মধ্যবিত্ত
সজল আহমেদ
১
পাশাপাশি দুটো খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। একটা ঘরের আরেকটি বাবা। দোদুল্যমান গাছের মতোই তিনি তাঁর সমস্ত ডালপালা মেলে দেন আর তার শরীরের পাতার ফাঁকে আমদের কয়েকটি নবীন পাখি নিয়ে মা বাসা বাঁধেন। আমরা অসহায়— ক্ষুধায় সবসময় হা করে থাকা অবুঝ।
নতমুখে স্বীকার করেন বাবা, আমাদের ঠিকমতো পেট ভরাতে তাঁর ব্যর্থতা। আর এগিয়ে চলেন পিঠে নিয়ে মাসিক সাংসারিক কুঁজ।
২
বাবা কম কথা বলেন, সবাইকে শাসন করেন। আমাকে চুমু খান, ভাইয়াকে ধমকান— বই পড়ান, গোসল করান আবার অফিসে যান। মা সারাদিন কেবল ঘরের ভাঙা চেয়ারের পায়া ঠিক করতে করতে বলেন, এই সংসারে এসে তিনি কোনদিন জীবনে সুখ পাননাই। সেকি ভর্ৎসনা!
বাবা মানুষটাও তাই; তিনি আমার মায়ের টিনেজ বয়সের সমস্ত সুখকে ছিনতাই করে বিয়ের পরদিনই বেচে দিয়েছিলেন৷ বিয়ের পরে মায়ের প্রতিদিন জমানো একটু সুখ প্রতিদিন'ই বেচে বাবা অফিসে যান আর ফেরার সময় বাইরে থেকে আমাদের জন্য ক্ষাণিকটা সুখ কিনে নিয়ে আসেন। মায়ের জন্য তাকে কখনো কিছু আনতে দেখিনাই। এ নিয়ে মায়ের হাজারো অভিযোগ!
৩
প্রতিদিন অফিস শেষে বাবা বাড়ি ফিরে আসেন আর মায়ের দিকে তাকিয়ে কখনো হাসেন কখনো বেজার হন। তাদের মধ্যে কোনকোন দিন চলে সাংসারিক গানিতিক বিবাদ। বিবাদের মধ্যেই মা শিশুর মতো করে ডুকরে কেঁদে ওঠেন আর বাবা চুপ করে একদম নুইয়ে যান। মা; বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে তার সমস্ত অভিযোগ গলাধঃকরণ করে নেন৷ পরেরদিন সকাল থেকে আমাদের ঘরে কোন খাবার হয় না । সকাল সকাল বাবা আবার অফিসে যান, ফেরার সময় আমাদের জন্য শুকনো সুখ নিয়ে আসেন। ঠিক যতটুকু দরকার৷ এমন একটু একটু — কচ্ছপের মতো ফেলে পা
ক্ষুধার্ত কুকুরের মতো বাবা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সংসার।
আবৃত্তিঃ
অডিওঃ
Listen to মধ্যবিত্ত | Middleclass | সজল আহমেদ এর কবিতা by Sajal Ahmed on #SoundCloud
.