মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর কবিতা সংগ্রহ



 ডিজিটাল বন্ধু

পিংকিকে জিজ্ঞেস করে সুজন  

বল তো মেয়ে বন্ধু তোমার ক’জন?   

  

পিংকি বলে, হ্যাঁ  

একজনই তো,পাশের বাসার মেয়ে।   

  

শুনে সুজন হা হা করে হাসে  

চোখ দুটো তার বড় হল ঘোর অবিশ্বাসে।  

মাত্র একজন,কী আজব ব্যাপার  

বন্ধু আমার পাকা সাতাশ হাজার!  

ফেসবুকে তাদের সাথেই থাকি  

বন্ধু ছাড়া এই জীবনের অর্থ আছে নাকী?  

আমি যখন স্ট্যাটাস দিতে চাই,  

দেবার আগেই শত শত লাইক পেয়ে যাই।   

  

পিংকি শুনে অবাক হল ভারি  

বাসায় তখন ফিরল তাড়াতাড়ি।   

  

বন্ধু মেয়েটির গলা ধরে বলে  

তুই কথা দে আমার কিছু হলে,  

তুই থাকবি আমার পাশে পাশে  

শুনে বন্ধু হি হি করে হাসে।  

হেসে হেসে বলে,  

হঠাৎ করে যাসনে যেন চলে।  

ধরতে পারি ছুঁতে পারি একটা বন্ধু চাই  

ডিজিটাল হাজার বন্ধুর কোনো দরকার নাই!  

  


বেআইনি কাজ

গতরাতে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেছে মতিকে  
ধরতে তো পারেই,খবর পেয়ে গেছো কোনো এক গতিকে।   
  
একটা বেআইনি কাজ করেছে মতি,করেছে সে গোপনে  
কেন যে করতে গেল!কে জানে কী ছিল তার মনে।  
কাজটা যে বেআইনি সেটা তো গোপন কিছু নয়  
মতি কেন করতে গেল,বুকে তার নাই এতোটুকু ভয়?  
না জানি কার পাল্লায় পড়েছিল আমাদের বোকা সোকা মতি  
এখন তাকে কে বাঁচাবে?কে বলবে,কী হবে তার গতি?   
  
মতির এই সর্বনাশ খবর শুনে সবার মাথায় বাজ  
জানত না সে,শূন্য দিয়ে ভাগ দেওয়া বেআইনি কাজ?  
  




ভালোবাসা

যাদের আছে টাকা  
সবাইকে দিতে তাদের পকেট হল ফাঁকা।   
  
আমার কিছুই নেই  
কেমন করে কাউকে কিছু দেই?  
শুধু জানি বুকের ভিতর ঠাসা  
আছে শুধু সলিড ভালোবাসা।   
  
সেখান থেকে তোমায় দিলাম কিছু  
যখন তুমি হেঁটে এলে আমার পিছু পিছু।  
পথের পাশে ছোট মেয়েটা বিক্রি করে ফুল  
তাকেও কিছু দিতে হল হয়নি কোনো ভুল।   
  
বুকের থেকে ভালোবাসা খাবলা দিয়ে নেই  
ছোট ভাইটা দুষ্টু ভারি তাকে কিছু দেই।  
মা’কে দিলাম আঁচলখানা ভরে  
বাবার জন্য ঢেলে দিলাম রইল যেটুক পড়ে।   
  
ভেবেছিলাম দিয়ে থুয়ে সবই বুঝি যাবে  
ভালোবাসা খুঁজলে পরে আর কিছু কই পাবে?  
কিন্তু দেখো অবাক ব্যাপার কতো  
যত দিচ্ছি কমছে না তো,বাড়তে থাকে তত!   
  
বুকের ভেতর এক্কেবারে ঠাসা  
নূতন করে জমা হল সলিড ভালোবাসা।  
  


রাজকন্যা ও রাজপুত্র 

গল্প পুরো সত্য  
গহীন এক জঙ্গলে থাকতো বড় দৈত্য।  
ভাটার মত চোখ ছিল তার মুলার মত দাঁত  
ঢেঁকির মত পা ছিল আর গাছের মত হাত।   
  
সেই রাজ্যের রাজকন্যা কাজল কালো চোখ  
রূপ দেখে তার মুগ্ধ ছিল রাজ্যের সব লোক।   
  
একদিন সেই রাজকন্যা রাজপ্রাসাদের ছাদে  
সখী নিয়ে কাজল বরণ চুলগুলো তার বাঁধে।   
  
হাউ মাউ খাউ বলে হঠাৎ সেই দৈত্য ছুটে আসে  
সখীরা সব পালায় ভয়ে রইল না কেউ পাশে।  
দৈত্য তখন রাজকন্যার চুলের মুঠি ধরে  
টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল জঙ্গলে তার ঘরে।  
রাজকন্যা হারিয়ে গেছে রাজ্যে নামে শোক  
মাথা চাপড়ে কাঁদতে থাকে রাজ্যের সব লোক।   
  
ভিনদেশি এক রাজপুত্র খবর পেয়ে আসে  
বলল তখন ভয় নেই গো আমি আছি পাশে।  
পথে পথে ঘুরে বেড়ায় রাজপুত্র সেই  
রাজকন্যা খুঁজে বেড়ায় কোথাও দেখা নেই।  
বনের পশু, গাছের পাখি নদীর মাঝে মাছ  
নীল আকাশে সাদা মেঘ বনের মাঝে গাছ।  
রাজকন্যার হদিস নেই রাজ্যতে হই চই।   
  
সবার শেষে গহীন বনে রাজপুত্র যায়  
মৌমাছিদের মুখে তখন দৈত্যের খোঁজ পায়।  
রাজপুত্র ছুটে চলল হাতে তলোয়ার  
ভয়ংকর সেই দৈত্যকে মারতে হবে তার।   
  
কী ভয়ানক যুদ্ধ হল নেই তুলনা তার  
পাহাড় নদী পড়ল ধসে সবকিছু ছারখার  
দৈত্য শেষে মারা পড়ল মাথা পড়ল কাটা  
রক্ত মুছে রাজপুত্র করল শুরু হাঁটা।   
  
ঘরের মাঝে বন্দি ছিল রাজকন্যা সেই  
রাজপুত্র বলল তারে আর তো ভয় নেই।  
রাজকন্যা মুক্ত হল মুখে মধুর হাসি  
বলল, ওগো রাজপুত্র তোমায় ভালোবাসি।   
  
গল্প শুনে মুগ্ধ সবাই, নিজের ঘরে যায়  
ছোট্ট টুকুন একাই শুধু মাথাটা চুলকায়।  
ভাইকে বলে, ভাইয়া তুই একটা কথা বল,  
রাজকন্যা কেন দিল না একখান মিসকল?  
  





ভেসে থাকা

মাটি থেকে ভেসে থাকা সোজা একটা কাজ  
কেমন করে করতে হয় শিখিয়ে দেব আজ।   
  
তুমি তুলবে আমাকে এই রকম করে,  
আমি তুলব তোমাকে শক্ত করে ধরে।  
তারপরে  
দুইজন দুইজনকে ধরে রাখব মাটির উপরে।  
  





জীবন

দুইজন বাচ্চার ঝগড়া চলছে  
ডাবলিউ লেখা আছে একজন বলছে।  
এম লেখা, এম এটা অন্যজন বলল,  
তারপর কী ভীষণ চেঁচামেচি চলল।   
  
দুজনেই ঠিক তারা,যদি সেটা জানতো  
ঝগড়া থামিয়ে তবে হয়ে যেত শান্ত।  
উল্টো দিক থেকে দেখলেই জানবে-  
জীবনটাও এরকম কবে তারা মানবে?  
  





সং

“সুং, সিং এ সং সেং সাং”  
সুং স্যাং এ সং  
সিইং সুং স্যাং এ সং  
সোং স্যাং এ সং।  
  





ডিটেকটিভ 

ডিটেকটিভের চাকরি আমার মানুষকে ফলো করা কাজ  
পায়ের চিহ্ন ধরে হেঁটে হেঁটে এখানে পৌঁছেছি আজ।  
(চাকরিটা মনে হয় ছেড়েই দেব!)  
  



ভয়

জয় কয়, ভয় হয়।  
কয় toy লয়?  
চয় কয়,বয়।  
৯ টায় লয়  
জয় বয়।  
চয় ৯ টায় লয়  
চয় কয়, নয়,ভয় নয়।  
৬ টায় থয়  
তয় ভয় ক্ষয় হয়।  
জয় toy ধয়  
(জয় boy চয় boy নয়)   চয় সয়  
চয় জয় রয়  
তয়?   
  
শয় শয় toy  
(আর কতো?এখানেই শেষ!)  
জয় toy লয়।  
  




BIG BANG

ফিজিক্স পড়ার সখ ছিল বিশেষ করে Big Bang  
ক্লাশে গিয়ে হতবাক বসে আছে Big ব্যাঙ!  
  




ছাই

যেখানে দেখিবে ছাই  
উড়াইয়া দেখ তাই,  
পাইলে পাইতে পার অমূল্য রতন।   
  
(এমন বোকা আমি দেখি নাই তোমার মতন!)   
উড়াইয়া দেখি ছাই  
পাবলিকের পিটা খাই?  
ভেবেছটা কী  
আমার মাথায় বুঝি কোনো ঘিলু নাই?  
  



অভাগা

অভাগা যেদিকে চায়  
সাগর শুকায়ে যায়।   
  
সত্যি?  
তোমরা কই জান  
পৃথিবীটা ডুবে যাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায়?  
অভাগারা,তোমরা কোথায়?  
কোন জায়গায়?   
  
তাড়াতাড়ি চলে আস সমুদ্রের পাড়  
তোমাদের দেশে এখন খুব দরকার।  
অপূর্ব এই সুযোগ পানি কমাবার  
চলে আস কুয়াকাটা কক্সবাজার।  
  



ঝাপসা

মেয়েটার নাম হল হাফসা  
যখনই ছবি তোলে, ছবি ওঠে আবছা।   
  
ক্যামেরাটা ঠিক আছে  
হাফসা মেয়েটাই আসলে বেশ ঝাপসা।  
  



চা বাগান

চা বাগানে মেয়েরা কই তুলছে?  
ও আচ্ছা  
গাছে গাছে টি-ব্যাগ ঝুলছে!  
  


পিউটার

সেদিন পিউটার কিনতে গেলাম বাজারে  
ঘুরে দেখি দোকানে দাম চায় হাজারে   
  
কিছুতেই বেশি না শুধু হবে কম,কী এক ধানাই পানাই  
কম-পিউটারে হবে না, আমার বেশি-পিউটার চাই!  
  


টেলিফোন

-হ্যালো, কে বলছ?  
-আমি।  
-আমি কে?  
-আমি রাজিব।  
-আজিব?  
-আজিব না রাজিব। র আকার রা জ ইকারে জি-  
-র আকারে রা, গ ইকারে গি?  
-না না। গ ইকারে গি না জ ইকারে জি। জিলাপির জি।  
-খিলাপীর খি?  
-খিলাপীর খি না, জিলাপীর জি। জ ইকারে জি, ল আকারে লা-  
-জ ইকারে জি, ম আকারে মা?  
-না না। ম আকারে মা না। ল আকারে লা। লাটাইয়ের লা।–  
-ঘাটাইয়ের ঘা?  
-ঘাটাইয়ের ঘা না। লাটাইয়ের লা। ল আকারে লা, ট আকারে টা-  
-ল আকারে লা চ আকারে চা?  
-না না। চ আকারে চা না। ট আকারে টা। টাকুয়ার টা।  
-মাকুয়ার মা?  
-মাকুয়ার মা না। টাকুয়ার টা। ট আকারে টা ক উকারে কু-  
-ট আকারে টা, ল উকারে লু?  
-না না। ল উকারে লু না। ক উকারে কু। কুমিরের কু।  
-ভুমিরের ভু?  
-ভুমিরের ভু না। কুমিরের কু। ক উকারে কু, মু ইকারে মি-  
-ক উকারে কু, প ইকারে পি?  
-না না। প ইকারে পি না, ম ইকারে মি। মিছিলের মি।  
-পিছিলের পি?  
-পিছিলের পি না। মিছিলের মি। ম ইকারে মি, ছ ইকারে ছি-  
-ম ইকারে মি, জ ইকারে জি?  
-না না। জ ইকারে জি না, ছ ইকারে ছি। ছিয়াশির ছি।  
-তিরাশির তি?   
  
(টেলিফোনে কথা বলবে আরো?  
কী নিয়ে শুরু করেছিল এখন মনে নাই কারো)  
  




গলায় দড়ি

মরি আমি মরি  
এই বলে হরি  
দিল গলায় দড়ি।  
(কী হল? হাসছ কেন?  
সমস্যাটা কী?) 
  



বিলাপ

ঘুম থেকে উঠেই কী দেখলাম আজ  
কেমন করে করলে তুমি এই সর্বনাশা কাজ?  
শাড়ি দিয়ে প্যাঁচ লাগিয়ে গলায় দিলে দড়ি  
দুঃখে আমার বুক ফেটে যায় কী এখন করি?  
এই দুঃখ এখন আমি কেমনে সইতে পারি?  
তুমি কী জানতে না গো,  
এইটা আমার মোস্ট ফেবারিট শাড়ি?  
  



থিওরি অব রিলেটিভিটি 

ট্রাফিক পুলিশ বলে  
লাল লাইটে কেন গেলে চলে?  
আমি বললাম লাল তো মোটেই নয়  
জোরে চললে লাল রঙকে সবুজ মনে হয়!  
  




শত প্রশ্ন 

ক্রিকেট মানে যদি ঝিঁঝিঁ পোকা হয়  
ফুটবল মানে কেন তেলাপোকা নয়?   
  
ব্যাট মানে যদি চামচিকে হয়  
বল মানে তবে কেন ইন্দুর নয়?   
  
‘হায়’ মানে যদি কী খবর হয়  
হুতাশ মানে কেন ভালো আছ নয়?   
  
স্যান্ডেল মানে যদি চন্দন হয়  
জুতা মানে তবে কেন সেগুন নয়?   
  
লং মানে যদি লম্বা হয়  
এলাচি মানে কেন বেঁটে নয়?   
  
রাগ মানে যদি কার্পেট হয়  
গোস্বা মানে কেন বিছানা নয়?   
  
লাভ মানে যদি ভালোবাসা হয়  
লোকসান কেন তবে খুনোখুনি নয়?   
  
বুক মানে যদি বই হয়  
পেট মানে কেন খাতা নয়?   
  
লাফ মানে যদি হাসাহাসি হয়  
ঝাঁপ মানে কেন কাঁপাকাপি নয়?   
  
পেপার মানে যদি গোলমরিচ হয়  
ম্যাগাজিন মানে কেন জিরা –বাটা নয়?   
  
টক মানে যদি কথা হয়  
ঝাল মানে কেন তবে বার্তা নয়?   
  
টি মানে যদি চা হয়  
ইউ মানে কেন কফি নয়?   
  
মামা মানে যদি আম্মু হয়  
মামী মানে কেন আব্বু নয়?   
  
গান মানে যদি বন্দুক হয়  
বাজনা মানে কেন রাইফেল নয়   
  
ফুল মানে যদি বেকুব হয়  
কলি মানে তবে কেন গাধা নয়?   
  
গুন মানে যদি গুণ্ডা হয়  
ভাগ মানে তবে কেন বদমাশ নয়?   
  
আই মানে যদি চোখ হয়  
জে মানে কেন তবে নাক নয়?   
  
পি মানে যদি হিস্যু করা হয়  
কিউ মানে তবে কেন “ইয়ে” করা নয়?   
  
এরকম কত প্রশ্ন,চোখে ঘুম নাই  
উত্তর খুঁজতে আমি কার কাছে যাই?  
  

























একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন