১
ব্যথা আমি রাখবো গোপন, জানবে না তো লোক
তোমরা আর কী বুঝবা— ভাই হারানো শোক
২
তো এইভাবে— আরো কিছুকাল
দেখবো ভাবি
একই ফুলের দুই রঙ নিয়ে বেঁচে থাকা
*************************
ক্লাউন হাঁস | অ্যালেন সাইফুল
আমি এক রঙিন ক্লাউন হাঁস। দুহরের এই সার্কাস মঞ্চ— বিষণ্ণ, রোমাঞ্চহীন— যেখানে আমি উঠে দাঁড়িয়েছি, ক্ষুধা পেটে, কৌতুকের সুরে গলা বাড়িয়ে, খুঁজছি— কালো শামুকের পোনা, পাঁকা ধানের ক্ষেত, শেয়ালের নড়ে ওঠা— নিখুঁত মূকাভিনয়ে— যেনো আমি এমন— গোয়ায় ব্যথা নিয়ে বাঁচতে চাওয়া এক তুমুল অগাচোদা, প্রশ্নহীন— যে ভুলে গিয়েছে পিতার শোক, দাহানে শান দেবার বিভৎস শব্দ আর তার মাবুদের ব্যবসায়িক মন।
দুহরের এই সার্কাস মঞ্চে, ক্ষুধা পেটে, বিষণ্ণ এবং রোমাঞ্চহীন এই আমি এমন জগা— পেটপূজার প্রিপারেশনে তোমাদের দ্যাখাবো যতো বালমারি খেলা।
দেয়াল || অ্যালেন সাইফুল
দেয়ালের ওপাশে রোদ শরীর ছুঁতে পারেনা বহুকাল
উত্তর না খুঁজে প্রশ্ন নিয়ে আর্তনাদে কেটে যাচ্ছে পৃথিবীর চমৎকারতম দিন এবং রাত-
ফ্যাঁকাসে
ছবিহীন
নির্মম।
মেঝেতে ঘুমিয়ে পুনর্জন্মের লোভে একরাশ ছাই;
সর্বোৎকৃষ্ট একটা গোধূলি সেটা- শনিবারের।
দেয়ালে দেয়ালে হৃদয়বিদারক অপেরার সুরে অগ্রিম মৃত্যুসংবাদ
একজোড়া হাতে
একজোড়া চোখে
কবিতা পুড়ছে
বালুঘর ভাঙছে
হাসছেন প্রতারক;
কদ্দিন বাদে সে ঠিক বলা সম্ভব নয়।
দেয়ালের ওপাশে রোদ শরীর ছুঁতে পারেনা বহুকাল
শীতকাল
খুব শীতকাল।
অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ঘুমের ওষুধে বিরক্ত পরমেশ্বর
অনন্তকালের আগুনে তবে জ্বলসে যাক শীতকাল
ঘৃণায় বাঁচার চেয়ে পালিয়ে যাওয়া যেখানে সর্বোত্তম।
মায়ের স্তনকে না বলুন || অ্যালেন সাইফুল
স্তনের মত একটা অশ্লীল জিনিস
প্রতিটা মা তার সন্তানের মুখে পুরে দেয়
আন্দোলন হয়না।
অথচ, গ্রীষ্মের এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায়
কোনো কবি যখন কবিতায় লেখে,
‘মায়ের স্তনে মুখ লুকিয়ে
বহুবার আমি সমুদ্রভ্রমণে গিয়েছি’।
আপনারা তখন রাস্তায় নামেন
স্লোগানে গলা ফাটান
প্রকাশকের মায়ের স্তন নিয়ে লুডু খেলবেন বলে ভাষণ রাখেন
চাপাতি নিয়ে কবিকে খুঁজতে থাকেন;
স্তন নিয়ে কবিতা লেখা?
মায়ের স্তন?
শালার এত সাহস?
ঘাড় থেকে মাথা নামিয়ে দেবো আজ!
শ্রদ্ধাভাজন শ্লীল সমাজ,
কবির ঘাড় থেকে মাথা নামানোর আগে
আপনি বরং মায়ের স্তনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করুন।
প্রতারিত পাখি || অ্যালেন সাইফুল
প্রতিশ্রুতি আমাকেও দিয়েছিলেন
কম নয়
বরং ঢের বেশি।
সবকিছু এত দ্রুত ভুলে যেতে নেই
জানেন তো,
কবুতর এবং শকুন
একজন আরেকজনের শূন্যস্থান পূরণ করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়নি
অথচ, দুজনেই পাখি।
প্রতিশোধ || অ্যালেন সাইফুল
ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে
বোনের অর্ধনগ্ন লাশ, সায়ানাইডের বোতল, একটা চিরকুট।
চিরকুটে লেখা—
'এ ঘরে ঈশ্বর ছিলো না, মাষ্টার দা' ছিল'।
ধর্ষণ আজকাল শিক্ষা, যার দায়িত্ব পালন করে গৃহশিক্ষক—
কৃতজ্ঞ হলাম।
বোন সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে—
মন খুলে হাসলাম।
ফ্রিজ খুলে গোটা পাঁচেক মিষ্টি গিললাম ক্ষুধার্তের ন্যায়—
খুশির খবরে খেতে হয়।
গোটা কয়েক ঠুসে দিলাম বোনের মুখেও—
এটা অভ্যাস।
সংবিধান অনুযায়ী ধর্ষিতা এবং স্বেচ্ছামৃতদের ময়নাতদন্ত হয়
বোনের জন্য তীব্র মায়া;
পুড়িয়ে ফেললাম চিরকুট
চোখ বেঁধে ধুয়ে ফেললাম বোনের রক্তাক্ত যোনি।
প্রমানহীন সকল মৃত্যুই স্বাভাবিক মৃত্যু; ময়নাতদন্ত হয় না—
বাঁচা গ্যালো।
ধর্ষিতাকে কবরে নামানোর আগে শেষবার গোসল করাতে গিয়ে
জমিরণ চাচী চেচিয়ে বোললেন,
‘সর্বনাশ! মাইয়া তো রেপ হইছে!'
যা শালা ! মাথায়ই আসেনি—
ধর্ষকের নখের আঁচড়ে,
দাঁতের কামড়ে ছিলে গ্যাছে ধর্ষিতার গলা, স্তন এবং নাভি;
খিস্তি দিলাম নিজেকে।
পুলিশরা দায়িত্ব পালনে সচেতন বিধায়
বোনের শরীরের সর্বশেষ পরমেশ ছিলো তিন জন ডোম।
আমার ধারণা, তাদের কেউ একজন আক্ষেপ কোরে বোলেছিল;
‘ইশ! এমন একটা মাল জিন্দা অবস্থায় পেলে!'
অ-বিচার যেখানে দেশের প্রধান সংবিধান
সেখানে বিচারের স্বপ্ন দ্যাখে- মূর্খ।
নীলরঙা সন্ধ্যায় ধোঁয়ায় উড়িয়ে বোনের শোক
দেয়াললিখনে একটা শব্দ কুঁড়িয়ে পেলাম একদিন; ‘প্রতিশোধ’।
একরাতে মাষ্টারের বোনকে ধর্ষণ কোরে
ফেলে রাখলাম রাস্তায়— নীল নকশায়।
লোকমুখে যখন সে ধর্ষণের খবর ভেসে বেড়ায় বাতাসে
আমি দেবশিশুর মত হাজির মাষ্টারের সামনে
বোললাম, ‘আমি আপনার ধর্ষিতা বোনকে বিয়ে করতে চাই।'
...বাসর রাতে স্ত্রীর বুকে মাথা রেখে শুনেছিলাম সেই ধর্ষকের বর্বরতার গল্প
হাসি পায়; আমাদের প্রথম সঙ্গমে আমার স্ত্রী সেই ধর্ষণকারীকে চিনতে পারেনি।
উল্লেখ্য, বোনের বিয়ে সম্পন্ন হতেই মাষ্টার আত্মহত্যা কোরেছিলো।