হাসান রোবায়েতের কবিতা


সংসার


*
তোমাকে পাওয়ার পরে
কেমন হবে সংসার

আমি বকরি চরাতে পারি—

মাঠের মধ্যের জবাগাছটাকে
বলতে পারি

ফুলে ফুটো, ছলনা করো না—!


হিস্ট্রি অব ম্যাডনেস 


*
একেক জন পাগলের থাকে একেক রকম চরিত্র, যেমন পৃথিবীতে রাজাদের ইতিহাস আছে, আছে যুদ্ধের ইতিহাস তেমন পাগলদের জন্য কি কোনো ইতিহাস আছে? নিদেন পক্ষে পাগলকোষ? এই যেমন আমার মায়ের আপন চাচা ঝরু মণ্ডল, ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে কামারজানির উপর পাগল হয়ে যান তিনি—

একদিন, সূর্যাস্তের পাশে দেখা গেল ঝরু মণ্ডল চুপচাপ বসে আছেন— হাতে পায়ে শেকল—তখন কী ভাবছিলেন তিনি? তার আত্মার চারপাশে ম ম করে প্রজাপতি উড়ছিল হয়তো—বৃষ্টির ফোঁটার দিকে তাকিয়ে ঝরু মণ্ডল বলছিলেন, ‘প্রজাপতিরা পাখা নাড়ালেই ঝমঝম করে বৃষ্টি আসে পৃথিবীতে আর একজন সালেহা বেগম পায়ে নূপুর পরে হেঁটে যায় ঠান্ডা বাতাসের দিকে—’ 

আমার মা আমাকে সাবধান করতেন, ‘ প্রত্যেক কবিই আসলে ঝরু মণ্ডল যারা বৃষ্টির শব্দকেও মনে করে সালেহা বেগম’—


 হঠাৎ ছোঁয়ার পরে মনে হলো
তোমার তো আছে স্বামী, সংসার
আমি সামান্য কেরানির চিঠি
হাতে হাতে বিলি হই বহুবার—

দুপুরের পাশে নীল সাইকেল
ঝাঁকে ঝাঁকে থেমে আছে কত সালে! 
‘যদি কেউ দেখে ফেলে’, কাঁদতেছ
টের পাও কথোপকথনকালে—

তোমার শাঁখার ঘ্রাণে ভাঙে রাত
হরিণেরা নৈঃশব্দ্যে নামে 
এ হাওয়া কাদের ছিল আগে আর 
বেজেছে সরোদ বন-বিশ্রামে—








ক্লান্তি 


নামাজ শেষ হয়ে গেলেই কেমন ছটফট লাগে আমার—যেন অরণ্যের ভ্যাঁপসা হাওয়ার থেকে দ্রুত পালিয়ে যাই কোনো নদীঝরা প্রান্তরের দিকে—সমস্ত  সুরাই তখন অর্থাতীতভাবে হারিয়ে যায়—আমার শৈশব কৈশর তো এমন ছিল না—আব্বার আঙুল ধরে মসজিদে যেতে যেতে মনে হতো একটা সবুজ বসন্তের দিকে যাচ্ছি, মসজিদের ঠান্ডা মেঝে আর মুয়াজ্জিনের আজানকে মনে হতো সরোবরের মন্দ্র ঢেউ—অথচ এখন নামাজের পরপরই মনে হয় অহেতুক ক্লান্ত আমি— 

তবে কি আমার আল্লা ছেড়ে গেছেন আমাকে আর অন্তরে মেরে দিয়েছেন সুরা বাকারায় বর্ণিত সেই প্রকা- মোহর— 

আল্লা গো! এই কঠিন পানিহীন প্রান্তরে আমারে ছেড়ে যাইও না! আমি তো উট নই হৃদয়ে সরোবর নিয়ে ঘুরে বেড়াবো পরিণামভয়ে—

 


পূরবী.


*
এখানে নদীর নাম জলমিতা
এখানে আকাশ নীল বহুদিন
এখানে ভেড়ারা চরে সারা গ্রাম
এখানে তোমার মুখ কী মলিন! 
তুমি কি সজনা ডালে পাখিটার
বাঁকা সে ঠোঁটের পাশে নদীতীর
জানি না কোথায় তারা চলে যায়
শূন্য চিরটাকাল মন্দির—
তুমি কি আসবে বঁধু, আমাদের
আত্মজীবনী ভরা সন্ধ্যায় 
হাওয়াই মিঠাই যেন এ সময়  
ধাতব শীতের মনোবেদনায়—
এখানে তোমার দিন সহজিয়া
এখানে মেঘের নাম মালহার
এখানে ভেড়ারা চরে দিনমান
হাওয়ায় পূরবী কাঁপে সন্ধ্যার







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন