তারাপদ রায় এর কবিতা সংগ্রহ


 স্মাইল প্লিজ

স্মাইল প্লিজ, আপনারা প্রত্যেকেই একটু হাসুন,  

 দয়া করে তাড়াতাড়ি, তা না হলে রোদ পড়ে গেলে  

 আপনারা যে রকম চাইছেন তেমন হবে না,  

 তেমন উঠবে না ছবি। আপনার ঘড়িটা ডানদিকে  

 আর একটু, একটু সোজা করে প্লিজ, আপনি কি বলছেন  

 ঘাড়-টাড় সোজা করে দাঁড়ানো হ্যাবিট নেই, তবে,  

 কি বলছেন অনেকদিন, অনেকদিন হাসার অভ্যাস,  

 হাসার-ও অভ্যাস নেই? এদিকে যে রোদ পড়ে এলো  

 এ রকম ঘাড়গোঁজা বিমর্ষ মুখের একদল  

 মানুষের গ্রুপফটো, ফটো অনেকদিন থেকে যায়,  

 ব্রমাইড জ্বলে যেতে প্রায় বিশ-পঁচিশ বছর।  

 বিশ-পঁচিশ বছর পরে যদি কোনো পুরোনো দেয়ালে  

 কিংবা কোনো অ্যালবামে এরকম ফটো কেউ দেখে,  

 কি বলবেন, বলবেন, ক্যামেরাম্যানের ত্রুটি ছিলো,  

 ঘাড় ঠিকই সোজা ছিলো, সব শালা ক্যামেরাম্যানের  

 সেই এক বোকার শাটারে এই রকম ঘটেছে। 

  


পুরনো শহরতলিতে

আবার ফিরে এলাম,  

 আর একটু খোঁজ নিয়ে এলেই ভাল হত।  

  

 বাড়ির সামনের দিকে  

 একটা কয়লার দোকান ছিল  

 কাঠ, কয়লা, কেরোসিন -খুচরো কেনা বেচা,  

 কেউ চিনতে পারল না  

  

 দু’জন রাস্তার লোক বলল,  

 ‘এদিকে কোনো কয়লার দোকান নেই  

 গলির এপারে রাধানাথ দত্তের গ্যাসের দোকান  

 সেখানে খোঁজখবর নিয়ে দেখুন।  

  

 ‘মনে আছে কয়লার দোকানের পিছনে ছিল বড় উঠোন,  

 কয়েকটা আম কাঁঠাল গাছ, ভাঙা বারান্দা, ঘর দোর।  

 এখন তো কিছুই নেই,  

 শুধু একটা নেমপ্লেট, ‘নাগরিক’।  

 চারতলা বাড়ি, ষোলটা ফ্ল্যাট,  

 এরই মধ্যে কোনওটায় আমি ফিরে এসেছি।  

 কিন্তু কয়তলায়, কাদের ফ্ল্যাট?  

 স্বর্গীয় রূপকবাবুর পদবিটা যেন কী ছিল,  

 তাঁদের নতুন বাসাবাড়িতে এখন কে থাকে-  

 কোনও খোঁজখবর রাখি না,  

 শুধু মনে আছে তাঁর ভাইঝি টুলটুলি।  

 না। সেই বাড়িটা জগৎসংসারে আর নেই,  

 টুলটুলিকে কেউ চেনে না।  

 পুরনো শহরতলির নতুন পাড়ায় বোকার মতো ঘুরি। 

  





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন