সাদী কাউকাব এর কবিতা


অন্তর্হিত


সাদী কাউকাব  


চরিত্রের ভেতরে শুই। অধোগতির চরিত্র, নির্নিমেষে

সরে যায় প্রান্তিকে। কণ্ঠাস্থি থেকে কশেরুকায়—

পতনোন্মুখ ঢেউ খেলে। কুটিল কোরাসে প্রহ্লাদ

কুটি কুটি হয়। টকে যায় মাড়ির উল্টানো

তক্ শুক্রাণু। উঠে দাঁড়াতে না পারার আড়তে

মাথার 'পরে আবহমান ছাত। একটা টিকটিকি

বরাবর দেখি। মরে গেছি তথাপি,

রস অবশিষ্ট দেহে তাই

উল্টে পড়ে না ফ্লোরে


(২০১৯)





" যশোলাভ লোভে আয়ু কত যে ব্যয়িলি হায়,

কব তা কাহারে?

সুগন্ধ কুসুম-গন্ধে অন্ধ কীট যথা ধায়,

কাটিতে তাহারে?

মাৎসর্য-বিষদশন, কামড়ে রে অনুক্ষণ!

এই কি লভিলি লাভ,অনাহারে,অনিদ্রায়?

মুকুতা-ফলের লোভে,ডুবে রে অতল জলে

যতনে ধীবর,

শতমুক্তাধিক আয়ু কালসিন্ধু জলতলে

ফেলিস,পামড়!

ফিরি দিবি হারাধন,কে তোরে,অবোধ মন,

হায় রে,ভুলিবি কত আশার কুহক-ছলে!"



সাদী কাউকাব এর কবিতা

খতিবের মোড়ে এলে

লোকটারে দেখি— অতিকায়

সাড়ে এগারোটার রাতে

নিভে যায় দোকানপাট

কিন্তু নিভে না দুয়েক

তাদের শপ-কিপারেরা

ঢিমে আলোর রশ্মিতে

অনন্ত হিসেবে আছে?

কেনো তারা দাঁড়ায় না সে চোখ অনুসরণ করে?

ও কি গাঢ় কাজল পরে থাকে?

কাটা কাটা ব্যঙ্গ —কে জানে —দুঃখ হবে

কীভাবে একা তাকাবো সে গভীরে ?

কীসের এতো হিসেব দু’চার দোকানির?

সমান্তরালে ,কেনো তারা দাঁড়িয়ে

ছয় ফুটের কম হতেও পারতো সে লোকের চোখের রেটিনায়

পানি ঢেলে দেয় না? দৃষ্টি নরোম করে না?


কীভাবে পৌঁছুবো ঘরে

খতিবের মোড় না হয়ে

আহা, এমন অনন্ত রাত্র আমার ফুরায় না

দিনের খেয়ালে

যখন ঘুমে আছি, দূর প্রবোধের ঘুমে

তার রাত, বোধ করি, কেটে গেছে

গায়ে শাড়ি চাপিয়ে

তালুতে তালু বাজিয়ে লোক,

ভোরের দোকানে হাজির

রবিকান্ত পয়সা তোলার প্রস্তুতিতে


(২০২০)






রুনু


অর্ধনিমীলিত দৃষ্টি বুজে যাক অথবা পূর্ণভাবে তাকাক। রুনু এই চায়। আমি আছি মাঝামাঝি। রুনু এক সুতীব্র আলো; অনেক নিষ্পেষণের পরেও ঠিকই এলায়ে পড়েছে আমার উঠানে, আমাকে অন্ধভাবে মাখাতে চেয়ে ওম। বলেছে সে, চলে এসো। টিকিট করে ফেলো কলকাতার। আমি তাকে বলতে পারি নি শুধু, আমার সামর্থ বড়োজোর গলির মোড়, যেখানে পথ হারানোর শংকায়, প্রেমিকাকে যে কেউ ছেড়ে যায় । অথচ কথা ছিলো রুনুর , নিরপেক্ষ যে-কোনো শহরেই রক্ষা করে নেবার প্রিয় সংগোপন । আর খণ্ডণ আমার, এখনো কুঁকড়ে যাই অন্য মুঠিতে দেখে পরিচিত হাত। সারল্য থেকে দূরে যেতে পারি না। জানি, রুনু, দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অন্য কারো সাথে ধীরে নিবিষ্ট হয়ে যাবার। আমিও একদিন, কপর্দকশূন্য পকেটে স্বপ্ন দেখতে চাই ভারত কিনে ফেলার টাকার।


(2014)

.......................................................................................

Runu

Runu, a keen blown ray;

after all the amortise,

got come to my yard,

tried me to smear with warmth.

Said, ‘Come on! Book your ticket for Kolkata.’

I couldn’t say her even;

my feet can go sheerly to the end of the Gali,

where anyone left his inamorata,

fear of losing in a maze!

Nevertheless, Runu promised me-

with her adorable words

to take refuge in an unknown city-

our dear secret.

The breach is all mine,

and now I became shrunk within me

seeing those known cubits in other’s folds.

I can’t take me off the innocence.

Though knowing,

Runu’s having her nightmares,

to be longed for someone else.

And me-

want a dream of buying Mother India,

with all those money with my penniless pocket.


(translated by Dalton Souvato Heera)




ভালভা

সাদী কাউকাব

খসে পড়ে ক্ষুব্ধ মেহন — অচরিতার্থ। গন্ধবাহে রাত। নিষিক্তের বিরোধে দাঁড়িয়ে মোহিনী। ক্ষমতার ঘামে ভিজে হীনতা তার। দমিত বাসনারও জমা রাখা ঠোঁটে চেপে ধরা দাঁত। তার আস্পর্ধাকে মর্যাদা করো; অজ্ঞাতকে আলো। মৌল গতিতে ক্ষরাতে বার্থোলিন, কাম- স্পৃহাকে মানুষ। সমতা হারানো সে — ক্লান্ত ভারবাহী পশুর। আরোহনে মুছে ফেলে ঘাম একান্ত জানুর। পৌরুষকামী মোহিনী সে, অবমুক্তিতে সাধ, দেহে ধ্বনিত করে শুনো প্রজন্মের প্রসাদ।

(2017)



সাদী কাউকাবের কবিতা


(একটা জরুরি ভূমিকা দেবার ছিলো। অথবা ভূমিকা জরুরি ছিলো। দিলাম না। তবে নামকরণের সমস্যায় ভুগছি। একটা নামকে বিকল্প ধরে ৩ টা কবিতাতে জুড়ে দেয়া হলো। মূলত ছয়টা কবিতা কিন্তু নাম চারটা। সবকটা কবিতার সময় ও প্রেক্ষিত ভিন্ন) 


...........................................................................

মধ্যাকর্ষণের সহজ ভূমিকায়


১.

খতিবের মোড়ে এলে

লোকটারে দেখি— অতিকায়

সাড়ে এগারোটার রাতে

নিভে যায় দোকানপাট

কিন্তু নিভে না দুয়েক

তাদের শপ-কিপারেরা

ঢিমে আলোর রশ্মিতে

অনন্ত হিসেবে আছে?


কেনো তারা দাঁড়ায় না সে চোখ অনুসরণ করে?

ও কি গাঢ় কাজল পরে থাকে?

কাটা কাটা ব্যঙ্গ —কে জানে —দুঃখ হবে

কীভাবে একা তাকাবো সে গভীরে ?

কীসের এতো হিসেব দু’চার দোকানির?

সমান্তরালে ,কেনো তারা দাঁড়িয়ে

ছয় ফুটের কম হতেও পারতো সে লোকের চোখের রেটিনায়

পানি ঢেলে দেয় না? দৃষ্টি নরোম করে না?

কীভাবে পৌঁছুবো ঘরে

খতিবের মোড় না হয়ে

আহা, এমন অনন্ত রাত্র আমার ফুরায় না

দিনের খেয়ালে


যখন ঘুমে আছি, দূর প্রবোধের ঘুমে

তার রাত, বোধ করি, কেটে গেছে

গায়ে শাড়ি চাপিয়ে

তালুতে তালু বাজিয়ে লোক,

ভোরের দোকানে হাজির

রবিকান্ত পয়সা তোলার প্রস্তুতিতে


২.

যদি আলকুশির মতো ফুটে থাকি বনে

লাশ হয়ে

কম ঝক্কির হবে তাও

সিলিঙে , জনপদে, পরিবারে অলক্ষ্যে

কিন্তু বদ্ধরুমে একান্তে ফুটে থাকার চেয়ে।


ভাঙা দরজারও প্রাসঙ্গিক হয় হুড়হুড়

আকস্মিক আমার ঠিকরানো চোখে চোখ রেখে

কার্ডিওমেগালি আক্রান্ত মায়ের প্রাণের দফা হতে পারে;

বদমেজাজি বাপেরও।হতে পারে তা আমার কোমল প্রাণ তরুণ ভাইয়ের ।

যেনোবা হরেদরে ফিরে আসা

লাশোত্তর জীবনে

এড়াতে না পারা জ্যামিং

ঘিরে ধরা ঔৎসুক্যের ঠেলায়

পুনর্বার স্বস্তি খোয়াবো ।

থানা-পুলিশ

রিগর মর্টিজের আগে বাঁচোয়াহীন জেরা

উদ্দিষ্ট সরলতাকেই

সন্ধানী সামাজিক চোখের তাকিয়ে থাকা

কাটাতে পারবো না —

উৎকণ্ঠা চাপ আত্মীয় ভরপুর

ঢলে পড়লো কি না পড়লো আঁশটে দুপুর

তারও আগে কার্য ও কারণের নানান রসদ

হাতির পদক্ষেপের মতো দপদপ

আমার থেমে থাকা বুকে থামবে না।


বহুধা আইনি জটিলতা গলে

পেরিয়ে প্রশ্নকাতরতা যদি

কিছুটা উপর থেকে

(পুলিশি তদন্ত শুরু হলো সবে)

দেখি বনে ঝুলে থাকা একই আমাকে

পাতার মধ্যবর্তী ফাঁকে

অন্ধকারের আগে চতুষ্পদী

টেনে হিঁচড়ে কি খাবে আমাকে!

দাঁতের গরলে সপেও নিজেকে, প্রশ্ন মনে

ভালুক চিতা না হয়ে তারা যদি হয় শিয়াল কুকুর

ততোটাও কি সহ্য হবে?


৩.

মজানো ডোবা। লগ্ন-পাড় বেয়ে ঠাঁই কংক্রিট; দীর্ণ করে মৃদু প্রবাহ এক চিত্র-বেলুন-ব্যাঙের স্বরপ্রদাহ আরোহণ করে হাওয়ায়। ছেদ করে নমিত থুথু, শিশুর জিভ হতে উদগীর্ণ — মধ্যাকর্ষণের সহজ ভূমিকায় টলছিলো। ফোর্থ ফ্লোরের বারান্দায় চকিতে মুখ ফেরালো যে মাকে সাড়া দিতে, বেখেয়ালে তাকেও ছাড়িয়ে সে স্বরপ্রদাহ কাঁপছিলো বায়ুতে। তখন, টপ-রুফে গোপন রোমান্সে হাজির প্রেমিকের সহ-এপার্টমেন্টে থাকা প্রেমিকা...শিশু থেকে ঝুলন দূরত্বের খানিক 'পরে ছাদ। আকাশমণ্ডলীর সুরাসুর ছাপিয়ে সেখানে উদ্ভাসিত চাঁদ।


...........................................................................


প্রথম

*


ছড়াবো না। কান্নার প্রথম ফোঁটার মতোই নতমস্তকে একধারে নিচে নেমে যাবো। তীব্র কান্নায় চোয়ালে গালে ঠোঁটে, তোমার দ্বিতীয় তৃতীয় ও অজস্র প্রেমিকের মতো ছড়াবো না। ভুল ব্যস্টিকে ছড়াবো না তো...


...........................................................................


অল কোয়াড ক্যামেরা

*


১.

মাছির মতো অপমান

থিক থিক করে

গ্রহাণুপুঞ্জ থেকে রাতের বারান্দা


২.

হঠাৎ আজ দিনের সাথে গতকালের মিল পাওয়া যাবে না। হঠাৎই বিগত সপ্তাহকে মনে হবে পৃথিবী থেকে অকূল গ্রহের দূরত্ব


৩.

শুয়োরের বিষ্ঠা মাটিতে মিশে মাটি হয়ে যায়। পরাক্রমশালী রাজাও। আর পৃথিবী আয়তনে আরো কিছু বেড়ে আরেকটা আলোকবর্ষ অতিক্রমের দিকে ধেয়ে যায়


৪.

একটা নক্ষত্র কোনোদিনও পৃথিবীকে দেখলো না পৃথিবী ক্ষুদ্র বলে। একটা পৃথিবীতে বিবমিষায় ভরে ওঠা হুল্লোড়ে ক্ষুদ্র নক্ষত্র লাপাত্তা হয়ে গেলো


...........................................................................


আফটার মাদারহুড

*

আম্মা জানে আমি আম্মার ছেলে। আমি জানি আম্মা আমার মা। আম্মার দুঃখ আমি জানি না। আমার দুঃখও আম্মা না। দুঃখ দুঃখের মা ছেলে হতে পারে না?


(২০১৯-২০২০)










একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন