নূরুল আলম আতিকের কবিতা সংগ্রহ

 


রেসিপি, বিনয় মজুমদার সুইটস্

লোকমুখে শুনে শুনে একদা আমিও ছানার জিলাপীর
প্রেমে পড়িলাম। ভেবে ভেবে বের করি লোকে যে
এতো তারিফ করে, নিশ্চয় তার কোনো হেতু আছে।
অতএব, এক সন্ধ্যায় বান্দা হাজির।

আহা! আগে কেন চেখে দেখিনি বিদয়দা?
কী মন্ত্রে বানিয়োছো এই মাল? সাধু-সাধু
মুখে তুলে তবে বুঝি বিড়াল কেনো দুধের
বাটিতে মুখ দেয়।

ও প্রিয় ছানার জিলাপী! তুমি ত রচিত বটে;
কী ক’রে তোমার আস্বাদ বিবরণ করি ? তত্ত্ব কিংবা
সংসার… কোথায় প্রমাণ তোমার ? খুঁজে খুঁজে
হয়রান আমি।
যাই হোক, আরো দুই দুইটা ছানার জিলাপী চুষে-
চেটে, আলতো কামড়ে সাবাড় করি। বলা ভালো,
আপনার ক’রে লই। সর্বাঙ্গে আমোদ। রস গড়ায়,
তাও চেটেপুটে নিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। বৃষ্টি মাথায়
বাড়ি ফিরি।

গামছায় গা মুছতে মুছতে টের পাই গৃহিনী আমার
দিকে তাকিয়ে কিছু আঁচ করে। ছানাপোন নিয়ে
ব্যস্ত হতে চাই যেন কোনদিন ছানার জিলাপী
চোখে দেখি নাই। পুত্র-কন্যা নিয়ে আহ্লাদ করি। তারপর
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবি, মনে মনে ভাবি
রস ও তার ছানার জিলাপী।

ওম্… শান্তি এসে বলে ‘ ভালবাসি, ভালবাসি
ভালবাসি থু থু থু।’

[১৯ মার্চ, ২০১২। উত্তরা, ঢাকা]


মানুষের বাগান

আমার জানালার পাশে একটি বাগান; সেই
বাগানে ফুল নয়, ফোটে মানুষ।
এই সব মানুষেরা ফোটার জন্যে এতোটা ব্যাকুল
থাকে ব’লে চেয়ে চেয়ে দেখি। দেখি তারা সকলে
মুখটাকে মুখোশ বানিয়ে তুলতে রীতিমত হুড়াহুড়ি
করে। হুলাহুলি করে। বাগানের ফুটতে থাকা মানুষ
দেখে ভালো লাগে। আর মনে মনে ভাবি ‘ মনা তুই ত
ফুটলি না! বাগানের পাশের জানালায় লতানো গাছ হয়ে
ঝুলে থাকলি শুধু।’

তবে এইসব মানুষের বাগান দেখে দেখে এতোদিনে
আমি নিজেও একটি বিছানা-বাগান বানিয়ে ফেলেছি। সেই
বাগানে একটি সিলিংফ্যান ফুটে আছে। সেখানে তিনকন্যা
ঘুরে ঘুরে নাচে। আর কী আশ্চর্য, তারা তিনজন এক সময়
এক হয়ে যায়, একাকার হয়ে যায়।

অস্ট্রিচে চেপে বহুকাল আগে একবার বরিশাল গিয়েছিলাম,
লাক্ষার মতো অসংখ্য নারীর রক্ত পেরিয়ে।

আজ আমার নাম- ‘আলতা মিয়া।’ মানুষের
বাগানের মালী নই, শুধুই দর্শক।

[২১ অগাস্ট, ২০১২। উত্তরা , ঢাকা]

 

ঘোড়ারোগ

(শ্রদ্ধাভাজন, মিলন ভাইকে)

চারিদিকে এতো এতো ঘাস, কচি সবুজ
সব ঘাসেরা চেয়ে আছে। কিন্তু, আমার যে
মানুষের ব্যারাম…কিছুটা আরাম হয়, যদি
লিভারটা ঘাসাঘাসি করি।

কিন্তু ডাক্তার জালান রিপোর্টগুলো দেখে গম্ভীর
মুখ ক’রে বললেন ‘ঢাকায় মাহমুদ থাকতে, তুমি ক্যালকাটায়
ক্যান!’ কী ক’রে বোঝাই সমীরণ ওই ব্যাটা নাকি বিখ্যাত গ্যাস্ট্রো-
এ্যান্ট্রোলজিস্ট। বদমাইশ। ডাক্তার মাহমুদ পয়লা
দিন লিভারটা টিপেটুপে নির্বিকার মুখে বললেন, ‘বাঁচবেন না
বেশিদিন।’ কী কথা! রোগীকে বলেন, ‘আয়ু কম।’ রাগে দু:খে
ঘোড়ার ঘাস কাটতে বের হই।…চারিদিকে এতো
এতো দালানকোঠা, ঘাসের খোঁজ নাই।

একদিন কুষ্টিয়ার এক কবরস্থানে বসে, কল্কিতে মুখে রেখে
ফটকাকে বললাম ‘রেজা ভাই একটা ঘোড়া
কিনতে চাই।’
ফটকা মিষ্টি হেসে বলেছিলো
‘ঘোড়া কিনতে চাইলে, না কিনে উপায় নাই।’

[২১ অগাস্ট, ২০১২। উত্তরা, ঢাকা]

 

জলপানি, জন্মসূত্র

ছোটবেলায় ইশকুলে বড় ভাব নিয়ে চলতাম,
বন্ধুরা জানে, আমি জলপানি পাই। লালপিপড়া-কালোপিড়া,
আমার সারাটা শৈশব জুড়ে গুয়ের গাড়ি। নীল আর্মস্ট্রং, এডুইন
অলড্রিন, চাঁদে মানুষের পায়ের ছাপ। কিন্তু এবেলায় শুধুই
রক্তের ছোপ। চাপ-চাপ রক্ত, বাঁশের গা বেয়ে রক্ত গড়ায়
হায়, রশোমন!

ডাকাতির ইচ্ছা হয়, প্রাগৈতিহাসিক
পাঁচির ঠেঙানি খেয়ে ঘাঁয়ের পুঁজ ছালায় বিছানায় মুছি। তবু
আমোদ, শীতাতুর এই ভোরের বেলায় যদি পাই এক টুকরা
রোদের ওম…ফের ডাকাতির কথা মনে আসে। লোভাতুর
চোখ চেয়ে আছে, রক্ত-নেশা মাখা; জন্মসূত্রের মানসাঙ্ক…
উফ্ মা! কেনো জন্ম দিয়েছিলি এতো রক্তপাত ক’রে
এতো রক্তাক্ত আমি নিজে প্রতিদিন।

[২২ অগাস্ট, ২০১২। উত্তরা, ঢাকা]


পায়ে-পায়ে

ক.

একটু জলের ছোঁয়া
আঙুলের ফাঁকে কাদামাটি
আকাশের দিকে চাই
চাহনির খোঁজে।

খ.

হোঁচট খাই, উফ্!
উপড়ে গেলো নখ।
পথটা যে অনেক দূরের।

গ.

সাধুর পায়ে ছাপ
আজ দেখলাম
সাত বছর বাদে ।

ঘ.

আগুন দেখে দেখে এতো মুগ্ধ!
সিগারেট ছাড়তে পারলাম কই?

ঙ.

বিনয়দা’র মতো আমারও বলতে
ইচ্ছা হয়‘গোলাপ নয়,
আমার সন্তানের পায়ের আঙুল গুলিই সুন্দর !’


টুকিটাকি

ক.

নিমিষে মিলায় সব
তবু, কেনো অনিমেষ
চেয়ে থাকা?

খ.

ইচ্ছা হয়,
একদিন বরফ কুড়াই
আগুনে পুড়াই।

গ.

চেয়েচিন্তে ভাত খাই না,
মদ।
তবু এতো শ্রমজীবী ভঙ্গি!

ঘ.

টাপুর টুপুর বিষ্টি পড়ে,
কালো ছাতা উপড়ে।
র‌্যাব আইতাছে ছে রে মনা
র‌্যাব আইতাছে।

ঙ.

পাতা-ভরানি কথা।
ভ্যাসেকটমি-লাইগেশন
যথাতথা।

[২২ অগাস্ট, ২০১২। উত্তরা, ঢাকা]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন