেজের সামনে কেউ কেউ, যারা এখনো আশাবাদী জীবন নিয়া, তারা যাচ্ছে হাঁটতে হাঁটতে…
গার্লস-স্কুলের সামনে পইড়া আছে, আরো কিছু আনমনা দিন
কী যে বিকট একটা ট্রাকে কইরা রওনা দিলো লাশ আজিমপুরের দিকে…
সন্ধ্যা
কাফকো’র বাতিগুলি জ্বলে উঠলো
হঠাৎ করেই নামলো রাত
কর্ণফুলীর পানিতে সোনালী-রূপালী মাছ…
অগ্রন্থিত কবিতা থেকে …
বৃষ্টির দিন
মৌন রাস্তা, কাদামাখা চোখ
তোমারে দেখে আসন্ন সকাল;
বৃষ্টির ভিতর তিল তিল ফাঁক,
ক্যারাম খেলছে মানুষ;
স্বল্প আলো,
দীর্ঘ, বিশাল ছায়া, নিভে যাচ্ছে…
আমাদের রাশোমন গল্প
‘রাশোমন’ গল্পের একটাই বিষয় আছে, তা হচ্ছে সংশয়ের তীর, যা সবাইরে বিদ্ধ করেছে – কাহিনিকার, চরিত্র ও পাঠককে। ঘটনার উৎপত্তিস্থলে আমরা কেউই ছিলাম না, তাইআমরা সবাই আবিষ্কার করতে চাইছি একটা কারণ আর এই ‘কারণ’ নির্মাণ লাভ করছেআমাদের পারস্পরিক সর্ম্পকের লুকানো গহ্বরগুলি পূরণের উদ্দেশ্যে, যদিও আমরানিজেদের পরিখা খনন করে চলেছি, পরোক্ষে। যেহেতু ছিল না, যেহেতু নাই, অথচনিশ্চিতভাবেই জানি, আমরা তৈরি হয়ে গেছি, পরস্পরের সান্নিধ্যেই উপলদ্ধি ঘটছেএর, তাই ধরে নিচ্ছি এইখানে জড়িত আমরাই। অব্যর্থ নিয়তি এই মানব ভাবনার।এইখানে মুক্তি প্রত্যাশী যে কেউই নিরবতা গলিতে হাতড়ে মরে, অবশেষে সুদূর কোনআলোকবিন্দুরে পরিত্রাণের মহিমা বলে ভাবার আগেই চেতনা ফিরে পারে, প্রলাপেমগ্ন হয়ে দেখবে পরস্পরের মরীচিকা।
যে কোন পথে, যে কোন দিকেই, উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না আর।
একটাইগতি, তা হলো অস্বীকার করা, গল্পের ভিতর থেকে বের হয়ে আসা, পুন:নির্মাণেরযে কোন প্রচেষ্টারে প্রতিহত করা, কিন্তু যে চরিত্রগুলি তৈরি হয়ে গেছে, তাদের আর মৃত্যু নাই, পুনারবৃত্তির চক্রে একটাই গল্প নির্মিত হতে থাকবে, সংশয়ের উল্টানো পৃথিবীতে।
আবেগেরতুরীয় পর্যায়ে যে ঘটনার জন্ম, অর্থাৎ যেখানে আমরা থরথর, কম্পিত নিজেদেরঅস্তিত্বের মূলে, সেইখানে আসে রাশোমন গল্প। সেইখানে বধির আত্মা, ‘আমাদেরবোধের উপর টেনে দেয়া যোগাযোগহীনতা’। তাই ব্যাখ্যামাত্রই অস্তিত্বেরসংশয়াকুল প্রকাশ, যে কোন পর্যায় থেকেই – প্রাথমিক অথবা গভীর।
অস্তিত্বেরগূঢ়তম অভ্যাস বেঁচে থাকা। তাই নিজেদের হাস্যকর যুক্তিগুলি উপস্থাপন।আশেপাশের সংশ্লিষ্টতাকে খুঁজে বের করে আনা। অন্যদিক থেকে বলতে গেলে, যেখানেঘটনা তার সংশ্লিষ্টতারে হারিয়ে ফেলছে, সেইখান থেকে এর বিস্তার। অস্তিত্বেরর্মমমূলে এর আঘাত। এরে বহন করে চলেছি আমরা তবুও অস্তিত্বের অনিবার্যতায়।বলতে চাইছি যে কথা অনুক্ত থেকে যাবে সবসময় অথবা এমনই স্পষ্ট যে তা দৃষ্টিএড়িয়ে যাবে বারবার। এর বিকাশ কখনোই স্তব্ধ হবে না, প্রতিটা মানব সর্ম্পকেরগভীরে লুকানো রাশোমন গল্প জেগে উঠতে পারে যে কোন সময়েই।
তাই বলে আবেগের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বসে নেই কেউ, চলে যাচ্ছে সবাই নিয়তির অমিমাংসিত পথে, নিজের।
মেঘ ও মেয়ে
মেঘ বলেছে, যাবো, যাবো…
মেঘ’রে বলতেছে মেয়ে
তুমি বরং নাইমাই আসো!
টেনশিত বর্ণমালা: ই
এতোটা ভিতরে তুমি না গেলেও পারতা
সামনে থিকা শুরু কইরা আবার পিছনের দিকে
যাইতে যাইতে মাঝখানে আটকা
তোমার আভিজাত্য নিয়া
আমি কেমোনে লিখিবো
নিম্নবর্গীয় ভাষা-ভঙ্গিমার কবিতা
ইহা একটি প্রবঞ্চণা, শালিকের
গান গাইতে না-পারার
তুমি আবার মাইন্ড কইরো না
রাত-জাগা তারা
পশ্চিমের দেয়ালে ঝুলে আছে ছিঁড়া পাতা
টেপ দিয়া লাগানো
দুলছে বাতাসে
অন্ধকারে
বৃষ্টির মতো শব্দ তার…
তেরছা
বৃষ্টি আর কদম ফুলের ঘ্রাণ
গোলের ভিতর গোল, গোল আর গোল…
অথবা লোমশ বিড়াল একটা হাসতেছে
কি যে হাসি, আর থামলোই না…
সকালবেলায় কইলো,
‘প্রেম যে কি অশ্লীল,
আপনি ত জানেন, আপা…’
বৃষ্টির দিনে
আকাশ থিকা পেত্নীরা সব লাফাইয়া পড়তেছে
মর্ত্যের ভূতদের আজকে ত ঈদ!
খাইবো তারা খিচুরি ও ইলিশ
কাঁথা-মুড়ি দিয়া শুনবো কি রবীন্দ্র-সঙ্গীত?
নাকি জীবনানন্দের কবিতা পড়তে পড়তে
হৃদয়ে জাগিবে বেদনা, গাঢ়…
হায় হোসেন! হায় হোসেন!
ঘুমাইয়াই ত যাবো, আমরা তবু…
মার্চ ৮, ২০১৩
কোকিল কেন ডাকে? কুউউ কুউউ করে?
গাছের পাতার ফাঁকে, এই ৮ই মার্চে?
জানালার পর্দা সরাইয়া তুমি কি দেখবা না তারে?
জুলিয়েট, তুমি কি আজকেও জিগাইবা না নিজেরে
চিনা হাজব্যান্ড কেন ভালো
অ-চিনা প্রেমিকের চাইতে?
কথা
তোমার কথা
আজকেও মনে হয় গান
কোলে শিশুটাহাসে
মাতৃদুগ্ধ প্রাণ
কাজল দেয়া চোখের ভিতর
ভাসছে তারা, হাসছে তারা
মিটিমিটি কথাগুলা
কথাগুলি তোমার আজো ত গান!
কুয়াকাটা ২
– আমার খুব একলা লাগতেছে, বুঝলা?
– আমি থাকতেও তোমার একলা লাগে? তুমি যে আমি এইজন্য কি তোমার একলা লাগে?
– এইটা কোন জায়গা? চারপাশে এতো বরফ, এতো শাদা। এইটা কি এর্ন্টারটিকা?
– না, এইটা কুয়াকাটা?
– কেন আসলাম এইখানে আমরা?
– আমাদের আর ভালোই লাগতেছিলো না। সবসময় যে কথাগুলি বলি তার আর কোন অর্থই হয়না। কম্পারেটিভ মিনিংয়ের ভিতর হারাইতে হারাইতে তাই আমরা চইলা আসছি এইখানে।
– হ্যাঁ, তাইতো।
– আমাদের শব্দ আর অর্থরে খুঁজতে আসছি আমরা।
– তাইলে সারাক্ষণ খালি কথা অথবা নিরবতা – ঢেউ গোনা।
– অথবা ঠোঁট। নিশ্বাস টেনে নেয়া এক ও অন্যের। দীর্ঘ বিরতির পর জেগে উঠা। আরপ্রশ্নগুলি তোমার, বারবার মনে করাইয়া দেয়, তুমি শুধু ট্রমা, আমি ছাড়া।
– তাইলে এইটাই কুয়াকাটা।
– তোমার এর্ন্টারটিকা।
সুনামগঞ্জের পথে
সপ্তসিন্ধুর পারে
তোমারে দেকিয়াছি ওরে
বসিয়াছিলে রাস্তার উপর
ঘুমাইতেছিলে অথবা ঘুমের স্বপ্নে
জাগিয়াছিলে
ওই পাহাড় ইন্ডিয়ার
ওই ঝর্ণা ইন্ডিয়ার
হাওরের জল
করে খলবল
এইপারে
তোমারে কি জানি?
শুয়ে আছো দীর্ঘকাল
ভেড়া ও বাছুরের স্বপ্নে
দুপুরবেলায়
হঠাৎ বাস আসে
বদরাগী ঘোড়ার মতোন
কাশতে কাশতে
এমন পেরেশানিও হয়
যদিও মানবে না লোকে;
লোকে বলে,
কি স্বপ্ন বানাইলায়রে হাছন
সুনামগঞ্জের পথে; পথে
বসাইলায়রে স্পিড-ব্রেকার
শব্দের ভিতরে!
হেমন্তে আমি তোমার গান গাই ২
লিখলেই কাক উঠে আসতেছে বাস্তবতায়,
একটা চড়ুই হঠাৎ করে উড়ে যায়,
বোকা শালিকটা ডেকে যাচ্ছে কতোক্ষণ থেকে –
শীত আসার আগে, হেমন্তে;
আমি ভার্চুয়াল, তাই রিয়ালিটি’র গান গাই।
জবাফুল
তুমি যাবা তোমার ঘরে
তোমার ছেলে তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে;
দিনান্তে জবাফুল কাঁপে, বাতাসে
যমুনার ঘাটে
আমি’রে ভাবনার স্মৃতি
তুমি’রে ধরে আছে
বেলা যায় যায়
যমুনার ঘাটে
তুমি’রে সাথে নিয়া
আমি যায়
জল আনিতে।
কুউউ ঝিক ঝিক এগারো সিন্দুর
ছোট ছোট প্রাণ
আপনারা খিলগাঁ রেলক্রসিংয়েও
কয়েকজন, বৃষ্টির রাতে
ট্রেন অ্যাকসিডেন্টে মারা যান
আমি কবিতা লিখবাম।
…………………………………………………………………………………………………
…………………………………………………………………………………………………
ইমরুল হাসান
জন্ম: সেপ্টেম্বর ২৫, ১৯৭৫
ভৈরববাজার, কিশোরগঞ্জ
পেশা: ব্যাংকার। বর্তমান বসবাস: ঢাকা, বাংলাদেশ।
…………………………………………………………………………………………………