ইরাকের অনুবাদ কবিতা সংগ্রহ


 বৃষ্টির গান

বদর শাকির আল-শায়াব

তুমি কি জানো কোন সে দুঃখ বৃষ্টিকে প্রাণীত করে?
জানো কি খানাখন্দ বুঁজে এলে সে কি করে কাঁদে?
পথভোলা একলা এক মানুষ বৃষ্টির ছাঁটে কী খুঁজে পায়?
অবিরাম, যেনো রক্তের ছিটে, যেমন ক্ষুধার্ত মানুষ, ভালোবাসার মতো,
যেমন শিশু, মৃত্যুর মতো, অনিঃশেষ বৃষ্টি।
তোমার চোখদুটো আমাকে নিয়ে চলে বৃষ্টি-বিহারে
উপসাগর উজিয়ে বিদ্যুৎরেখা কুড়িয়ে বেড়ায় ইরাকের ঢেউ যতো
সাথী হয় নক্ষত্ররাজি আর ঝিনুকের খোলেরা
যদি একটি ভোর তাদের থেকে বিশ্রাম ছিনিয়ে নেয়ওবা, ভারি রাত টেনে দেয় রক্তজমাট আঙরাখা। আমি কেঁদে ফেলি
উপসাগরের তীরে: ‘হে উপসাগর
হে মুক্তা, খোল আর মৃত্যুর দেবতা!’
আর তখন প্রতিধ্বনি আসে,
ঠিক যেমনটা ভাবা হয়েছিল তেমনই
‘হে উপসাগর
হে মুক্তা, খোল আর মৃত্যুর দেবতা!’
প্রায় নির্ভূল...শুনতে পাই শাঁসানো কণ্ঠের ইরাকি বজ্রধ্বনি
পাহাড়ে আর সমতলে জড়ো হয়ে উঠছে আলোর বান
কেননা আগুয়ানেরা আগল ভাঙল বলে! আর টুটলেই
ছড়িয়ে পড়বে হাওয়া উপত্যকা জুড়ে।
নিশ্চিত শুনতে পাই...খেজুর পাতারা আকণ্ঠ পান করছে বৃষ্টি-জল
শুনি তল্লাটে তল্লাটে দেশান্তরী মানুষের অস্ফূট গোঙানী
উপসাগরে যুঝে চলেছে বৈঠা আর পাল
ঝড় আর বজ্র হুঙ্কার, গাইছে
বৃষ্টি...বৃষ্টি....
ঝরঝর বৃষ্টি!







কে আমি
নাযিক আল-মালাইকা

রাত জিজ্ঞাসে—কে তুমি!
আমি তার নিগূঢ়-উদ্বেগ, কালো, গভীর খাদ
তার স্পর্ধিত নীরবতা
হৃদয় ঢেকে নিয়েছি এই নীরবতায়
মুড়ে নিয়েছি সন্দেহে-নিরানন্দে, কটাক্ষে তাকাতে তাকাতে
মহাকাল জিজ্ঞাসে—কে তুমি?
আমি কে তা জানতে চায় দুদ্দার হাওয়া
আমি তার উদভ্রান্ত আত্মা, সময় বিবর্জিত
আমি চাই, এক অফুরান পথচলা
এক অনিঃশেষ যাত্রা, বিরতিহীন।
কোনও এক মোড়ে পৌঁছানো যাবে কি?
যেখানে এলে মনে হবে এই তো ঘনিয়ে এসেছে দহনরাত্রি।
তারপর বাতিল সময় জিজ্ঞাসে—কে হে?
আমি এক মহাকায়, শতশত বছরকে আলিঙ্গনে বেঁধে আমি ফিরে এসেছি
আর মঞ্জুর করেছি পুনরুত্থান।
আমিই সুদূর অতীতের স্রষ্টা
মনোহর আশার চনমনে আঁচ নিয়ে ফিরেছি
তাকে গোর দেব বলে।
শেষতক স্বজিজ্ঞাসে—তুমি কে?
বিমূঢ় এক, ছায়ায় তাকিয়ে চলি
শান্তি মেলেনা কিছুতেই
জারি তবু প্রশ্ন যতো আর উত্তর ঢাকা পড়ে রয়
মরীচিকাবৎ পর্দায়
তবুও ভাবি সে আসবেই, কাছ ঘেঁষে
কিন্তু যেই সে এসে দাঁড়াল নিকটে, দেখি সে লীন,
মৃত, উধাও!






আজকের রাতটা কি দুর্বোধ্য?

সাদি ইউসুফ 
আজ রাতে মনে করবার মতো কিছু নেই
আমার কোনও সত্য নেই
বলতে চাইছি, মনে করতে পারছি না কোথায় জন্মেছিলাম
বেঁচে থাকার জন্য একটুকরো রুটি জরুরী কি না,
মাও সে-তুঙ-এর সমাজতন্ত্র সবচেয়ে উত্তম কি না,
মাঝেমধ্যে সুড়ঙ্গের ভেতরের সুড়ঙ্গে সেঁধোই আমরা
আমরা কি প্রতিবিম্বিত হই?


প্রথম সুড়ঙ্গে প্রবেশ না করাটাই হয়তো আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল
মাও সে-তুঙ-এর সমাজতন্ত্রই সবচেয়ে উত্তম
কিংবা বিক্ষোভে ফেটে পড়া শ্লোগান
‘আমরা রুটি চাই’।


কোথায় জন্মেছিলাম-এই তথ্যটা হয়তো আমার মনে রাখা উচিৎ
বলছি—জন্মেছিলাম বসরার শহরতলীতে
সে এক দেশ, সবাই যাবে ইরাক নামেই চেনে
পুরনো দলিলেও তা-ই লেখা।
আমাকে বলতে হবে—আমার রক্ত
ইরাকের জন্য প্রবাহিত
আর ইরাক কখনওই মার্কিনিদের নয়।



নির্জন দুপুর
আব্দুল জাহরা জেকি

পেঁচাটা সেদিন
পাহাড়ের খাঁজে বসে কস্তুরী গোলাপ বিষয়ে বলছিল—
কস্তুরী গোলাপ
যেনো খুশিতে ডগমগ এমন নির্জন দুপুরে
পেঁচার সৌজন্যে।
সেদিন
আদপে কোনও গোলাপ ছিলই না
আর উৎসবমুখর পেঁচাটির সাথে
তাল মেলালো পাহাড়টি, কণ্ঠে তাঁর পেঁচার গান
যেনো গানে গানে শুনিয়ে দিচ্ছে একা গোলাপের সকল যাতনা।




আমার শরীর

মানাল আল—শেখ

তোমার সাথে কাটানো প্রথম রাতে যে শরীরটা ধার দিয়েছিলাম...
আমি সে শরীর প্রতি রাতে পাহারা দিই, দেখি এক নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের দিকে ধাবমান
যেখানে বালিয়ারী বয়স শিরার ভেতর বিশ্রাম নেয় আর
অবসন্ন জাহাজ তার চোখে অবতরণ করলে
ঘুমের শমন জারি হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন