মাসুদা রহমানের কবিতা

 

শার্লক হোমস, ওরা তিনজন


১.

বিস্কুটের গায়ের লোম পিরিচে পড়ে আছে


সিগারেট শেষাংশের পোড়ামুখ

মানুষের পরিচয় নেই


তিনটি কাচের গ্লাস, তলায় মদের দাগ

বলে দেয় ওরা ছিল তিনজন লোক


হয়তো ওদের সঙ্গে একটি কুকুর ছিল


চৌকাঠে টিনলেস নখের আঁচড়


২.

সমুদ্রপাড়ের বালিতে একজোড়া রবারের জুতো

সামনে নিয়ে বসে আছে একটি কুকুর


জুতোজোড়া কার? কুকুরটি জানে... কাউকে বলে না


দূর সমুদ্রের দিকে সে কেবল তাকিয়ে রয়েছে


কে তার মুনিব?

লোকটি কী স্নানে নেমে ডুবে গেছে সাগরের টানে!

কিংবা দূর বন্দর থেকে সমুদ্র জাহাজে করে আসছেন শার্লক হোমস 


কুকুরটি সব জানে, কাউকে বলে না


৩.

মিস মাটিনোর হাতঘড়ি; ডিম ভুলে সেদ্ধ করতে দেওয়া হল


কবিদের ‘যা-ইচ্ছে-তাই’ ভুলো-মন!


চুলোয় রান্না চাপিয়ে ডুবে গেছে স্যার আর্থার কোনাল ডয়েলে


দুপুর। বিকেল। সন্ধ্যা। 

আলো-নেভানো সোনাপাড়া 


বাড়ির সামনে জোড়া ঘোড়াটানা টমটমে 

অদ্ভুত আগুন্তক!


আগুন্তক! চুলোর উপরে বসানো টগবগে হাড়ি থেকে

সেদ্ধ হওয়া ঘড়িটির সমস্ত কলকব্জা 

পিরিচে খুলে নিয়ে  

টমেটো কেচ-আপ যোগে টপাটপ খেয়ে নিচ্ছে


৪.

শালবন। ওপারে সুচিত্রা সেনের বাড়ি


নির্জন বাংলো থেকে বাড়িটির চিলেকোঠা দেখা যায়, আবার যায় না


আকাশও অপবিত্র হয়!


আকাশ পবিত্র থাকলে প্রতিমাসে একবার বনের মাথায় পূর্ণচাঁদ ওঠে


সত্য আর মিথ্যে সহোদর দুইবোন এই নিয়ে ঝগড়া করলেও

বিশ্বাস করি, চাঁদ বনের ওপারে বাড়িটির মেয়ে 

সুচিত্রা সেন

চিলেকোঠা বেয়ে আকাশে উঠেছে


৫.

উঁচু দেয়াল ঘেরা বাড়ি। বাড়িটিতে কারা থাকে?


নরম আলো আসে বিকেলের। একটি বেড়াল দেয়ালের উপরে 

পেট বিছিয়ে শুয়ে থাকে

ব্যস্ত শহর কখনো এই দৃশ্যের কাছেও আসেনি


সন্ধ্যার আলো জ্বলে উঠছে সড়কে। একটি পাখি নিঃশব্দে উড়ে গেলো 

বাড়িটির উঠোনের গাছে

মনে হল, নিঃশব্দতা জমা আছে দেয়ালের ওপারে


তালা আটা দরজাটি কেউ কী খুলেছে কখনো?


সদর ফটকে আজ সারাদিন দাঁড়িয়ে রয়েছেন শ্রীযুক্ত ওয়াডসন

(প্রকাশিত)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন