কিয়াস আহমেদ এর কবিতা


রোযা
.
আমার বাবার কোনো ছেলে নেই!
বিষয়টা বাবা মেনে নিতে পারছে না,
একদিন সে আমাদের সবাইকে ডেকে এক করলো।
তারপর গুনে দেখলো উনিশ সন্তানের মধ্যে আমরা তিন ভাই,
বাবা আমাদের তিন ভাইকে সংসারের সব দায়দায়িত্ব দিয়ে
মাঝরাতে মায়ের বুকে মাথা রেখে চলে গেলেন,
সকালে আমরা তিন ভাই কফিনের তিন কোণা ধরে হাঁটছি
আর ভাবছি আর একটা কোণা কে ধরে আছে?
কিন্তু কেউ এদিকওদিক তাকাচ্ছি না,
কবরস্থানে পৌঁছে আমরা দেখতে পেলাম
আর একটা কোণা ঝুলে ছিলো সারা পথ!
আমরা তিন ভাই বিষয়টা মেনে নিতে পারছিলাম না,
কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে কবরে নামিয়ে চলে এলাম,
বাবাকে কবরে নামিয়ে আসার বেশ কয়েকবছর পর
একদিন রমজানের চাঁদ দেখে আমরা লিস্ট করছিলাম
সেহরিও ইফতারিতে কি কি খাওয়া যাবে?
এমন সময় ধীর কন্ঠে শুনতে পেলাম
মা উঠোনের এককোণে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখে বলছেন
আমার একটা ছেলে থাকলে হয়তো
ভাতের অভাবে আমাকে সারা বছর রোযা রাখতে হতো না।




এক আল্লাহতে সিজদা।
.
কিসমিস ভিজানো বোতল থেকে
ঢকঢক করে গিলে ফেলি পানি
তারপর কিসমিস গুলো খেতে খেতে
আকাশের দিকে তাকাই,
আমি দেখি কোটি কোটি তারার আলো
নিচের দিকে নত হয়ে আছে
আমি দেখি সবচেয়ে লম্বা গাছটাও
ডালপালা নিচের দিকে ছড়িয়ে দিয়েছে,
আমি দেখি ফুল গুলোও পাপড়ি ছড়িয়ে
তারপর নিচের দিকে নেমে এসেছে,
আমি দেখি ফল গুলোও বোঁটার সাথে ঝুলে
নিচের দিকে পড়ে আছে,
আমি দেখি খয়েরি পাতাটাও ঝরে
নিচের দিকে চলে আসে,
প্রকৃতির এই নিচু হওয়া দেখে
আমিও নিচু হতে শিখি,
নিচু হতে হতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি,
যেভাবে সমস্ত সৃষ্টিকুল এক আল্লাতে সিজদায় আছে।



নিখোঁজ
.
ভাবতে -ভাবতে মরে গেলে
শিয়াল কী খুশি হবে?
মাটিতে তাদের এত কী কাজ?
দুনিয়ায় এত খাবার থাকতে
ডাক নামে আমরাই কেনো প্রথম বলি
হরিণের মাংস আমার প্রিয়?
কেনো আপুর পায়ে আলতা দেখে
পাড়ার মাস্তান গুলো এত হাসে?
শেষরাতে মাকে প্রশ্ন করতে গিয়ে
থেমে যায় মেয়ে,
ভোরবেলা শোনে
পাশের ঘর থেকে আপু নিখোঁজ!
এমন কথা ফুলমালা কখনও শোনে নি
বড় আপু নিখোঁজ হলে
গ্রামের লোক গুলোর চোখ কোথায় কোথায় উঠে যায়।





নাম
.
এক নামে এত মানুষ থাকে-বিষয়টা বিরক্তিকর,
খোদা আমার নাম ধরে ডাক দিলো আর
অসংখ্য মানুষ উঠে দাঁড়ালো,
কিন্তু গম্ভীর কন্ঠে খোদা যখন বললো
তোমার জাহান্নাম!
তখন সবাই বসে পড়লো
পুরো ময়দানে একমাত্র আমিই দাঁড়িয়ে রইলাম
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে
তাই আমি আর চালাকি করে বসে পড়তে পারলাম না
মরবার ভানকরে সোজা শুয়ে পড়লাম।
****
তুলনা।
কবরে কঠিন আজাবের সময় মনে হলো
আমি আবার মরে যাবো!
কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত আজাব হওয়ার পরও
আমার মৃত্যু হলো না!
আমি এই আজাব তোমার অবহেলার সাথে তুলনা করলাম,
***
নামাজ বেহেস্তের চাবি।
জীবনে দুই একটি ভালো কাজ করে
শেষপর্যন্ত অনেক কষ্টে আমি জান্নাত পেয়ে গেছি,
কিন্তু জান্নাতের চাবি না থাকায় ভিতরে ঢুকতে পারছি না
ভিতরে বসে আমার জন্য কাঁদছে আমার বাহাত্তরটা হুর।
****
বেহেস্ত।
বেহেস্ত এত বড় যে
বেহেস্তের একটি গাছের পাতার উপর দাঁড়িয়ে
ফেরেশতাকে বলছিলাম
হে আল্লাহ্র ফেরেশতা
আমাকে বলো বেহেস্ত কোথায়?
ফেরেশতা বললো
বেহেস্ত আপনার পায়ের নিচে।






 নাম
.
এক নামে এত মানুষ থাকে-বিষয়টা বিরক্তিকর,
খোদা আমার নাম ধরে ডাক দিলো আর
অসংখ্য মানুষ উঠে দাঁড়ালো,
কিন্তু গম্ভীর কন্ঠে খোদা যখন বললো
তোমার জাহান্নাম!
তখন সবাই বসে পড়লো
পুরো ময়দানে একমাত্র আমিই দাঁড়িয়ে রইলাম
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে
তাই আমি আর চালাকি করে বসে পড়তে পারলাম না
মরবার ভানকরে সোজা শুয়ে পড়লাম।






তুলনা
.
কবরে কঠিন আজাবের সময় মনে হলো
আমি আবার মরে যাবো!
কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত আজাব হওয়ার পরও
আমার মৃত্যু হলো না!
আমি এই আজাব তোমার অবহেলার সাথে তুলনা করলাম।





বিরহ
.
তখনও আমার জাহান্নাম শেষ হয়নি
আরও বেশকিছু সাজা বাকি আছে ,
তারমধ্যে ঘনো-ঘনো দেখানো হচ্ছে
শেষবার আমি যে ব্রোথেলে গিয়ে ছিলাম
তখন আমার খুব জ্বর ছিলো
হাত পা একদমই উঠছিলো না
আমিই তাদের টেনে-টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম,
এই দৃশ্য দেখিয়ে আমার সাজা আরও বাড়ানো হচ্ছিলো!
বিভিন্নরকম সেইসব সাজা
সাজার আবার আলাদা আলাদা স্তর
আলাদা আলাদা নিয়ম,
আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো
আমি খুব কাঁদছিলাম
আমার কষ্ট দেখে আমার সাথে থাকা জাহান্নামিরাও কাঁদছিলো,
হঠাৎ খোদা এসে কেনো যেনো আমাকে মাফ করে দিলেন!
জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আমার খুব আনন্দ হচ্ছিলো,
আমি অনেক দামি পোশাক পরে একটা চেয়ারে বসে ছিলাম,
তারপর ফেরেশতাকে ডেকে তোমার কথা জানালাম,
বললাম খোদাকে বলো তাকে ছাড়া আমি জান্নাতে যাবো না,
ফেরেশতা বললো
সেতো অনেক আগেই একজন হাবাগোবা লোক'কে নিয়ে জান্নাতে চলে গেছে।






আলিফ লাম মিম
.
আমি মসজিদে বসে কবিতা বাঁধি ,
কবিতা বাঁধতে বাঁধতে মসজিদ বেঁধে ফেলি বুকের সাথে,
ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে খুতবা পড়ে ,
নামাজ পড়ে , মুক্তাকিরা আসে ,
নামাজ পড়ে, খুতবা পড়া শোনে ,
কিন্তু আমি নামাজ পড়ি না ,
আমি খুতবা পড়া শুনি না ,
আমি ডুবে থাকি কবিতায় ।
ধীরে ধীরে মসজিদে মানুষের ভিড় বেড়ে যায় ,
মানুষের পায়ের শব্দ বেড়ে যায় ,
মানুষের হাঁটুর শব্দ বেড়ে যায় ,
মানুষের সিজদার শব্দ বেড়ে যায় ।
আমার বুক কাঁপে দুরুদুরু কাঁপে ,
আমার কবিতা লেখা হয় না ।
আমি বেরিয়ে আসি মসজিদ থেকে ,
আমি রাস্তায় হাঁটি, ধীরে ধীরে হাঁটি ,
আমি হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা বেঁধে ফেলি বুকের সাথে ,
আমার বুকের উপর দিয়ে গাড়ি যায় ,
যেতে যেতে আমাকে আঘাত করে ,
আমার মৃত্যু হয় ।
আমাকে শুয়ে দেওয়া হয় কবরে ।
সাথে দেওয়া হয় প্রিয় হলুদ ফুল টিউলিপ ।
কবরের মধ্যে ফেরেস্তা আসে
আমাকে আবার জীবিত করে ,
আমি আবার ডুবে যাই কবিতায় ,
ফেরেস্তা আমাকে প্রশ্ন করে
কিন্তু আমি উত্তর দেই না ,
আমি উত্তর দিতে পারিনা ।
ফেরেস্তা আমাকে আঘাত করে ।
আমি আঘাত পেয়ে কাঁপতে থাকি
আমার বুক কাঁপতে থাকে ,
দরুদরু , দুরুদুরু কাঁপতে থাকে ।
আমার কবিতা লেখা হয় না ।
ফেরেস্তা চিৎকার করে জানায়-
এখানে লেখা হারাম।
এই কবিতার মতো আর একটি কবিতা তুমি লিখতে পারবে না ।
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নাই।
পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,
যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে
এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে।
আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে
এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর
যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে
এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে।
আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।
তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত,
আর তারাই যথার্থ সফলকাম।
তারপর থেকে যায় ফেরেস্তা ।
আমাকে আবার প্রশ্ন করে ।
তুমিই বলো, তুমি কি পাবে ?
জান্নাত? নাকি জাহান্নাম ?
জান্নাত আর জাহান্নামের কথা শুনে
আমার বুক কাঁপে , দুরুদরু কাঁপে ।
আমার কবিতা লেখা হয় না।
আমি ভয়ে ভয়ে বলি ।
আলিফ লাম মীম ।



দৃষ্টি
.
মমিন বান্দারা ঠিকই বলেছিলেন শালিনতার ব্যাপারে
আপনার হাতা কাটা পোশাকটা আমাকে শিহরিত করে
আমি বিঘোর হয়ে পড়ি আপনার ডানা দেখে
আপনার লম্বা চুলে আমি পাগল হয়ে যাই
এবং আপনার চুলের বাদামি রঙে,
আপনার পায়ের ঘোরালিটা যখন উঁচু হয়ে থাকে
হিল জুতোর কৌশলে আর আপনি সোজা রাস্তায়
কেমন যেনো বাঁকা বাঁকা হাঁটতে থাকেন
আপনার হাঁটুর মানচিত্রটা আমার বুকে চিনচিনে একটা
আকাশ মেলে ধরে যার এক দৃষ্টিতে ৬০ লক্ষ তারা দেখতে পাই,
আপনার কপালের কালো টিপ ঠোঁটের লাল লিপিস্টিক
আর কানের পাশ ঘেষে নেমে আসা ঘাম
সমস্ত কিছু আমাকে উগ্রবাদী রোমান্স কোরে তোলে!
শুনেছি মুমিন বান্দরা গায়েব জানে না
কিন্তু শালিনতার ব্যাপারে তারা যা যা বলে
তার সবকিছু আপনাকে দেখার পর আমার মনে পড়ে
শুধু একটি কথাই আমার মনে পড়ে না যে
মুমিনদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন