সম্পাদকের দশা
সুকুমার রায়
সম্পাদকীয় –
একদা নিশীথে এক সম্পাদক গোবেচারা।
পোঁটলা পুঁটুলি বাঁধি হইলেন দেশছাড়া ।।
অনাহারী সম্পাদকী হাড়ভাঙ্গা খাটুনি সে।
জানে তাহা ভুক্তভোগী অপরে বুঝিবে কিসে?
লেখক পাঠক আদি সকলেরে দিয়া ফাঁকি।
বেচারি ভাবিল মনে- বিদেশে লুকায়ে থাকি।।
এদিকে ত ক্রমে ক্রমে বৎসরেক হল শেষ।
‘নোটিশ’ পড়িল কত ‘সম্পাদক নিরুদ্দেশ’।।
লেখক পাঠকদল রুষিয়া কহিল তবে।
জ্যান্ত হোক মৃত হোক ব্যাটারে ধরিতে হবে।।
বাহির হইল সবে শব্দ করি- ‘মার মার’।
-দৈবের লিখন, হায় খন্ডাইতে সাধ্য কার।।
একদা কেমনে জানি সম্পাদক মহাশয়।
পড়িলেন ধরা – আহা দুরদৃষ্ট অতিশয়।।
তারপরে কি ঘটিল কি করিল সম্পাদক।
সে সকল বিবরনে নাহি তত আবশ্যক।।
মোট কথা হতভাগ্য সম্পাদক অবশেষে।
বসিলেন আপনার প্রাচীন গদিতে এসে।।
(অর্থাৎ লেখকদল লাঠ্যৌষধি শাসনেতে।
বসায়েছে তার পুনঃ সম্পাদকী আসনেতে।)
ঘুচে গেছে বেচারীর ক্ষনিক সে শান্তি সুখ।
লেখকের তাড়া খেয়ে সদা তার শুস্কমুখ।।
দিস্তা দিস্তা পদ্য পদ্য দর্শন সাহিত্য পড়ে।
পুনরায় বেচারির নিত্যি নিত্যি মাথা ধরে।।
লোলচর্ম অস্থি সার জীর্ণ বেশ রুক্ষ্ণ শ।
মুহুর্ত সোয়াস্তি নাই -লাঞ্ছনার নাহি শেষ।।