শ তে শব
সময় সমান্তরাল এবং বিষাক্ত, আমাদের জানালার পাশে বৃষ্টি নেই, বৃষ্টি নেই চিৎকার। এই সব আলুথালু চিৎকার ও শীৎকারে দম বন্ধ হয়ে আসে। স্মৃতির শাটার খুলে আমরা তিরস্কারের ফুল দেখি।
ক্রধ এবং তর্ক নিয়ে বাঁচা যায় না। ঘন ঘন মৃত্যু চাইলেও বাঁচা মরার সময়ে আমরা নার্সিং হোমে যেতে চাই। আমাদের খোঁজ নেন দায়িত্বরত ব্রাদার ও নার্স। তাদের মুখ যথেষ্ট মলিন। যেন মরে গেলে তাদের মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হবে। এই সমস্ত মলিনতা দূর করতে আমরা বাঁচতে চাই নিয়মিত।
বেঁচে আছি অথচ চারপাশ আস্থাহীন। হল্লা আর উপহাসে সবকিছু ঝাপসা হয়ে যায়। ঝাপসা হওয়া চারপাশ, ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস এসব মূলত ক্ষত। হৃদয়ের ক্ষত ঔষধ কিংবা মলমে সারে না। হৃদয়ের ক্ষত নিয়ে আমরা কার কাছে যাবো?
আমরা জানি আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই। পানশালা ও প্রেমের জন্য অর্থের প্রয়োজন। আমাদের চারপাশ অর্থহীন । অর্থহীন এবং অর্থহীন জীবন নিয়ে রোজগার করতে ভালো লাগে না আমাদের। ভালো না লাগলেও আমরা বাঁচতে চাই, কারণ- বাঁচাবাঁচি নিয়ে চারদিকে প্রচুর মিথ। এইসব, মোটিভেশনাল মিথ আমাদের ভালো লাগে।
বাঁচতে হবে, এটা একটা প্ররোচনা। এই প্ররোচনার ফাঁদে পা দিয়ে আয়নার দিকে তাকাই। আয়না নিয়েও প্রচলিত অনেক মিথ আছে। আয়নার ভেতর আবেদন আছে। আয়নার ভেতর নার্সিসিজম আছে।
আবেদন, মিথ এবং নার্সিসিজম আমাদের ভালো লাগে।
ভালোলাগা, মন্দলাগা এগুলো সমান্তরাল। মস্তিষ্ক কমপ্রোমাইজ শিখে গেলে হৃদয়ের পাশে বিভাজন দেখা যায়। বিভাজনের পাশে বকফুল ফুটে উঠে ধীরে ধীরে…
বেনামি মাস্তুল
চালতা গাছের ছায়া, ঝিরিঝিরি বাতাসের পর
শীত নেমে এসেছে পাহাড়ে।
আসমানি দেহে পুড়ে গেছে
বিবাহের সরু মেঠো পথ
সনাতন হিম পায়ে ঠেলে
গুটিসুটি হয়ে থাকা মেঘ
তুমি চিতাবাঘ হয়ে যাও
খেলাঘরে জমা রাখো কাগজের ফুল
যদি তার সন্মুখে দাঁড়াও
তবে কামজ্বরে নুয়ে যাবে
জাহাজের বেনামি মাস্তুল
স্যুররিয়াল দৃশ্য মুখোমুখি দাঁড়ানোর পর
চাঁদ আর জোছনা সেরে নিচ্ছে রেওয়াজ, হোস্টেলের ছাদে।
আমার ব্যাগ গোছানো শুরু, ট্রেনের টিকিট কেটে কোথাও চলে যাবো। কুকুর, আর বেড়ালের তাড়া খেয়ে পা ছড়িয়ে বসবো রাস্তায়; কুয়াশার দিনে কার্ডিগান রাখবো কাছে। প্রেমের আলামত দেখলে মুখোমুখি বসবো তার, ঈষৎ একান্তে; পুনরায় ঝগড়া হবে, ধাক্কা খাবো। লজিক পড়বো না, শুনতে থাকবো অডিও ক্যাসেট। সম্ভব হলে বেশি বেশি হ্যাবা হবো। কলিংবেল না চেপে দাঁড়িয়ে থাকবো। জোড়া জুতো থেকে ওলট-পালট করবো পা, পথ ভুল হলে অন্তরঙ্গ করবো আচার-নিষেধ।
মনে মনে বিবাহ ডাকবো। বিরহ এলে মাগরিবে উবু হবে মধু, সাধের বাছুর— ফুল আর ঘাস থেকে সরিয়ে নেবে মাথা।
তুমি বলবে, ফিরে তাকাবো না। ব্যাগ গোছাতে গোছাতে আমি বলবো, কোথাও যাবো না।
চিলমারী
ক.
(হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে…)
শীতকালে— দুপুর আরো ঝিমিয়ে গেলে—আমরা মা-মেয়ে বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে চুলে তেল দিতাম যখন ; তখন অঘ্রাণের রোদ আসতো দক্ষিণ থেকে। দক্ষিনে আস্ত একটা ব্রহ্মপুত্র। মা বলতেন, এমন দিনে আলোর কমলা রঙ খুব আস্তে আস্তে মলিন হয়, তারপর চালভাঙ্গা টিনের বাড়িতে মেজাজ চড়া করে শীত নামে
শীতকাল আম্মার কাছে মামাতো বা খালাতো ভাই-বোন গোছের কিছু একটা ; চিলমারিতে যার নানা বাড়ি। মখমল জামা পরে— রমনা বাজার থেকে গুঁড়ের জিলাপী কিনে সে আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসে
আম্মার আঁকাবাঁকা ব্রহ্মপুত্রে আমি আমি একবার ডুব দিয়েছিলাম, উঠতে পারি নাই
খ.
( কত রব আমি পন্থের দিকে দিকে চাইয়া রে…)
বড় হয়ে গেলে আত্মীয়রা ধূ ধূ ঈদের মাঠ হয়ে যান; আর নানা বাড়ির দরজায় ঝোলে তালা, যার চাবি হারিয়ে গেছে শৈশবে
স্নানের সময় যারা নদীতে রুপোর আংটি হারিয়ে ফেলেন তারা শৈশবের আত্মীয়।
যে আত্মীয়দের বাড়ি অনেক দূরে, যাদের ঠিকানায় চিঠি কম পাঠানো হতো, তারাও বাড়ি আসতেন শীতকালে।
শীতকালে বেড়াতে আসা আত্মীয়রা ম্যাজিক জানতেন।
নানীর ফাঁটা পায়ের গোড়ালিতে তারা মালিশ করে দিতেন সুখ। সেসময় রেডিওতে বাজতো গান। গানের ভেতর বইতো ছোট খালার বিবাহের বাতাস।
বিবাহের আগে ঢেঁকিতে ধান ভানতে ভানতে চকচকে শ্বাস নিতো মেয়েরা ।
হৈ হল্লার ভেতর ঘরে আসতো চাল, খৈ থেকে আলাদা করা হতো খুশবু। হাটে বসতো মেলা, ডুবো তেলে কড়া করে ভাজা হতো মাছ।
রাতের বেলা ভূতের ভয় ঢুকে যেতো কলপাড়ে। যেসব দিনে বড় মামা তালপাতার বাঁশি বাজানো শেখাতেন— সেসব দিনেই সরিষা ক্ষেতের আইল ধরে বাড়ির উঠোনে আসতো বিয়ের অতিথি।
শৈশবের চারপাশে যতটুকু রোদ, যতটুকু নানারবাড়ি, ততটুকুর নিচে বাঁধা থাকে দেখার ক্ষুধা। তেষ্টা পেলে ব্রহ্মপুত্র নদী জিয়ারত করা ছাড়া আর প্রিয় কোন গিঁট কোথাও বাঁধা নাই
গন্দম বিরিক্ষের তলে
দুনিয়ার হলুদে হলুদে
হাওয়ার সাথে ফের দেখা হয় আদমের।
এই মর্মে, খোপার কেশর সিজদায় গিয়া আউলায় গেলো।
আশ্বিনা বাতাস খুশবু ছড়াইলো নানান দিকে। দুরুদুরু পায়ে সিথানের পাশে এসে থিতু হইলো সে।
তারে নিয়া চরে বাধবো ঘর,
রাইতে ধরবো মাছ…
পিঁড়ায় বসে কুলের আচার
খাবো তার সাথে