ইমতিয়াজ মাহমুদ এর ৫টি কবিতা

 



১. হতভাগ্য কড়া নেড়ে যায়— দরজায় তবু খিল,

শত্রুর লাঠিতে সাপ মেরে, সে বন্ধুর বিষে নীল।

......

২. সব মানুষই ঘরে ফেরে—অন্য মানুষ হয়ে,

চেনা নদী বদলে যায় সামান্য এক ঢেউয়ে।

......

৩. জীবন এত ছোট যে, তোমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়েই এটা পার করে দেয়া যায়।

....

৪. ক্ষুদ্রঋণ

.

তারা আমার কাছে কিস্তির টাকা চাইতে এলো। আমি তাদেরকে বললাম, মৃত মানুষের কোনো ঋণ থাকে না। 

তারা বললো, কিন্তু তুমি তো এখনো মরো নাই। আমি তাদেরকে আমার ডেথ সার্টিফিকেট দেখালাম। তারা বললো, এমন সার্টিফিকেট বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। 

আমি তাদেরকে আমার শেষকৃত্যের ভিডিও দেখালাম। তারা বললো, ওরকম না মরেও বানানো যায়।

আমি মরিয়া হয়ে তাদেরকে আমার হাত কেটে দেখালাম যে, আমার শরীরে কোনো রক্ত নাই।

তারা বললো, রক্ত না থাকা কাউকে মৃত প্রমাণ করে না। রক্ত না থাকা প্রমাণ করে, সে বেঁচে আছে এবং আমাদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে।

.

[গন্দমফুল/২০১৯]


......

৫. 

আত্মহত্যা

.

আমি একটি পাথরের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বহুকাল আমার ঘুম হয়নি।

আমি তাই একটি পাথরের উপর ঘুমিয়ে পড়লাম। আর ঘুমানোর আগে আমি

পাথরটাকে একটা জলপাইয়ের মতো করে, একটা জলপাইয়ের মতো করে আমি

পাথরটাকে খেয়ে ফেললাম। পাথরের খোসাগুলো নদীতে ভেসে যাচ্ছিল।

নদীতে ভীষণ স্রোত । নদীতে তুমুল ঢেউ। আমি স্রোত ও ঢেউসহ নদীটি খেয়ে

ফেললাম। নদীর দুই তীরে কুচকাওয়াজে দাঁড়ানো বালকদের মতন সারি বেঁধে

দাঁড়িয়ে ছিল কতগুলো গাছ। গাছগুলোর সব পাতা সবুজ। আর তার ডালে

ডালে হলুদ রঙের পাখি। আমি হলুদ পাখিসহ গাছগুলো, সবুজ পাতাসহ

গাছগুলো খেয়ে ফেললাম।


আমি ভেসে উঠলাম নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে তৈরি হওয়া এক নগরীতে।

সেখানকার সবচেয়ে জমকালো স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছিল। মাঠে ১১ দু’গুণে

২২ জন খেলোয়াড়। গ্যালারিভর্তি দর্শক। আমি খেলোয়াড় ও দর্শকসহ

স্টেডিয়ামটি খেয়ে ফেললাম। নগরের একপ্রান্তে প্রাচীন ঋষিদের মতন ঠায়

দাঁড়িয়ে ছিলো একটি গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের তাকে তাকে সাজানো রবীন্দ্রনাথ,

আইনস্টাইন, মার্কস, ডারউইন…।  আমি রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনসহ

আমি মার্কস ও ডারউইনসহ গ্রন্থাগারটি খেয়ে ফেললাম।


এরপর আমি খেয়ে ফেললাম বিমানবন্দরের সবগুলো বিমান, সংসদ ভবন আর

জাতিসংঘ কার্যালয়। অরণ্য ও পর্বতমালা। মহাদেশ ও সাগরসমূহ। অর্থাৎ আমি

খেয়ে ফেললাম গোটা পৃথিবী। আর খেয়ে ফেললাম গ্রহ, নক্ষত্র, উল্কা আর

ধূমকেতুসহ সাত সাতটা আকাশ। হাত-পা-চোখ-মাথাসহ গোটা শূন্য আর

মহাশূন্য। তারপর ধীরে ধীরে আমি ধীরে ধীরে পৌঁছে গেলাম ঈশ্বরের দরবারে।

বহুকাল আমার ঘুম হয়নি। ঘুমে তাই আমার দু’চোখ কাতর হয়ে পড়েছিল।

আমি কিছু বলার আগেই ঈশ্বর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি কি অনুতপ্ত?'

ক্লান্তিতে আমার শরীর ভেঙে পড়ছিল। আমার কাছে মনে হলো তিনি যেন

আমাকে প্রশ্ন করেছেন পৃথিবী কি অনুতপ্ত? আমি ঘুমানোর জন্য একটি পাথর

খুঁজছিলাম। ঈশ্বর আমাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি কি অনুতপ্ত?' আমি

আবার শুনতে পেলাম, ঈশ্বর আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, পৃথিবী কি অনুতপ্ত?

বহুকাল আমি ঘুমাতে পারিনি। আমার সব ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে, আমার ঘুমহীনতার

সব ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে পরম করুণাময় ঈশ্বরের সামনে আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,

পৃথিবী একটা শুয়োরের বাচ্চা!

.

[সার্কাসের সঙ/২০০৮]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন