আকাশ দেখার স্বপ্ন ছিল মেয়েটার
ছোট থেকেই আকাশে পাখি হয়ে ওড়ার
সাধ ছিল তার
মফঃস্বল থেকে শহরে এলো যেদিন
জীবনে প্রথমবার কলেজ ক্যাম্পাসের
সোনালী রোদ গায়ে এসে পড়েছিল
সে বুঝতে পারল আকাশের অনেক কাছাকাছি আছে
কলেজ ক্যান্টিনে একটা ঝাঁকড়া চুলের ছেলে
একদিন এসে বলল, হাই!
সেই থেকে আলাপ।
তারও নাকি স্বপ্ন আকাশ হওয়ার
মুখে রবীন্দ্রনাথ, দিনবদলের গান,
চোখে একরাশ বিপ্লব, সমাজ বদলের স্বপ্ন…
মফঃস্বলের মেয়ের ঘোর কাটে না
সে ভাবল এই বুঝি তার এক আকাশ
এই আকাশেই ডানা মেলে দেয়া যায় নিশ্চিন্তে
উদ্দাম উড়তে পারা যায় যত্রতত্র
একদিন সন্ধেবেলায় ছেলেটি এসে বলল
‘চল তোকে আজ আকাশ দেখাব আমার ফ্ল্যাটের ছাদ থেকে’
‘তোর ফ্ল্যাটের ছাদের আকাশ বুঝি আমার থেকে আলাদা?’
খিলখিলিয়ে হেসে সানন্দে রাজি হল সে
শহরের সবচেয়ে উঁচু ফ্ল্যাটের ছাদে নিয়ে গেল তাকে
সেখানে ছেলেটির আরও দুজন বন্ধু অপেক্ষা করছে
তারপর সারারাত
মেয়েটি চিত হয়ে শুয়ে আকাশ দেখল
ভোরবেলা যখন তাকে ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিল তিনজন
সে শেষ চেষ্টা করেছিল পাখি হওয়ার
একবার উড়ে আকাশ ছোঁয়ার
পারেনি।
তার বদলে পরদিন খবরের কাগজের
প্রথম পাতার খবর হয়ে গেল
আর পরের কয়েকদিন শহর ভেঙে পড়ল রাস্তায়
মিটিং মিছিল পথ অবরোধ লাঠিচার্জ টিয়ার গ্যাস
রাজনীতির কচকচানি, পোশাকের দোষ, চরিত্রের দোষ
সব দেখা হল
তারপর একসময়
খবরের পাতা জুড়ে এলো আইপিএল
পুজো পার্বণ ইদ মহরম সান্তাক্লজ ভোট ভাষণ
ফেসবুক জুড়ে সেলফি, নতুন পোশাকের বাহারী লাইক!
দামিনী, নির্ভয়া নাকি অন্য কেউ?
কি নাম ছিল তাঁর?
মনে নেই!
আইনের দরজায় দরজায় ঘুরে ক্লান্ত মেয়েটির বাবা
একদিন সেই ছাদ থেকে উড়িয়ে দিল
ধুলো পড়ে যাওয়া সমস্ত খবরের কাগজ
আর লজ্জাহীন এক শহর দেখল
বেঁচে থাকতে যে মেয়েটা পাখি হয়ে আকাশে উড়তে পারেনি
আজ আশ্চর্যরকম খবর হয়ে উড়ছে ভীষণ ভাবে…