পাখি ও পোস্টঅফিস
আমি একটি ব্ল্যাকবোর্ডকে সাদা চকের লোভ দেখিয়েভুলে গেছি আমার ডাস্টারজীবন। সুন্দরবনে জারুলগাছে বসন্তবৌরি এসে হাওয়ায় মেলায় গলা। কাদা,দাগ, ময়লার মতো কত কিছু মুছে দিতে জানতে হয়,কত কিছু মুছে যায় জলে— বাতাসে— আগুনে।রোদের মতো একটি জঘন্য কাগজ হাতে আমি কেনখুঁজে চলেছি পাখি ও নদীদের যৌথ পেন্সিলস্কেচ!আর কবে হাওয়াকাল এসে দাঁড়াবে আমাদেরঘুমশালায়?ঘুমমুদ্রাগুলি
কবুতরের কার্নিশে ফেলে রাখা আমার বায়বীয় ঘুমমুদ্রাগুলি ক্রমশই ঘাসচড়ুইয়ের দখলে চলে যাচ্ছে। দেয়ালঘড়ির বুকের ভেতর এক বসন্তকালীন লেবুবাগান। ঘুমপাখিরা জেঁকে বসেছে সেই ঘ্রাণবতী জলের শহর। প্রাচীন লৌহনগরী আর পাহাড়ের পাদদেশে একলা পড়ে আছে ভুমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র- যার গায়ে নগ্ন দেবীদের প্রতিলিপি; অঘোষিত নাচমুদ্রা। পেতলের দেবীদের ঋতুমতী হবার প্রসঙ্গে আমার কিছু জানার নেই। এসব রাতে তবু শাদা অক্ষরে লেখা কামুক রাত্রির ভাষা; ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলবার পর- ব্যক্তিগত ঘুমকে কালোকাগজের টুকরোর মতো ছিঁড়ে ফেলা ভালো।
শীতকালীন পাখিঘুম রোধকল্পে
জলের ভিতরে শুয়ে থাকে জলপদ্ম। বুকের ভিতরপ্রাতকালীন ধুসরসবুজ ওমসংশয় নিয়ে সে আংশিকশীতার্ত। এসব আর্তি আমার কানে এসে লাগে;কোন একটা জলপিপিকে একথা জানানো প্রয়োজন।বাঘ্রশাবকের জমানো উষ্ণতর হাওয়ার শিহরনযে পৌঁছে দেবে, বিভ্রান্ত ওমের ভিতর। গমক্ষেতথেকে দৃশ্য খুঁটে খেতে খেতে হাওয়া হলো পাখি।হাওয়ারোগের চিকিৎসা নিতে বিকেল এসে দাড়িয়েথাকে হাসপাতালে। শীতকালে ডানকানে শুনি না,যেকারনে বুকের ভিতর বসাই লালদুর্গ পোস্টঅফিস।আর হলুদ বিকেলের প্রযোজনায় ক্রমাগত শীতাচ্ছান্নতায়স্বল্পদৈঘ্যের পাখিদের মুক্তদৈঘ্যের আকাশ থাকা সমিচীন।
অলৌকিক আম্রকানন
তোমার বারান্দাকে একইসাথে বিকেলের ভাঁজপত্রআর একটি ছিপনৌকা বলে ভ্রম হয়। ইচ্ছে করেইরোদবতী নদীটির কেউ কোন নাম রাখেনি। ওখানেসাড়ে তিনশো শঙ্খশালিক এসে সমাবেশ করে; যাদেরপ্রত্যেকেরই আমার নামে নাম। এখানে তুমি একঘ্রাণবতী নারী- ডাবের জলে স্নান করে এইমাত্র এসেবসেছ বেতের মোড়ায়। আর যেসব পুরুষশালিকদেখে ফেলেছে তোমার স্নান- গোপনে; তারা এতক্ষনেউন্মাদ হয়ে গেছে-অনিচ্ছুক তারার আঙ্গুল ছুঁয়ে।
রিফিউজি ঘোড়া
তোর কাশবনকে বলবি শীতকালকে একটা চিঠি লিখতে, যে চিঠির ভাষা হবে কাঠকয়লার মতো। মাছরাঙার মাংস দিয়ে মদ হয়না; এই গল্প ভুলে গেছে দুপুররাতের চন্দ্রবোড়া। এখনও ফোঁসফোঁস আওয়াজকে আমার যথারীতি বাতাসপ্রসূত হাওয়াই মিঠাই মনে হয়। বিশ্বাস রাখবি, শুঁয়োপোকার পিঠে চড়েই একদিন সুয়োরানী পার হবেন- সকলপ্রকার অজানা অধ্যায়; ঘুম সংক্রান্ত মিথ আর রাত্রিকান্ডের দেয়াল।আমিই সেই লালঘোড়া; তোদের আখড়া থেকে আফিম চুরি করেছিলাম।বনের ভেতর হরিন দেখতে গিয়ে
পাতার কোন ইশারা নেই, যেহেতু পাতা নিজেই এক ইশারা- বাতাসের কানে কানে। পাখির ডাক শুনে বিভ্রান্ত হবার দিন, জলাধারে ফেলে দিতে দিতে ভাবি- আমি এখানে কেন? পাতার বুকে ছাপ এঁকে এঁকে বনের ভেতর মিশে গেছে যে চপলা- কী যেন তার ডাকনাম! তার চোখের ভেতর ছিল এক অনুন্মোচিত যাদুঘর, নক্ষত্রের ঘুমরহস্য। পাতার শিরায় লেখা পাখিদের দিনলিপিতে লিপিবদ্ধ মর্ম-আঁচড় থেকে জেনেছি এই ঘুমহীনতার পদাবলি। শিকারীর দৃশ্যভীতি লেগে আছে পাখির পালকে- নির্জনতা হাই তুলে পেছনে ফিরে তাকায় আবার হেঁটে যায়, বাকলের অমোঘ টানে। বাংলোর বুকের ভেতর যে মলাটবদ্ধ ছায়া তার কোন চুমুঅভিজ্ঞান নেই। আমার কোন জনপদ নেই; আমার কোন ইতিহাস নেই। আমার করতলে আছে হাওয়ার রোদঘরে আঁকা যাদুঘরের গুপ্তনকশা। জলাধারের নিকটবর্তী হয়ে দেখি আর কোন পায়ের ছাপ নেই, যদিও বাঘ ছাড়া অন্যকোন বন্যপ্রানীর সাঁতরাবার অভিজ্ঞতা থাকেনা। এই দেখছি দেখব বলেও আমার আর যাদুঘরের কুয়াশামন্ত্রে দীক্ষা নেয়া হয়না। আর বনের ভেতর হরিন দেখতে গিয়ে- দেখি, দাঁড়িয়ে আছি মনের ভেতর।
হাওয়ামোড়ক
আজ একটি ঘাসিনৌকা আমাকে জলাধার মধ্যবর্তী ভাসমান ঘাসজাহাজে স্ট্যান্ডবাই রেখে গেছে। নৌকার মাঝি ও আমার মধ্যে কোন জানাজানি নেই। সে সোনারতরী পড়েছে কি না তাও জানা নেই। আজ সারাবিকেল সোনারতরী ভাবনা আমাকে সঙ্গ দিয়েছে। উপরথেকে যেসব ভুবনচিল আমার উপর নজর রাখছিল। ভুলক্রমে তারা আমার উপর ড্রপআউট করেছে জীবনানন্দের ছায়া। জলের উপর যেসব সাদাবক উড়ে যাচ্ছিল, তাদের ঠোঁটে লেগে ছিল মাংসভক্ষনের হাসি। মাঝ আষাঢ়ের বিকেলবেলার সূর্যটি মেঘকে ভয় পাবার পূর্বেই সূর্যটি মেঘের বুকে চাঁদ হয়ে শুয়ে ছিল। দূর থেকেকাঠবারান্দার বালিকা ভেবে আমি তাকে শিসও দিয়েছি। ইথারে সেসব গল্প ছড়িয়ে দিলে পর, আগামী পৌষে সেসব গল্প রুপকথা হিসেবে ছড়িয়ে পড়বে বাতাসের পাঠাগারে। সেসব কথা জানবেনা চাঁদের মেয়ে, তার অবৈধ বাবা সূর্যদেব এমনকি ছায়াদানকারী চিলটির অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের আকাশবিষয়ক ভাবনা।
শাদাঘড়ি
একটি ব্যক্তিগত বিকেল পাবো বলে পাঠ করিবিশ্বপ্রেমিকদের জীবনচরিত। শাদাঘড়ির একনম্বরকাঁটার জন্য আমার বড্ড দুঃখ হয়। আর নিজস্ববিষাদপুষ্প গুঁজে দিয়ে আসি ঘাসফড়িংয়ের চলারপথে। একটি হলুদ বিকেল বস্তুত কত দুরে থাকে?একটি দ্বিচক্রযান থেকে, বেঞ্চের দ্বৈতায়ন থেকে!সেই চৌদ্দবছর বয়স থেকে জানি চাঁদের বুড়ির কোনমুখস্থ ছড়ার দিনকাল নেই আর ব্যক্তিগত নদীরপাশে হলদেসবুজ বনাঞ্চল আমাদের উপস্থিতিমিস করে। কে তুমি সহজ গানের ভিতরে লুকিয়েরাখো তোমার নিজের অনুপস্থিতি? জানি এখানেইতৈরী হবে রোদের অক্ষরে লেখা বিকেলমাত করাযৌথপদ্য।
অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ
ভালোলাগা একটা বেড়াল;সম্মতির সিংহদ্বার পেরোলেই-সে বাঘ হয়ে যায়।
শীত পরবর্তী সচলতা
ব্যক্তিগত জয় পরাজয় নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে শীত চলে গেছে। তার ব্যস্ততা মুগ্ধতা জড়তা আড়ষ্ঠতা স্বপ্নগ্রস্থতা স্বপ্নহীনতা ও স্পর্শকাতরতা স্পর্শ করেনি আমাকে। আমাকে স্পর্শ করতে পারতো ফালগুনের হঠাৎ যৌবনপ্রাপ্ত বাতাস। তারা আমাকে ছুঁতে চেয়েছিলো। আমিই মুখ ফিরিয়ে রেখেছি। লালপিঁপড়ের মৃত্যু আমাকে স্বপ্নহীন করেছে। নতুন পাতা গজাবার ইচ্ছে সম্বলিত পাতার নির্বাণপ্রাপ্তি আমাকে আশাবাদী করেছে। আমিতো কবেই ছুঁয়ে দিয়েছি তৃণলতার মন। শীত সকালের মুগ্ধতা পরবর্তী কুয়াশার হলুদ চাদর। ঘাসচড়ুইয়ের ডানার অন্তর্গত পালকের মতো,হৃদয়মাদুলীতে গুঁজে রাখি তার নামঅনাগত শীত সকালে চন্দ্রমল্লিকার ঘ্রাণ পাব বলে।
Tags
গ্যাব্রিয়েল সুমন