৫ আধুনিক কবির ১০ টি প্রেমের কবিতা

শ্রী জাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২টি প্রেমের কবিতা



 দিযা

তোমার শোক নিবিড় খুব।

আমার শোক বিজ্ঞাপন।

তোমার দিন অতল ডুব।

আমার স্রেফ দিনযাপন। 


তোমার মন উজান বায়।

আমার মন হাটবাজার। 

তোমার চাল আতপ-সায়।

আমার চাল, হাত-পা যার। 


তোমার চোখ সদর্থক।

আমার চোখ সন্ধানী। 

তোমার ভয়, হারায় শ্লোক।

আমার ভয়, কম জানি।


তোমার মুখ অপার ন্যায়। 

আমার মুখ চায় প্রচার।

তোমার নেই অপব্যয়। 

আমার নেই দায় মোছার।


তোমার ধ্যান তপস্যায়।

হঠাৎ হয় রাষ্ট্র মেঘ...

আমার সব খবর যায়

তোমার দূর আশ্রমে। 


তোমার শোক নিবিড়। ঠিক।

আমার শোক বিজ্ঞাপন।

তোমার থাক শিবির। দিক।

আমার থাক দিনযাপন। 

আমার স্রেফ দিনযাপন।




ন্দি

কিছুতেই পাঠায় না তার মন

যেখানে অসহ্য সংকেত 

কবেকার বকেয়া লণ্ঠন 

জ্বেলে দেয় বিকেলে গমখেত। 


আমাদের পুরনো সেই দ্বীপ

যাতে নেই জাহাজ বাঁধার চল,

আমাদের আয়নাভাঙা টিপ

কুলোকের চক্ষে নেওয়া জল... 


সে এদের দাম দেবে না, বেশ। 

কিছু তো বলতে পারে তাও, 

যে-প্রেমে বিষাদও অভ্যেস

তাকে কি দোষ দেবে তোমরাও? 


বোঝে খুব জোনাকি বিদ্যুৎ 

বিপথে আসা-যাওয়ার নাম, 

না যদি ধরতে পারে খুঁত,

আমি ঠিক বদলে দেবো খাম। 


চিঠি নেই। ভরাডুবির দিন।

ছাপা হয় ধারাবাহিক শোক। 

সে ছিল নাটকে নন্দিন, 

ইদানীং বিক্রি করে চোখ।


না পাঠাক কিছুতে তার মন।

আমিও ভালবাসার শেষ। 

ভেসে যায় বকেয়া লণ্ঠন...

সে এদের দাম দেবে না, বেশ।





মতিয়াজ মাহমুদ এর ২টি প্রেমের বিতা



কা গ জে  প্রেম

চোখ থেকে জল পড়ে জল থেকে যদি
ভেসে ভেসে চলে যাই মাছরাঙা নদী
সেখানে কি পাবো আমি কোন খড়কুটো
পেলে ঠিক ধরে নেবো হাতে একমুঠো।

তাকে ধরে চলে যাবো রোদে পোড়া দ্বীপ
হাতে ধরা কুটো আর হাতে ধরা ছিপ
হোক না প্রবাল তলে তরুণীর বাসা
ছিপ গেঁথে তুলে নেবো তার ভালোবাসা।

তার আসা তার বসা তার চলাচল
চলে গেলে ভেসে যাবো ভেসে ভেসে জল
জেনে নেবো কে আপন কে আসলে পর
ডুবে  যদি যাবো তবু হাতে থাক খড়।

কে কোথায় ডুবে যায় কোথায় যে তীর
মাছরাঙা নদীতে সে তরুণী কুমির!




ভা লো বা সা র ক বি তা

রা যাক সাত জুলাই। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। লোকজন পথ

খালি করে উঠে গেছে। দোকানের সামনের ছাউনিতে। দাঁড়াবার

জন্য আমিও একটা দোকান খুঁজছিলাম। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।

একটা স্টেশনারি দোকান।

ধরা যাক দোকানের সামনে তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে। আমি ভাবলাম

মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে! কী বলে জানি শুরু করেছিলাম?

খুব বৃষ্টি হচ্ছে/এত বৃষ্টি যে কোথা থেকে আসে- এরকম কিছু?

দেড় বছর পর শোনা গেলো তোমার বাবা আমাকে মেনে নেবে

না। আমি তখন মরে যাবার কথা ভাবছিলাম। তুমি ভাবছিলে

পালিয়ে যাবার কথা। আমরা গিয়েছিলাম সুন্দরবন অথবা

রাঙামাটির পাহাড়ে। তোমার বাবা কী মনে করে যেন

আমাদের ফিরিয়ে আনেন। ধরা যাক উনি মেনে নিয়েছিলেন।

বা ধরা যাক সাত জুলাই। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। লোকজন পথ

খালি করে উঠে গেছে। দোকানের সামনের ছাউনিতে। দাঁড়াবার

জন্য আমিও একটা দোকান খুঁজছিলাম। একটা স্টেশনারি দোকান।

ধরা যাক দোকানের সামনে তুমি না—অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আছে।




ব্রাত্য রাইসুর টি প্রেমের কবিতা




পা র মি তা 

ব মায়া ছিন্ন করে অনিবার্য বুদ্ধিমান সন্ধ্যার বাতাস

চক্রাকারে আরো ছুটতে চায়;

যেন সকল লোকের সঙ্গে একবার দেখা হলো এ মরজীবনে;

যেন একটি কবিতা আমি লিখে রেখে ছিঁড়ে ফেলে ভুলে গিয়ে দেখেছি জীবনে;

মুগ্ধতার পাশে তুমি টুলে বইসা কোন কথা বলো?

পায়ের ওপরে থাকে পা?

দেখো

দূরে দূরে বৃত্তাকারে ঘুরিতেছে

পাতা

পাতার মগডাল

আর পাখি আর

বৃক্ষ আর

শাখা আর

ঘাসের অগ্রভাগ ঘুরে মরতে চায়–

ওরা দেখতে চায় তোমার কথার স্পর্শে প্রতিবেশ

কেমনে বদলে যায়!

এই সন্ধ্যালগনে যারা

আরো যারা যারা আসবে

দূর থেকে কাছ থেকে উর্ধ্বাকাশ হয়ে

তারা চক্রাকারে নামিতেছে

ঘুরিতেছে

থামিতেছে,

প্রাগৈতিহাসিক কোনো বিরহের মতো–

তারা নামবে কি?

থামবে কি?

এইখানে

যেথায় কবিতা লেখে গান গায় ছবি আঁকে

বিষণ্ন বিপ্লবী ওই বালকমণ্ডলী

ওদের সঙ্গে থাকো,

হাসি হাসি–।

ভারি ভারি সৃষ্টির চিন্তায়

যেন ওরা একটি দশক

তোমার মুখের দিকে

চেয়েচিন্তে পার করতে পারে।




গা শা লি

(সানজিদা জুঁইকে)

গাঙ হালিক, ও গাঙটি শালিক,

লাগতেছে কেন ডর?

আযাযিল নহে, ভ্রমণকারিনী—সাদা রঙ তবু

বিষদাঁত নয়। বন্দুক নাই। মাংসাশী নন।

ব্যাকপ্যাকে রাখা

মহাসাগরের ঢেউ।

পাখি দেখতেই

ক্যামেরা সঙ্গে—

ট্রাইপডও আছে—

ভোরবেলা নেমে এসেছেন ধরাধামে। সঙ্গীরা দূরে

খালের জলটি কুয়াশার রঙে রাঙা

ভোরবেলা ভালো লাগে

ভোরবেলা তাই ভালো লাগা ভালো লাগে।

সঙ্গীরা দূরে, পাখি আর পাখি দেখাদেখি দ্যাখে

ছিমছাম আর খুবই ন্যাচারাল

সিগারেট মুখে—হাসি হাসি মুখ

সিগারেট খান তাই হাসছেন?—নহে

হাসির কারণ প্রকৃতির কাছে আসা—

দূরে নৌকাও, হাসি মুখ দেখে দেখে

মাঝিরাও হাসে

খালের কিনারে বাঁশের মিনারে শালিক পাখির বসা

কবিতার মতো, ভ্রমণকারিনী ক্যামেরায় তুলবেন—

পাখি তাই বসে আছে—

ভোরবেলা থেকে—ছবি তোলা শেষ—তবু পাখি বসে আছে।

ঢাকা, ২/৯/২০১০





তাসলিমা নাসরিনের টি প্রেমের কবিতা





হা

বার আমি তোমার হাতে রাখবো বলে হাত
গুছিয়ে নিয়ে জীবনখানি উজান ডিঙি বেয়ে
এসেছি সেই উঠোনটিতে গভীর করে রাত
দেখছ না কি চাঁদের নীচে দাঁড়িয়ে কাঁদি দুঃখবতী মেয়ে !
আঙুলগুলো কাঁপছে দেখ, হাত বাড়াবে কখন ?
কুয়াশা ভিজে শরীরখানা পাথর হয়ে গেলে ?
হাত ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম বর্ষা ছিল তখন,
তখন তুমি ছিঁড়ে খেতে আস্ত কোনও নারী নাগাল পেলে।
শীতের ভারে ন্যুব্জ বাহু স্পর্শ করে দেখি
ভালবাসার মন মরেছে, শরীর জবুথবু,
যেদিকে যাই, সেদিকে এত ভীষণ লাগে মেকি।
এখনও তুমি তেমন আছ। বয়স গেল, বছর গেল, তবু।
নিজের কাঁধে নিজের হাত নিজেই রেখে বলি :
এসেছিলাম পাশের বাড়ি, এবার তবে চলি।





ভু প্রে মে কে টে গে ছে তি রি ন্ত 


ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু
এখনো কেমন যেন হৃদয় টাটায়-
প্রতারক পুরুষেরা এখনো আঙুল ছুঁলে
পাথর শরীর বয়ে ঝরনার জল ঝরে।
এখনো কেমন যেন কল কল শব্দ শুনি
নির্জন বৈশাখে, মাঘ-চৈত্রে-
ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু
বিশ্বাসের রোদে পুড়ে নিজেকে অঙ্গার করি।
প্রতারক পুরুষেরা একবার ডাকলেই
ভুলে যাই পেছনের সজল ভৈরবী
ভুলে যাই মেঘলা আকাশ, না-ফুরানো দীর্ঘ রাত।
একবার ডাকলেই
সব ভুলে পা বাড়াই নতুন ভুলের দিকে
একবার ভালোবাসলেই
সব ভুলে কেঁদে উঠি অমল বালিকা।
ভুল প্রেমে তিরিশ বছর গেল
সহস্র বছর যাবে আরো,
তবু বোধ হবে না নির্বোধ বালিকার।



জল আহমেদ এর টি প্রেমের কবিতা



ঝু মু

🌼
ধ্যরাতে ঘুমিয়ে গ্যাছো যখন
আকাশ জুড়ে ভরাট তারার খেলা
চাঁদের আলো ভাগ হয়েছে তখন
অন্ধকারে মধ্যরাতের বেলা।


ঝুমুর তুমি বাইরে চলে আসো
বেলকনিতে ঠেস দিয়ে পিঠ হাসো
চাঁদ ছুঁতে যাও ছাদে খালি হাতে
তোমায় দেখবো চাঁদের বদৌলতে।


সারা পারা মাত করেছে কুকুর
আমি তখন মিস করছি ঝুমুর
ঠান্ডা কোমল শিশির ঠেলে পায়
ঘাসগুলো সব একদিকে কাত হয়।


গাছগুলো সব দাঁড়িয়ে আছে ঠায়
চক্ষু রেখে অপর গাছের গায়
তড়িৎ—খুটি দাঁড়িয়ে  যেমন চোর
বিল্ডিংগুলো সম্মুখে  করজোড়।


গলির বাইরে প্রাণহীন যাসব দাঁড়িয়ে
প্রাণীর মতোন আমি আর সব কুকুর
তোমার দিকে ছায়াগুলো হাত বাড়িয়ে 

ভিষণ তোমায় মিস করছি — ঝুমুর!




ভে ঙে গ্যা ছে  রো জা

লজ্জায় পিংক হয়ে গ্যাছে আফরোজা;

ভেসে ওঠে চোখে সবভুলে যাওয়া নয় সোজা!

যেন ফিরে গ্যাছে ষোলো বছর আগেরটিনের টঙে

চোখ দুটো ছলছলগড়িয়ে পরছে জল  স্যাড সঙে

হাত দুটো চুমু খেয়ে ধরে বসে আছে সাইয়্যেদ 

জিহ্বের লালা শুকিয়ে যায়আঁকড়ে ধরে পেটের মেদ

চটকে যায় নহরী মধু দিব্যজ্ঞানে;

দুজন বেহাল ভাবে আলিঙ্গনে

খাচ্ছিলো চুমু শুধু খাবার কোথায়?

কাগজটা ছিড়ে গেলো কালির থাবায়

নগ্ন মাশরুম যদি সূর্যের কঠিন প্রদাহে বাঁচে

একটা কামুক ফুল ঝুলে ছিলো ডালিমের গাছে

আফরোজা সেটা দেখেনিভেবেছে প্রেম এতই সোজা

ভালোবাসি বললেইকমে যাবে যাবতীয় সব বোঝা

 

ভাঙা চেয়ারে সাথে ভেঙে গ্যাছে মনযার কাছে তাঁর মন বিশাল বোঝাকেউ জানে না ভাগ্য লিখেছে কিকার খোদা!

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন