বিনয় মজুমদারের সেরা ২১টি কবিতা সংগ্রহ

 


আর যদি নাই আসো

আর যদি নাই আসো,ফুটন্ত জলের নভোচারী  

 বাষ্পের সহিত যদি বাতাসের মতো না-ই মেশো,  

 সেও এক অভিজ্ঞতা; অগণন কুসুমের দেশে  

 নীল বা নীলাভবর্ণ গোলাপের অভাবের মতো  

 তোমার অভাব বুঝি; কে জানে হয়তো অবশেষে  

 বিগলিত হতে পারো; আশ্চর্য দর্শনবহু আছে  

 নিজের চুলের মৃদু ঘ্রাণের মতন তোমাকেও  

 হয়তো পাইনা আমি, পূর্ণিমার তিথিতেও দেখি  

 অস্ফুট লজ্জায় ম্লান ক্ষীণ চন্দ্রকলা উঠে থাকে,  

 গ্রহণ হবার ফলে, এরূপ দর্শন বহু আছে। 

  

অনেক কিছুই তবু

অনেক কিছুই তবু বিশুদ্ধ গণিত শাস্ত্র নয়  

 লিখিত বিশ্লিষ্ট রূপ গণিতের অআকখময়  

 হয় না, সে সব ক্ষেত্রে উপযুক্ত গণিতসূত্রের  

 নির্যাস দর্শনটুকু প্রয়োগ ক’রেই বিশ্লেষণ  

 করা একমাত্র পথ, গণিতশাস্ত্রীয় দর্শনের  

 বহির্ভূত অতিরিক্ত দর্শন সম্ভবপর নয়।  

 সেহেতু ঈশ্বরী, দ্যাখো গণিতের ইউনিট  

 পাউন্ড সেকেন্ড ফুট থেমে থাকে চুপে,  

 এদের নিয়মাবদ্ধ সততা ও অসততা মনস্তত্ত্বে বর্তমান ইউনিট রূপে  

 আলোকিত ক’রে রাখে বিশ্বের ঘটনাবলী, চিন্তনীয় বিষয়গুলিকে  

 সিরিজের কতিপয় টার্মের চরিত্র ফুটে চরিত্র নির্দিষ্ট করে  

 আগামীর দিকে। 

  



আমাকে ও মনে রখো 

পৃথিবী,সূর্য ও চাঁদ এরা জ্যোতিস্ক এবং  

 আকাশের তারাদের কাছে চলে যাবো ।  

 আমাকে ও মনে রেখো পৃথিবীর লোক  

 আমি খুব বেশী দেশে থাকি নি কখনো ।  

 আসলে তিনটি মাত্র দেশে আমি থেকেছি,এখন  

 আমি থাকি বঙ্গদেশে,আমাকেও মনে রেখো বঙ্গদেশ তুমি । 

  



শিমুল গাছের নিচে

শিমুল গাছের নিচে গম ক্ষেত দেখলাম আজ।  

 পুরো গম ক্ষেতটিই বাদামি রঙের, তাতে অন্য রঙ নেই  

 দেখে দেখে মনে হয় ক্ষেতে গম পেকে গেছে প্রায়।  

 আমিও পথের মাঝে থেমে প’ড়ে গম গাছগুলি দেখলাম।  

 বুঝলাম ইউরোপে এবং আমেরিকায় শস্যক্ষেতগুলি এ প্রকার।  

 আমাদের বাঙলায় ধান ক্ষেত সমূহের ধরন যেমন  

 গমক্ষেত সমূহের ধরন তেমন নয়, স্পষ্টতই বিদেশি ধরন।  

 এ যেন ইউরোপের কিয়দংশ দেখছি এখানে  

 শিমুল গাছের নিচে; এইসব ধান গম মানুষের মেধার ফসল  

 ধান গম খেয়ে খেয়ে মানুষের হৃৎপিন্ড সচল থাকে এ কথা সকলেই জানি। 

  




ভালোবাসা দিতে পারি

ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?  

 লীলাময়ী করপুটে তোমাদের সবই ঝ’রে যায় –  

 হাসি, জ্যোৎস্না, ব্যথা, স্মৃতি, অবশিষ্ট কিছুই থাকে না।  

 এ আমার অভিজ্ঞতা। পারাবতগুলি জ্যোৎস্নায়  

 কখনো ওড়ে না; তবু ভালোবাসা দিতে পারি।  

 শাশ্বত, সহজতম এই দান — শুধু অঙ্কুরের  

 উদগমে বাধা না দেওয়া, নিষ্পেষিত অনালোকে রেখে  

 ফ্যাকাশে হলুদবর্ণ না ক’রে শ্যামল হতে দেওয়া।  

 এতই সহজ, তবু বেদনায় নিজ হাতে রাখি  

 মৃত্যুর প্রস্তর, যাতে কাউকে না ভালোবেসে ফেলে ফেলি।  

 গ্রহণে সক্ষম নও। পারাবত, বৃক্ষচুড়া থেকে  

 পতন হলেও তুমি আঘাত পাও না, উড়ে যাবে।  

 প্রাচীন চিত্রের মতো চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি  

 চ’লে যাবে; ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় স্তব্ধ হব আমি। 

  



বর্ষাকালে 

বর্ষাকালে আমাদের পুকুরে শাপলা হয়, শীত গ্রীষ্মে এই  

 পুকুর সম্পূর্ণ শুশক হয়ে যায় পুকুরের নিচে ঘাস গিজায়,তখন–  

 পুকুরে শাপলা আর থাকে না, আবার সেই বর্ষাকাল আসে  

 তখন পুকুরটিতে জল জমে পুনরায় শাপলা গজায়।  

 এই হলো শাপলার কাহিনী, শাপলা ফুল শাপলার পাতা  

 ছন্দে ছন্দে দুলে যায়, অনুপ্রাস, চিত্রকল্প ইত্যাদি সমেত।  

 এবং পুকুরটিও চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল, পুকুরের আনন্দ বেদনা  

 পাতা হয়ে ফুল হয়ে ফুটে ওঠে পৃথিবীতে, এই বিশ্বলোকে।  

 শাপলার ফুলে ফুলে পাতায় কখনো মিল থাকে, মিল কখনো থাকে না। 

  


করবী তরুতে

করবী তরুতে সেই আকাঙ্ক্ষিত গোলাপ ফোটে নি।  

 এই শোকে ক্ষিপ্ত আমি; নাকি ভ্রান্তি হয়েছে কোথাও?  

 অবশ্য অপর কেউ, মনে হয়, মুগ্ধ হয়েছিল,  

 সন্ধানপর্বেও দীর্ঘ, নির্নিমেষ জ্যোৎস্না দিয়ে গেছে।  

 আমার নিদ্রার মাঝে, স্তন্যপান করার মতন  

 ব্যবহার ক’রে বলেশিহরিত হৃদয়ে জেগেছি।  

 হায় রে বাসি না ভালো, তবু এও ধন্যসার্থকতা,  

 এই অভাবিত শান্তি, মূল্যায়ন, ক্ষিপ্ত শোকে ছায়া।  

 তা না হ’লে আস্বাদিত না হবার বেদনায় মদ,  

 হৃদয় উন্মাদ হয়, মাংসে করে আশ্রয়-সন্ধান।  

 অখচ সুদূর এক নারী শুধু মাংস ভোজনের  

 লোভে কারো কাছে তার চিরন্তন দ্বার খুলেছিলো,  

 যথাকালে লবণের বিস্বাদ অভাবে ক্লিষ্ট সেও।  

 এই পরিনাম কেউ চাই না, হে মুগ্ধ প্রীতিধারা,  

 গলিত আগ্রহে তাই লবণ অর্থাৎ জ্যোৎস্নাকামী। 

  


কবিতা বুঝিনি আমি

কবিতা বুঝিনি আমি; অন্ধকারে একটি জোনাকি  

 যত্সামান্য আলো দেয়, নিরুত্তাপ, কোমল আলোক।  

 এই অন্ধকারে এই দৃষ্টিগম্য আকাশের পারে  

 অধিক নীলাভ সেই প্রকৃত আকাশ প’ড়ে আছে—  

 এই বোধ সুগভীরে কখন আকৃষ্ট ক’রে নিয়ে  

 যুগ যুগ আমাদের অগ্রসর হয়ে যেতে বলে,  

 তারকা, জোনাকি—সব; লম্বিত গভীরহয়ে গেলে  

 না-দেখা গহ্বর যেন অন্ধকার হৃদয় অবধি  

 পথ ক’রে দিতে পারে; প্রচেষ্টায় প্রচেষ্টায়; যেন  

 অমল আয়ত্তাধীন অবশেষে ক’রে দিতে পারে  

 অধরা জ্যোত্স্নাকে; তাকে উদগ্রীব মুষ্টিতে ধ’রে নিয়ে  

  

 বিছানায় শুয়ে শুয়ে আকাশের, অন্তরের সার পেতে পারি।  

 এই অজ্ঞানতা এই কবিতায়, রক্তে মিশে আছে  

 মৃদু লবণের মতো, প্রশান্তির আহ্বানের মতো। 

  



তুমি যেন ফিরে

তুমি যেন ফিরে এসে পুনরায় কুণ্ঠিত শিশুকে  

 করাঘাত ক’রে ক’রে ঘুম পাড়াবার সাধ ক’রে  

 আড়ালে যেও না; আমি এত দিনে চিনেছি কেবল  

 অপার ক্ষমতাময়ী হাত দুটি, ক্ষিপ্র হাত দুটি—  

 ক্ষণিক নিস্তারলাভে একা একা ব্যর্থ বারিপাত।  

 কবিতা সমাপ্ত হতে দেবে নাকি? সার্থক চক্রের  

 আশায় শেষের পঙক্তি ভেবে ভেবে নিদ্রা চ’লে গেছে।  

 কেবলি কবোষ্ণ চিন্তা, রস এসে চাপ দিতে থাকে।  

 তারা যেন কুসুমের অভ্যন্তরে মধুর ঈর্ষিত  

 স্থান চায়, মালিকায় গাঁথা হয়ে ঘ্রাণ দিতে চায়।  

 কবিতা সমাপ্ত হতে দাও, নারী, ক্রমে—ক্রমাগত  

 ছন্দিত ঘর্ষণে, দ্যাখ, উত্তেজনা শির্ষ লাভ করে,  

 আমাদের চিন্তাপাত, কসপাত ঘটে, শান্তি নামে।  

 আড়ালে যেও না যেন, ঘুম পাড়াবার সাধ ক’রে। 

  




একটি উজ্জ্বল মাছ

একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়ে  

 দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত পস্তাবে স্বচ্ছ জলে  

 পুনরায় ডুবে গেলো- এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে  

 বেগনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হ’লো ফল।  

 বিপন্ন মরাল ওড়ে, অবিরাম পলায়ন করে,  

 যেহেতু সকলে জানে তার শাদা পালকের নিচে  

 রয়েছে উদগ্র উষ্ণ মাংস আর মেদ;  

 স্বল্পায়ু বিশ্রাম নেয় পরিশ্রান্ত পাহাড়ে পাহাড়ে;  

 সমস্ত জলীয় গান বাষ্পিভূত হ’য়ে যায়, তবু  

 এমন সময়ে তুমি, হে সমুদ্রমত্স্য, তুমি…তুমি…  

 কিংবা, দ্যাখো, ইতস্তত অসুস্থ বৃক্ষেরা  

 পৃথিবীর পল্লবিত ব্যাপ্ত বনস্থলী  

 দীর্ঘ-দীর্ঘ ক্লান্তশ্বাসে আলোড়িত করে;  

 তবু সব বৃক্ষ আর পুষ্পকুঞ্জ যে যার ভূমিতে দূরে দূরে  

 চিরকাল থেকে ভাবে মিলনের শ্বাসরোধী কথা। 

  



সময়ের সাথে এক বাজি ধরে 

সময়ের সাথে এক বাজি ধরে পরাস্ত হয়েছি।  

 ব্যর্থ আকাঙ্খায়, স্বপ্নে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে যেখানে  

 একদিন জল জমে, আকাশ বিস্বিত হয়ে আসে  

 সেখানে সত্বর দেখি,মশা জন্মে; অমল প্রতূষে  

 ঘুম ভেঙ্গে দেখা যায়; আমাদের মুখের ভিতর  

 স্বাদ ছিল, তৃপ্তি ছিল জে সব আহার্য প’চে  

 ইতিহাস সৃষ্টি করে; সুখ ক্রমে ব্যথা হয়ে উঠে।  

 অঙ্গুরীয় নীল পাথরের বিচ্ছুরিত আলো  

 অনুষ্ণো অনির্বাণ, জ্বলে যায় পিপাসার বেগে  

 ভয় হয় একদিন পালকের মত ঝরে যাব। 

  




মুকুরে প্রতিফলিত 

মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে।  

 শিক্ষায়তনের কাছে হে নিশ্চল, স্নিগ্ধ দেবদারু  

 জিহ্বার উপরে দ্রব লবণের মত কণা-কণা  

 কী ছড়ায়, কে ছড়ায়; শোনো, কী অস্ফুট স্বর, শোনো  

 ‘কোথায়, কোথায় তুমি, কোথায় তোমার ডানা, শ্বেত পক্ষীমাতা,  

 এই যে এখানে জন্ম, একি সেই জনশ্রুত নীড় না মৃত্তিকা?  

 নীড় না মৃত্তিকা পূর্ণ এ অস্বচ্ছ মৃত্যুময় হিমে…’  

 তুমি বৃক্ষ, জ্ঞানহীন, মরণের ক্লিষ্ট সমাচার  

 জানো না, এখন তবে স্বর শোনো,অবহিতহও।  

 সুস্থ মৃত্তিকার চেয়ে সমুদ্রেরাকত বেশি বিপদসংকুল  

 তারো বেশি বিপদের নীলিমায় প্রক্ষালিত বিভিন্ন আকাশ,  

 এ-সত্য জেনেও তবু আমরা তো সাগরে আকাশে  

 সঞ্চারিত হ’তে চাই, চিরকাল হ’তে অভিলাষী,  

 সকল প্রকার জ্বরে মাথা ধোয়া আমাদের ভালো লাগে ব’লে।  

 তবুও কেন যে আজো, হায় হাসি, হায় দেবদারু,  

 মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়! 

  





কী উৎফুল্ল আশা নিয়ে

কী উৎফুল্ল আশা নিয়ে সকালে জেগেছি সবিনয়ে।  

 কৌটার মাংসের মতো সুরক্ষিত তোমার প্রতিভা  

 উদ্ভাসিত করেছিল ভবিষ্যৎ, দিকচক্রবাল।  

 সময়ে ভেবেছিলাম সম্মিলিত চায়ের ভাবনা,  

 বায়ুসেবনের কথা, চিরন্তন শিখরের বায়ু।  

 দৃষ্টিবিভ্রমের মতো কাল্পনিক বলে মনে হয়  

 তোমাকে অস্তিত্বহীনা, অথবা হয়তো লুপ্ত, মৃত।  

 অথবা করেছে ত্যাগ, অবৈধ পুত্রের মতো, পথে।  

 জীবনের কথা ভাবি, ক্ষত সেরে গেলে পরে ত্বকে  

 পুনরায় কেশোদ্গম হবে না; বিমর্ষ ভাবনায়  

 রাত্রির মাছির মতো শান্ত হয়ে রয়েছে বেদনা-  

 হাসপাতালের থেকে ফেরার সময়কার মনে।  

 মাঝে মাঝে অগোচরে বালকের ঘুমের ভিতরে  

 প্রস্রাব করার মতো অস্থানে বেদনা ঝরে যাবে। 

  



সন্তপ্ত আশা নিয়ে 

সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায় ক্ষোভে ঝরে যায়।  

 দেখে কবিকুল এত ক্লেশ পায়, অথচ হেতরু,  

 তুমি নিজে নির্বিকার, এই প্রিয় বেদনা বোঝো না।  

 কে ক্থোয় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানি।  

 নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোনো পঙক্তি আর  

 মনে নেই গোধূলিতে; ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই।  

 অথবা গৃহের থেকে ভুল বহির্গত কোনো শিশু  

 হারিয়ে গিয়েছে পথে, জানে না সে নিজের ঠিকানা। 

  



চাঁদের গুহার দিকে

চাদেঁর গুহার দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকি, মেঝের উপরে  

 দাড়িয়েঁ রয়েছে চাঁদ, প্রকাশ্য দিনের বেলা, স্পষ্ট দেখা যায়  

 চাদেঁর গুহার দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকি, ঘাসগুল ছোট করে ছাঁটা।  

 ঘাসের ভিতর দিয়ে দেখা যায় গুহার উপরকার ভাঁজ।  

 গুহার লুকোনো মুখ থেকে শুরু হয়ে সেই ভাঁজটি এসেছে  

 বাহিরে পেটের দিকে। চাঁদ হেঁটে এসে যেই বিছানার উপরে দাঁড়াল  

 অমনি চাঁদকে বলি,’ তেল লাগাবে না আজ’ শুনে চাঁদ বলে  

 ‘মাখব নিশ্চয়, তবে একটু অপেক্ষা কর’ বলে সে অয়েল ক্লথ নিয়ে  

 পেতে দিল বিছানায়, বালিশের কিছু নিচে, তারপর হেঁটে এসে চলে গেল  

 নিকটে তাকের দিকে,একটি বোতল থেকেবাম হাতে তেল নিয়ে এল  

 এসে তেল মাখা হাতে ভুট্টাটি চেপেধরে।  

 যখন ধরল তার আগেই ভুট্টাটি খাড়া হয়ে গিয়েছিল।  

 চাঁদ আমি দুজনেই মেঝেতে দাঁড়ানো মুখোমুখি  

 এক হাতে ঘসে ঘসে ভুট্টার উপরে চাঁদ তেল মেখে দিল। 

  




মুকুট

এখন পাকুড়গাছে সম্পূর্ণ নূতন পাতা, তার সঙ্গে বিবাহিত এই  

 বটগাছে লাল লাল ফল ফলে আছে।  

 চারিদিকে চিরকাল আকাশ থাকার কথা,আছে কিনা আমি দেখে নিই।  

 অনেক শালিক পাখি আসে রোজ এই গাছে,বট ফলগুলি  

 তারা খুটেঁ খুটেঁ খায় বসন্তের হাওয়া বয়, শালিকের ডাক  

 এবং পাতার শব্দ মিশে একাকার হয়ে চারদিকে ভাসে।  

 এখন অনেক মেঘ সোনালি রূপালি কালোআকাশে আকাশে।  

 একটি মুকুট সেই পাকুড় গাছের নিচেশাড়ি পরে দাড়িয়েঁ রয়েছে।  

 মদের ফেনার মতো সাদা সাদা দাঁত আমি অনেক দেখেছি।  

 জেনেছি আগুন যত্ দুরেই হোক না কেন তাকে দেখা যায়।  

 মুকুরের বুকে ঠাঁই পেতে হলে সরাসরি সম্মুখেই চলে যেতে হয়  

 পিছনে বা পাশে নয়; গ্রন্থ ছন্দোবদ্ধ হলে তবে আপনিই মনে থাকে  

 মৃত্যু অবধিই থাকে; মানুষ সমুদ্রকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। 

  


আমার বাড়ির দিকে

আমার বাড়ির থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি অগণিত যুবতী চলেছে।  

 এইসব বিবাহিতা এবং অবিবাহিতা যুবতীদিগের প্রত্যেকের  

 অন্তরে জয়পতাকা কিভাবে থাকে আমি সু ন্দর নিখুঁতভাবে দেখি  

 তাকিয়ে তাকিয়ে ওরা যখন হাঁটেঁ বাবসে থাকে।  

 প্রত্যেকটি যুবতীর অন্তরে জয়পতাকা প্রবেশ করেছে বহুবার,  

 নিজের অন্তরে ঢোকা জয়পতাকাকে খুব ভালবাসে যে কোনো যুবতী।  

 অনেক জয়পতাকা অন্তরে প্রবেশ করে তার মধ্যে যে জয়পতাকা  

 অন্তরে আনন্দ দেয় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ  

 তাকেই বিবাহ করে অনূড়া যুবতীগণ। আমার বাড়ির থেকে বাইরে বেরিয়ে 

  






আমরা দুজনে মিলে

আমরা দুজনে মিলে জিতে গেছি বহুদিন হলো।  

 তোমার গায়ের রঙ এখনো আগের মতো, তবে  

 তুমি আর হিন্দু নেই, খৃষ্টান হয়েছো।  

 তুমি আর আমি কিন্তু দুজনেই বুড়ো হয়ে গেছি।  

 আমার মাথার চুল যেরকম ছোটো করে ছেঁটেছি এখন  

 তোমার মাথার চুলও সেইরূপ ছোটো করে ছাঁটা,  

 ছবিতে দেখেছি আমি দৈনিক পত্রিকাতেই; যখন দুজনে  

 যুবতী ও যুবক ছিলাম  

 তখন কি জানতাম বুড়ো হয়ে যাব?  

 আশা করি বর্তমানে তোমার সন্তান নাতি ইত্যাদি হয়েছে।  

 আমার ঠিকানা আছে তোমার বাড়িতে,  

 তোমার ঠিকানা আছে আমার বাড়িতে,  

 চিঠি লিখব না।  

 আমরা একত্রে আছি বইয়ের পাতায়। 

  



ঘুমোবার আগে

তপ্ত লৌহদণ্ড জল ডোবাতে এবং সেই জল খেত নরনারীগণ,  

 তার ফলে মানুষের রক্তাল্পতা দুর্বলতা জনিত অসুখ সেরে যেত।  

 এইভাবে এককালে বাঁচতাম মানুষেরাএই পৃথিবীতে।  

 তবে সবই ঠিক আছে, ঘুমোবার আগে মনেপড়ে সারা দিনের ঘটনা।  

 মাঝরাতে বিছানায় চাঁদের জ্যোৎস্না এসে পড়ে দূর থেকে।  

 শুধু চাঁদ দেখবার জন্য আমি বিছানায় উঠে বসি, চাঁদ আছে বলে  

 ঘুমোতে বিলম্ব হয়। আমি তাড়াতাড়ি ফের যাব। 

  




কুঁড়ি

পদ্মপাতার প’রে জল টলমল করে; কাছেকোনো ফুল তো দেখিনা,  

 সাধ জাগে, –বড়ো সাধ জাগে-  

 ডুব দিয়ে দেখে আসি নধর জলে নিচে  

 আকাশের অভিমুখী উন্মুখ কুঁড়ি আছে কিনা।  

 হয়তো সে কুঁড়ি  

 ফোটবার ইচ্ছায় থেকে থেকে– থেকে থেকে  

 কোন কালে হয়ে গেছে বুড়ি;  

 কোন কালে তার সব রূপ গেছে প’চে;  

 হয়তো বা তার আর নেই কোন লেশ।  

 সাধ জাগে, বড়ো সাধ জাগে-  

 ডুব দিয়ে দেখে আসি নধর জলে নিচে  

 এখনো রয়েছে কিনা কোন অবশেষ। 

  



এরূপ বিরহ ভালো

এরূপ বিরহ ভালো; কবিতার প্রথম পাঠের  

 পরবর্তীকাল যদি নিদ্রিতের মতো থাকা যায়,  

 স্বপ্নাচ্ছন্ন, কাল্পনিক; দীর্ঘকাল পরে পুনরায়  

 পাঠের সময় যদি শাশ্বত ফুলের মতো স্মিত,  

 রূপ, ঘ্রাণ, ঝ’রে পড়ে তাহলে সার্থক সব ব্যথা,  

 সকল বিরহ, স্বপ্ন; মদিরার বুদ্বুদের মতো  

 মৃদু শব্দে সমাচ্ছন্ন, কবিতা, তোমার অপ্রণয়।  

 হাসির মতন তুমি মিলিয়ে গিয়েছো সিন্ধুপারে।  

 এখন অপেক্ষা করি, বালিকাকে বিদায়দেবার  

 বহু পরে পুনরায় দর্শনের অপেক্ষার মতো-  

 হয়তো সর্বস্ব তার ভ’রে গেছে চমকে চমকে।  

 অভিভূত প্রত্যাশায় এরূপ বিরহব্যথা ভালো।। 

  










একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন