।।আমার মেয়ে।।
আমার মেয়ে—
যে আজও আসেনি পৃথিবীতে,
কোথা থেকে সে এতো রহস্য পাঠায়!
যেন, একটা বিকাল তার নিজের তাগিদে
মম কন্যা নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছে;
সঙ্গে নিয়েছে আমাকেও।
মেয়ের নানান প্রশ্ন সব—
আগুনের মতো শিশুতোষ।
পাখির মতো নির্দোষ।
দুপুরের মতো ঝলমলে।
সুন্দরসম গালে টোল।
ভাবনায়, মেয়ে তার নিজস্ব নিয়মে যদি হাসে—
ছোট এক নদী তার তরঙ্গ নিয়ে এসে
আমাকে দোলায়!
আমার সে মেয়ে—
হয়তো ঝিঁঝিই তার নাম
কিংবা চড়ুই যদি হয়,
না জানি কোথায় তাকে
দেখেশুনে রাখছে সময়!
।মাল লাগে।
যেই শহরেই আসি বরিশাল লাগে
অতুল দিনের ভাবনা বাতুল, ভাল্লাগে!
মিষ্টি শুরুর পরের বিষয়
কেবল কেন ঝাল লাগে!
পিছলা হাতে হাত রাখাটাও
ভয়ের কিনা; ছাল লাগে।
ফুল ফুটতে, পাখি বসতে
এবং পাতার ডাল লাগে,
ঘর বলতে বেড়ার সাথে
উপর জুড়ে চাল লাগে।
কিন্তু ঘরে থাকার জীবন
সর্বদাই বাল লাগে,
আউলা হয়ে যাওয়ার পরেও
ঝাউলা হতে পাল লাগে।
স্বভাব খারাপ তাইতো সবি
মাল লাগে
বইতে গিয়া শুইতে আজি
ভাল্লাগে!
যেই শহরেই আসি বরি
শাল লাগে!
।।সান্ধ্যদেশের অন্ধগলি।।
রক্তে তোমার
মাংসে তোমার
দুঃখগুলো বিঁধে আছে,
রাত্রি অনেক
খাবারও নেই
বলো, তোমার খিদে আছে?
হাই তুলেছে
ঘরবাড়ি সব
দরজা গেছে আনতে কাকে!
অর্থ যখন
পাল্টে গেল
ফুল ডেকেছি পাথরটাকে!
আজব ম্যাটার
স্বভাব ব্যাটার
দেখলে ফুলের পিত্তি জ্বলে!
শঙ্কা–ডরে
থাকছি ঘরে
সাহস গেছে শপিং মলে।
কী হাল হলো
তোমার তবে
এমনভাবে নিভলে কেন?
পথের খোঁজে
যাচ্ছ যখন
আমার জন্য হাঁটা এনো!
‘হ্যাঁ’-এর পাশে
‘না’টা কেমন
দোলায় নিজের অশান্ত ডাল!
বোঝার তরে
নিকট শয়ান—
উড়াল তখন হলো নাগাল।
হলুদ করো
লালকে এবার
নীলকে করো পদ্মনাভি,
ঘূর্ণিস্রোতে
উল্টে পড়া
তিরকে করে ধনুক দাবি।
একটা সন্ধ্যা
গাছের তলায়
থমকে আছ শান্ত বিষে,
মুখটা যেন
দিগন্ত-দূর
এমনভাবে যাচ্ছ মিশে।
বেবাক নিয়ে
অবাক হলে
আকাশটা চায় উল্টা হতে,
কয়টা তারা
শূন্যে ঘুরে
চাইছে একে অপর ছুঁতে।
তোমার চাওয়া
সেই আবহাওয়া
শুনছ? মনে বজ্রনিনাদ—
ডুবন্ত ঢাল
নদীর কূলে
ছিটকে পড়ে ভাসছিল চাঁদ!
কাঁপছিল বন
মাঘের শীতে
হরিণ শুয়ে বাঘের ওমে,
সাগরটাকে
রাগতে দেখে
সূর্য গেল অস্তে নেমে।
পাহাড় থেকে
ছুটছে নদী
ঘুরতে যাবে পাশের দেশে,
ঘুমের ভেতর
নানান স্মৃতি
রাতবিরাতে আনছে কে সে!
চোখের নিচের
গভীর খাদের
অতল থেকে আসে ধ্বনি,
হাড় সরিয়ে
বুকের তলে
মিলতে পারে লোহার খনি?
ঠান্ডা শীতল
এবং পিতল
ভয় করে ওহ্ বিজন বলে!
আঁধার সরাও
তরঙ্গহীন
চোখের তীরে যাচ্ছি গলে।
কী পাব আর
পাল কুয়াশার
জাহাজ হয়ে দিনটা ছোটে!
ধনুকশরীর
রং ও জরির
ঘ্রাণ পেয়েছে অলীক ঠোঁটে।
দেখাও মুঠি
হে ভ্রুকুটি
করতলে কয় শ বছর?
চুপটা বড়
অসহ্য আজ—
কোথায় পেলে এই অগোচর!
দেখো তো কাল
চিনতে পারো
এইটা তোমার নষ্ট ঘড়ি?
আচমকা ঢেউ
আনল তুলে
কী সব যেন সুলুক করি!
ছিদ্রপথে
নামায় এল
সান্ধ্যদেশের অন্ধগলি।
সমস্তে তাই
টলছে শরীর
পালায় হঠাৎ পাকস্থলি!
বসন্ত
এ বসন্ত ভন ভন করে
মাথার উপরে-
নাকি পাশে?
যতোটা ছড়িয়ে বসি
তারও বেশি
গুটিয়ে আসে,
যেন কুয়াশায়
মাওয়া ঘাটে ফেরি সব
দেরি হয়ে যায়-
হেরি প্রিয় সকালের মুখ
মুখে দিই পানি,
এ জীবনে ধুয়ে-মুখে
কোথায় চলিয়া গেছি জানি!
।।বর।।
তাহলে আংশিক হৃদ্যতা রেখে
দৃশ্যত ফিরে যাওয়া—
যেভাবে বন্ধুর মুখ
সন্দেহে
অংশত শত্রুর ছায়া হয়ে ভাসে
ঋতুর প্রবাহে।
বেল বাজাচ্ছে হেমন্ত,
আলগোছে পথ করে দিচ্ছে শরতের কাশবন।
একটা ছোট্ট পুতুল তাও
আকাঙ্ক্ষায় বসে আছে সোকেসে নীরব।
তাকে যাও, নিয়ে যাও, আংশিক ধবধবে বনে—
হৃদয়ে বিবাহ এলে বর জেনে নেবে।
।। বিছা।।
যাওয়ার রাস্তা ফেরার সড়ক পাশাপাশি থাকে
কোনটাকে যে যাওয়া বলে, ফেরা বলে কাকে!
পথের ধারে বাবলা গাছে বিকাল লেগে রয়
বাতাস বহেন, তেনার সাথে বিকালও কি বয়?
না বইলে সে যাচ্ছে কোথায়, থাকছে না তো থেমে!
কারো ডাকের আগেই কি-না সন্ধ্যা আসে নেমে।
সন্ধ্যা মানে সন্ধ্যা তারা, গাছের চারা টবে
একটা কিছু ফুটল বলে ফুল গাছই সে হবে!
কী ফুল তোমার ফুটল রাতে ঘ্রাণ নেমেছে পথে
জলের বুকে আঘাত করে বলছি আলাগ হতে।
তাইতে ফলে যাওয়ার থাকে, ফেরার খবর মিছা
বনের মাঝে একলা ঘুরে ধরল হাতে বিছা!
যেখানে পাহাড় জীবনের চেয়ে বড়ো
বজ্র আঁটুনি খুলে কোনোদিন যদি
চলে যাই দূরে, বক্রচলন নদী
তার পাশে ছোট আদিবাসী পাড়া ধরো
যেখানে পাহাড় জীবনের চেয়ে বড়ো।
পাশের পাহাড়ে আছে প্রতিবেশী যতো
এত এত দূূরে, আহা বিদেশের মতো!
দূর উঁচু থেকে দেখা বিন্দুর সম
তুমি তো বন্ধু, আত্মীয় তুমি মম।
প্রিয় পাখি যারা শুনব তাদের কাছে
অদেখার যত খবরাখবর আছে।
পোশাক-মুুখোশ ছাড়া পাহাড়ের বনে
পেয়ে যাব নারী পাতার আন্দোলনে।
ঘুরব-ফিরব চিতা বাঘেদের সাথে
সাপ-বেজিরাও বান্ধব হবে তাতে।
মাছের সহিত করব সাঁতার নদে,
কষ্ট বুঝব পোকার আর্তনাদে।
গুহার শরীরে সব কথা যাব লিখে
পাতা খেয়ে নেব জীবনধারণ শিখে।
গাছ থেকে খাব ফলটল পেড়ে আর
ভুলে যাব স্মৃতি ভুলভাল জীবিকার।
।মুখ।
মহাবিশ্বের মতো ভারী এক রাতে
ত্বরিত উঠব গিয়ে শেষ নৈশবাসে!
থই থই মানুষের মধ্যে একা
বসে থাকব,
যেভাবে শত শত ভবনের পাশে
শঙ্কিত নিসঙ্গ কোনো গাছ
হাওয়ায় কাঁপতে থাকে, যেন তার জ্বর!
যেভাবে তন্দ্রা ঠেলে, ধরে থাকে হুইল
কোনো নৈশকোচের চালক-
তেমন ঘুমে চুর চোখ নিয়ে জেগে থাকব!
ভোরে আমি
বাড়ির বদলে কেন হাসপাতালে যাব, খোদা!
এই ভাবনার আক্রমণ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেব-
ভুলক্রমে জেলে যাওয়া কয়েদীর মতো।
ক্লিনিকের গেটে চাচা ও মামার সাথে,
ফুফু ও ফুফার সাথে,
খালাতো ভাইয়ের সাথে দেখা হবে।
আক্সিজেন মাক্স মুখে,
ক্যানোলা হাতে,
সরের মতোন সাদা চাদরে
গলা অব্দি মোড়া; অচেতন
কার কাছে নিয়ে যাবে তারা!
বার বার ডাকলেও ডাকলেও ডাকলেও
চুপ সে।
যেন রাগ পড়ে গেলে দেবে সাড়া!
*১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯