কবি ফেরদৌস নাহারের প্রথম কবিতার বই "ছিঁড়ে যাই বিংশতি বন্ধন"
কিছু কথা
কবি ফেরদৌস নাহার, যার কবিতা আগুনের ফুলকি, চেপে রাখার জো নেই। শিমুলকাঠই হোক আর বকুলকাঠই হোক, যখন জ্বলে তখন আগুনের চেহারাটা একই। শেষের কবিতায় রবীঠাকুর এমনটাই বলেছিলেন। ভেতরে আগুন থাকলে একজন ঢাকার বাইরে থেকেও দেশের প্রধান সারির কবিদের কাতারে দাড়াতে পারেন। আবু সয়ীদ আইয়ুব তাঁর আধুনিক বাংলা কবিতার ভূমিকায় অনেক আগেই আধুনিক কবিতার সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে যে কালের দিক থেকে মহাযুদ্ধ-পরবর্তী এবং ভাবের দিক থেকে রবীন্দ্রপ্রভাবমুক্ত, অন্তত মুক্তিপ্রয়াসী, কাব্যকেই আমরা আধুনিক কাব্য বলে গণ্য করেছি। সেই অর্থে ফেরদৌস নাহারে কবিতা আধুনিক মুক্তিপ্রয়াসী কবিতা। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালের বইমেলায়। বইটি মেলাতেই বিক্রি হয়েছিল ৩০০টির অধিক। যা এখন কল্পনাও করা যায় না। অন্তত কবিতার বইয়ের ক্ষেত্রে। বইয়ের ডিমাই সাইজের পোস্টার বাংলা একাডেমি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে সেঁটে দেয়া হয়েছিল। সম্ভবত এটাই প্রথম বাংলাদেশের বাংলা কবিতার পোস্টার। বেশ কটাক্ষ-গুঞ্জন হলেও, পরের বছর আরও অনেকে পোস্টার করার পথে হেঁটেছেন। বইটি কিনেছিলেন অনেক তরুণ ও প্রতিষ্ঠিত কবি, লেখক ও শিল্পী। কবি শামসুর রাহমান বইটির প্রশংসা করেছিলেন, বলেছিলেন- প্রথম বই হিসাবে অনেক ভালো একটি বই, তুমি একদিন প্রকৃত কবি হবে। তোমার সাহস ও কবিতার প্রতি এই আন্তরিকতা যেন চিরদিন বেঁচে থাকে। কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বইটি কিনে বলেছিলেন, নাও কিছু লিখে দাও। তারপর লেখা শেষ হলে পরম মমতায় মাথায় একটা চাটি দিয়েছিলেন। একদিন বিকেলে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ মেলায় এসে তরুণদের অনেকগুলো বই কিনলেন। তখনও তিনি মেলা প্রঙ্গণে একা একা ঘুরে বেড়াতে পারেন। কবি ফেরদৌস নাহারের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বইটি উলটে-পালটে দেখে এগিয়ে দিলেন- 'সই করে দিন'। একুশ উপলক্ষে বইয়ের দামও ২১টাকা রাখা হয়েছিল।
জীবনের সরলতা, আবেগের নিষ্পেষণ, দুঃখের মুকুরে সহজতার আনন্দ-ছিঁড়ে যাই বিংশতি বন্ধন-এ সেই ভাষার অন্বেষণ করা হয়েছে। ক্রোধের চিরন্তন আবহাওয়াকে বদলে দিয়ে একটা জেদি-একরোখা অথচ চাপা অভিমানকে মেলে ধরা হয়েছে। উপলব্ধির বিশ্বস্ততায় সেইসব অনুভূতি গাঢ়তর অহংবোধে উদ্ভাসিত। বিংশ শতাব্দীর তট-সন্নিকটে পৌঁছে অতিক্রান্ত সময়ের দিনপঞ্জি যেন মর্মখোদিত উচ্চারণে প্রকাশিত। প্রবহমান সময়ের উন্মুখ অস্থিরচক্র যৌবনের উপলব্ধিতে উৎসারিত।