নফস
এক আঁজলা জল নিয়ে পাড়ি দিচ্ছি মরুভূমি
টপটপ ক’রে ঝরছে পানি, মেটাচ্ছে বালির তিয়াসা
এ-বালিরা আরো জল চায়, আবার চায় পিপাসা
সূর্য, ওহ সূর্য উঠে যায় মধ্যগগনে
বালি বালি আর বালির ভিতরে
দেখা যায় গাছ আর জলাধার দূরে
বালি বালি আর বালির ভিতরে
গাছ কিছু দেখা যায় দূরে
পানি কিছু দেখতে পাই ওই দূরে
দূরে-দূরে নাতো, কাছেই
বালি বালি বালির ভিতরেই
পানি কিছু দেখতে পাই আমি কাছে-দূরেই
পায়ের নীচে বালির আরো আরো পিপাসা
কানে কানে কানাকানি ওয়াসওয়াসা
এ-বালিরা আরো জল চায়
আবার আবার, আবার চায় পিপাসা
ছেড়া নূপুরের আর্তনাদ
চাঁদ-রঙা মোলায়েম একটা ছেড়া নূপুরের
জুড়ে যাওয়ার আকাংখায় দগ্ধ দেহ
দেও ওঠা গাঙে চাঁদের ঝিকিমিকিতে আকুল
দেহ ফসলের কচি শীষের বেহেশ্তি ঘ্রাণে মুগ্ধ
দ্বীনের দাওয়াতে কবুল বলেছেন যে কবি
দেহতে পেয়েছেন যিনি আত্মা নামের আশ্রয়
এই মুগ্ধতা আর আকাংখাকে মেশাবেন তিনি
কিতালের ওংকারে।
তাঁর জিহাদের সব কবিতা লিখতে হবে আমাকেই
নখ দিয়ে লিখছি অক্ষর পাথরের পৃষ্ঠায়
একটা ছেড়া নূপুরের আর্তনাদে কাঁদছে পাথর
আকাশের জন্য কান্না
হলুদ পাখিটার নীড়েও হয়তো ছিল অপেক্ষমান ছানা
আমি পাথর কুড়িয়ে নৃশংসতার গুলতিবারে সাজিয়েছিলাম
বর্বরতা জানাল এ পাখি পোষাও যায় না— এ কথাও কয় না
আহা মানুষের সাধ!
কালচে আকাশে চলমান লালবাতির টিপটিপ
কান্নাগুলো বসে যাচ্ছে অক্ষরে।
ফেক কান্না
কুম্ভীরাশ্রু কেন চারিদিকে
মমতা খালা বাড়ি থেকে পাগল হ’য়ে বের হ’য়ে গেল পর
আর সত্যিকারের কান্না কেউ কাঁদতে পারেনি
এফ সিক্সটিন, ব্যারেল আর ক্লাস্টার বোমা
এদেরও আছে কিছু সীলছাপ্পড়
এই অস্ত্র-বানানো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর আছে
হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্ট
সেখানেও জমা হয় ছুটির দরখাস্ত
কারণ তারাও কিছু দেয়, মাতৃত্বকালীন ছুটি
চিতা
আমার ওপর দাঁড়াও তুমি
হেঁটে এসে সহস্র মাইল খালি পায়ে
ছেঁড়াফাটা দগদগে পাগুলো নিয়ে
বুকের ওপর যাও দাঁড়িয়ে—
পুরুষ তুমি, মর্দ জোয়ান
দাঁড়াও, হিম শীতল আক্রোশে
দাঁড়াও, অগ্নিপানের তিয়াসে
পুরুষ তুমি, মর্দ জোয়ান
দাঁড়াও, দশদিকের বুলেটকামী বুক পেতে
চাপ দাও, সম্পুর্ণ ওজন নিয়ে বুকের ওপরে
পুরুষ তুমি, নামুক বিদ্যুৎবৃষ্টি আকাশ হ'তে
বজ্রসকল দেহ থেকে দেহে পড়ুক ছড়িয়ে
আমার ওপর দাঁড়াও তুমি
পুরুষ তুমি, মর্দ জোয়ান
পুরুষ তুমি, বৃত্তাকার ধেয়ান
ঘটমান
সকাল হইতেছে; আস্তে আস্তে সূর্যের আলো আইসা
ঢুইকা পড়লো আমারও সন্ধ্যালাগা ঘরে
অভ্যাস থেকে বাইর হইয়া গিয়া তুমি
চেষ্টা করতে থাকলা মনে না করতে আমারে।
পানি খাবা বইলা জগ উল্টাইয়া ফেললা
গা যেন না ভিজে তাই, আকাশ কাইটা দরজা বানাই
ঐপাশে গিয়া শিউর করি ডোরটা লক হইল কি না
শিউর করতে চাই, যেন জানালাগুলার দাগ মুইছা দিতে পারি
ইরেজার দিয়া; তবে মুছতে পারতেছি না চোখের পানির রেখা
একটু পরেই তুমি বাইরে যাবা,
পার্কে বইসা অন্যের খাওয়া চকলেট খাবা।
একটু পরেই ঘুমাব আমি পানির নিচে পাতালে
ভাসতেছি আমি, মহানন্দে কাটতেছি সাঁতার তোমার গতকালে
অবশেষে
মালনী রোডে মিস্তরি খুঁজতে গেছিলাম
দেশে কেন এখন মিস্তরির এত সংকট!
একজনরেও পাইলাম না, তাই
তাই আমি নিজেই হাতুড়ি লোহা নিয়া কাঠগুলাকে পিটাইতে লাগলাম
হাতুড়ির শব্দে শব্দে দোলাইতে লাগলাম মাথা
নাকমুখ লাল হয়ে গেল, ঘামায়া গেলাম প্রচুর
লোহার সাথে লোহার ঘষায় ছিটকে উঠলো স্ফুলিঙ্গ
আর কাঠে আগুন লাইগা যাবে কিনা ভাবতে ভাবতে,
ভাবতে ভাবতেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি বড় হইয়া একদিন কাঠমিস্তরিই হবো
ও আমি কাঠ পেটাবো
শক্ত শক্ত হাতে
শক্ত শক্ত ভাবে
কাঠগুলাকে জোড়া লাগায়া দেবো
সে
সে নামের মাঝে দিয়ে রাখে অন্য কারো ঠিকানা
‘রক্ষা করো, পার করো আমায়’ রব-ওঠা সময়ে;
নামের মাঝে তার লুকিয়ে থাকে উদ্বাস্তুদের বেদনা
ইতিহাস, দেশকাল আর প্রেম, লুটিয়ে পড়ে তার বুকে
সদা মৃদু-হাসিতে উজ্জ্বল তার ঠোঁটের কোণা
সে নামের মাঝে দিয়ে রাখে অন্য কারো ঠিকানা।
ঠিকানায় লিখে রাখে কতগুলো পাখির নাম
—উড়ে উড়ে যারা শিখে ফেলেছে...
শীতের দেশে একটুখানি উষ্ণতার দাম
জান্নাতি ফুল
ধরো সাদা হতে হতে, সাদা হতে হতে সব কালো হয়ে গেল
তুমি ভাবলে কালোর ভিতরে শুধু সাদা আর সাদা
কেউ একজন মাকে দেখে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো
শেষবার সে দেখেছিলো চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া লাল
সাদা আর কালোর মাঝখানে রক্ত থাকে
বীজহীন সূর্যমুখী শুধু হলুদ
পরীক্ষা
আপনার আপনার আত্মার ভিতরে
লিখে দিয়া মস্ত মস্ত চিঠি
আমরা সই করলাম তার নিচে নিচে
তোমারেও দিতে হবে হে এই বিচ্ছেদী পরীক্ষা
মন চাইলে আমিও নিজেরে নিয়া খাড়া করাইতে পারি ফসলের মাঠে
হাত দুইটা উঠাইয়া কাকতাড়ুয়ার সারেন্ডার ভঙ্গি করে দাঁড়াইতে পারি
তবুও আমায় ভয় পাইতে থাকবে অবলা কিছু পাখি, কাক টাক চিল
আত্মার ভিতরে আমি আবার তালাক দিব আপনাকে
একবার দুইবার বারবার
তালাক দিতে থাকব
আপনার চোখের ভিতরের শূন্যতা
ভেদ করে আমি দেখব
আপনার মগজের ভিতরের সংখ্যার ভিতরে দেখব
আপনার হৃদয়ের রক্তে হাত লাল করে দিয়ে দেখব
আপনার বুক থেকে পেট, ছুরি চাকু দিয়া কেটে
সব বের করে নিয়ে জলে ধুয়ে আবার সেলাই করব
আবার আমি আপনাকে তালাক দিয়া ফেলব
নেত্রকোনা, ২০১৬