সমর সেন এর ৫টি সেরা কবিতা

 


নিরালা

বর্তমানে মুক্তকচ্ছ, ভবিষ্যৎ হোঁচটে ভরা,  

মাঝে মাঝে মনে হয়,  

দুর্মুখ পৃথিবীকে পিছনে রেখে  

তোমাকে নিয়ে কোথাও স'রে পড়ি |  

নদীর উপরে যেখানে নীল আকাশ নামে  

গভীর স্নেহে,  

শেয়াল-সংকুল কোনো নির্জন গ্রামে  

কুঁড়েঘর বাঁধি;  

গোরুর দুধ, পোষা মুরগির ডিম, খেতের ধান;  

রাত্রে কান পেতে শোনা বাঁশবনে মশার গান;  

সেখানে দুপুরে শ্যাওলায় সবুজ পুকুরে  

গোরুর মতো করুণ চোখ  

বাংলার বধূ নামে;  

নিরালা কাল আপন মনে  

পুরোনো বিষণ্ণতা হাওয়ায় বোনে।  

  


তুমি যেখানেই যাও

তুমি যেখানেই যাও,  

কোনো চকিত মুহুর্তের নিঃশব্ দতায়  

হঠাৎ শুনতে পাবে  

মৃত্যুর গম্ভীর, অবিরাম পদক্ষেপ।  

  

আর, আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে?  

তুমি যেখানেই যাও  

আকাশের মহাশূণ্য হ'তে জুপিটারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি  

লেডার শুভ্র বুকে পড়বে।  

  



একটি বেকার প্রেমিক 

চোরাবাজারে দিনের পর দিন ঘুরি।  

সকালে কলতলায়  

ক্লান্ত গণিকারা কোলাহল করে,  

খিদিরপুর ডকে রাত্রে জাহাজের শব্ দ শুনি;  

মাঝে মাঝে ক্লান্ত ভাবে কী যেন ভাবি---  

হে প্রেমের দেবতা, ঘুম যে আসে না, সিগারেট টানি;  

আর শহরের রাস্তায় কখনো প্রাণপণে দেখি  

ফিরিঙ্গি মেয়ের উদ্ধত নরম বুক।  

আর মদির মধ্য রাত্রে মাঝে মাঝে বলি  

মৃত্যুহীন প্রেম থেকে মুক্তি দাও,  

পৃথিবীতে নতুন পৃথিবী আনো  

হানো ইস্পাতের মত উদ্যত দিন।  

কলতলায় ক্লান্ত কোলাহলে  

সকালে ঘুম ভাঙে  

আর সমস্তক্ষণ রক্তে জ্বলে  

বণিক-সভ্যতার শূণ্য মরুভূমি।  



একটি মেয়ে

আমাদের স্তিমিত চোখের সামনে  

আজ তোমার আবির্ভাব হ'লো  

স্বপ্নের মত চোখ, সুন্দর, শুভ্র বুক,  

রক্তিম ঠোঁট যেন শরীরের প্রথম প্রেম  

আর সমস্ত দেহে কামনার নির্ভিক আভাস  

আমাদের কলুসিত দেহে  

আমাদের দুর্বল, ভীরু অন্তরে।  

সে-উজ্জ্বল বাসনা যেন তীক্ষ্ণ প্রহার।  

  


আত্মসমালোচনা 

একদা আমরা ছিলাম বিমর্ষ বাঁদর;  

আজ আস্ফালনে মত্ত যেন বীর হনুমান।  

সেতুবন্ধের অনেক বাকি,  

ওপারে রাক্ষসের স্পর্ধা দিনেদিনে বাড়ে,  

প্রতিদিন দেখি উষ্টগ্র্রীব প্রতিনিধি তার  

এদেশকে নির্বিকারে বলাত্কার করে;  

কিন্তু ভাই, নিশ্চিত জানি  

শেষপর্যন্ত ইতিহাস নির্ঘাত্ আমাদের দিকে;  

সেই ঐশী ইতিহাসশক্তির মায়ায়  

লেজের জটিল জাল দেখি রাবনের গলায়।  

  





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন