ঘাস — কাসাফাদ্দৌজা নোমান

 ঘাস

কাসাফাদ্দৌজা নোমান 

ঘাস কাটতে গিয়ে খেয়াল করলাম আমার পাশে যিনি মনোযোগ দিয়ে ঘাস কাটছেন তিনি গ্যালাক্সির প্রধান দার্শনিক ইমতিয়াজ মাহমুদ। তাঁর ঘাস কাটা খেয়াল করে উপলদ্ধি করলাম পৃথিবীতে ঘাস কাটা ব্যতীত আর কোনো কাজ নেই। যেন বিধাতা তাকে একটা কাস্তে হাতে দিয়ে বলেছেন, 'যাও ইমতিয়াজ, পৃৃথিবী থেকে ফেরার পথে কচি কচি সবুজ ঘাস নিয়ে আসবে'।

তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমরা ঘাস কাটছি কেনো?’

আমার প্রশ্নে তাঁর কিছু যায় আসলো না, তিনি ঘাস কাটা না থামিয়েই উত্তর দিলেন, ‘আপনারটা আমি জানি না’।

-আচ্ছা। আপনি কেনো কাটছেন?

-জানি না।

.

মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এমন ভাব ধরেছে যেন নিজেরটা জানে, শুধু আমারটাই জানে না। জিজ্ঞেস করলাম, ‘প্রথমে বললেই হতো যে আমি জানিনা। আপনারটা জানিনা বলার কী দরকার ছিলো?”

তিনি তখনো সর্বস্ব দিয়ে ঘাস কাটতে কাটতে বললেন 'নিজের ব্যর্থতা নিজেকে স্বীকার করতে হয়। এমনিতেই ঘাস কাটছি, তার উপর জানিনা কেনো কাটছি। এরমধ্যে আপনি আশা করেন আপনার ব্যর্থতার খবরও আমি দিবো? আপনার ঘাস না কেটে, খাওয়া উচিত।

-আচ্ছা।

.

ইমতিয়াজ মাহমুদ আমার প্রিয় কবি এবং গ্যালাক্সির প্রধান দার্শনিক। তিনি বলেছেন ঘাস খেতে। এমন একজন লোক নিশ্চয়ই না বুঝে এমন উপদেশ দেননি। তাই তেমন প্রতিবাদ না করে ঘাস খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু বিপদ হলো এর আগে আমি কখনো ঘাস খাইনি। কচি কচি সবুজ ঘাস দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না এগুলো কাটবো নাকি খাবো? যদি খাই তবে কিভাবে খাবো? কেটে খাবো? নাকি এমনি এমনি খাবো?

.

আমাকে অমানবিক সমস্যায় ফেলে ইমতিয়াজ মাহমুদ তখনো ঘাস কেটে যাচ্ছিলেন নেশার মতো।  তাঁর বাবা-মা এই দৃশ্য দেখলে হয়তো ছেলে নেশা করে বলে রিহ্যাবে ভর্তি করাতে চাইতেন। নিশ্চয়ই ইমতিয়াজ মাহমুদ তাতে রাজি হতেন না। ঘাস না কেটে উনি এই মুহূর্তে কোথাও যাবেন না।

আবার জিজ্ঞেস করলাম, 'বাড়িতে ঘাস কাটার ব্যাপারে কী বলেন?'

এবারো তিনি আমার প্রশ্ন শুনে তেমন বিকার দেখালেন না। তবে প্রশ্নের উত্তর দিলেন, 'জনৈক কবির কথা বলি। উনাকে বাড়িতে সফল মানুষ হিসেবে চিনেন। বলি জনৈক কবি ঘাস কেটে কেটে এমন সাফল্য পেয়েছেন। সে থেকে বাড়ি ফিরলে বাবা জিজ্ঞেস করেন, 'আজকে কতোটকু ঘাস কেটেছিস?'

মা শরবত বানিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘কাল আরো বেশি করে কাটিস বাবা’

.

এদিকে আমার বাড়িতে বিষয় ভিন্ন। ইমতিয়াজ মাহমুদকে সফল ব্যক্তি হিসাবে চিনেন। তাকে বললাম, ‘আমি আমার ঘাস কাটার কারণ পেয়েছি।’

তিনি কোনো কথা বললেন না। আমিও তাকে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম। ইমতিয়াজ মাহমুদ ঘাস কাটুক, আমি একটু বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।

.

২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন