ডেভিট হোয়াইটের কবিতার অনুবাদ সংগ্রহ



সাদা ঘুঘু

 

যখন তোমায় প্রথম

চিঠি লিখি

সে-লেখা

আমার হাতে যেন এক

ছোট সাদা ঘুঘু

যাকে আকাশে

উড়িয়ে দিতে হবে

আর যখন সে পৌঁছবে

তোমার জানালায়

তোমার অক্ষরে

তুমি লিখে দেবে চিঠি

বেঁধে দেবে তার পায়ে

দুহাতে তুলে ফের

মেলে দেবে

বাতাসের গায়ে

যেন সে ফিরে ফিরে আসে

 

এই ঘরে,

এই সত্তায়।

এখন আমার

তোমার কাছে পৌঁছবার

কোনো শব্দ জানা নেই।

যে-জানালার ধারে

হাঁটু মুড়ে আমাকে

বসতে বলেছে ভালোবাসা

সে-জানালা দিয়ে আমি দেখি

এক ডানাহীন আকাশ,

ভালোবাসা আমাকে বলে,

তোমার জন্য গভীর শ্বাস

পাঠাতে সেখানে

ভালোবেসে,

তোমাকে তোমার পথে

চলে যেতে দিতে

অথচ আমার হয়ে নয়;

আর কী আশ্চর্য,

সেই আনন্দ

নতুন কোনো ভালোবাসা

খুঁজে পায় যেন;

যে-ভালোবাসা

আলতো করে পাশে ডাকে

বন্ধুর মতন।

 

এতো শব্দ

অথচ

শব্দে কী-ই বা হয়

যেখানে পৌঁছবে না শব্দের স্বর

যে-নির্জনতায়

তোমাকে দেখেছিলাম

সাদা ঘুঘু হয়ে যাওয়ার আগে

 

যাকে

দুই হাতে তুলে

এবার উড়িয়ে দিতে হবে

অবাধ আকাশে।






তোমার অতল জল

চাঁদের আলোর নিচে ঘুম ভেঙে গেলে

আমি কে, জানতে গিয়ে তোমার কাছে আমাকে

আরো নিবিড় হয়ে আসতে হয়, যেন পৃথিবী

তোমার ছিপছিপে দেহরেখা জুড়ে বাহিত,

আর সেইভাবে, তোমার যাওয়া-আসার ভেতর,

তোমার জলজ, জোয়ারী গভীর শ্বাসের সাথে

শ্বাস নিতে নিতে, তোমাকে চিনে চিনে,

এক ফালি আলো-আঁধারিতে, আমি আমার

ভাসতে থাকা তালুর প্রথম দৃঢ়তা

অনুভব করি, আর সে হাত তোমার কাঁধ

মোমের মতো আলো স্পর্শ ক’রে এগিয়ে যায়,

মস্নান চন্দ্রালোকিত তোমার নিটোল গালে,

যায় তোমার ত্বকের মুক্তোদানার মতো জল ছুঁয়ে

আমার আঙুল, তোমার ঠোঁটের শ্বাস স্পর্শ করে,

আর আমার গভীরে, গহিন সূক্ষ্মতায় উষ্ণতা দেয়,

সমুদ্রের অতল বাঁক থেকে সাঁতরে উঠে

চাঁদের আলোর নিচে তোমার কাছে এই ভাবে আসা,

জানা, তুমি যে আদলে বাঁচো, সে আদলে

কেউ বাঁচে না, যেভাবে শ্বাস নাও, সেভাবে কেউ

পারে না নিতে শ্বাস, আমার স্পর্শ যেন এক

মস্নান-আলোকিত অস্ফুট-স্বর জলজ সত্তাকে

দুহাতে ধরে থাকা, ভুল কোনো শক্তির পরবশ হয়ে,

আমার ঠোঁট  যা বলতে চায়, তাও যেন ভুল উচ্চারণ,

আর এই সমুদ্ররাতে, তোমার শ্বাস চিনে

যেভাবে তোমায় ভালোবাসতে হবে, সেভাবে

বাসতে না পেরে, তোমার ঘুমন্ত অবয়বের

পাশে শুয়ে থাকি, যেন এক সাগরকে বুকে ধ’রে,

যে-ঘুম দুচোখে নেমে আসে, আর যে-ভার লঘু হয়ে নামে,

আর সেই সাথে, সমুদ্রের ধারে ভোরে জেগে উঠে

খুঁজে পাওয়া আনন্দের অনুভব – আমাকে পস্নাবিত করে।




গৃহের মতো ঘর

সোনাঝরা আলোর

এক ধলপহরে

জেগে উঠে

এদিক-ওদিক ফিরে

মুহূর্তের জন্য

আমার মনে হয়

প্রতিদিনের মতোই

এ যেন, যে-কোনো একদিন।

 

কিন্তু আমার

অন্ধকার হৃদয় থেকে

ঢাকনা সরে গেছে,

আমার মনে হয়

আমার ঘরের

শান্ত নরম বাতি

হয়তো দায়ী,

অথবা

যে সহজ শ্বাসের ছন্দে

আমি নিজেকে ঘুম পাড়িয়েছি কাল রাতে,

তাই,

অথবা হয়তো দায়ী

রাতের কানে

আমার প্রার্থনা।



আমার মনে হয়

আজ এমন এক শুভ দিন

যেদিন ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যায়

অথবা হয়তো এমন ধূসর বেলা

যেদিন আপনজনকে

হারিয়ে ফেলতে পারি।

 

অনুভব করি

আজ এমন দিন

যেদিন এই পৃথিবী আর পরের ভুবনে

নাড়ির টান ছিঁড়ে যেতে পারে

খুব সহজেই

 

আমি তাই নিজেকে

আলোর শান্ত আল ধরে

উঠে বসতে দেখি

হলদে বাদামি গাঢ় সেডার কাঠ

আমায় ঘিরে আগুনের ফুলকির মতো জ্বলে,

আর সারি-সারি দেবদূত

এই বসতবাড়ির আলোর ছাউনির দিকে

উড়ে যায়।

 

এই উজ্জ্বল ঘর

আমার গৃহ,

এখানে আসে

আমার আপনজন,

আমি সেসব কিছু

এখানে ভালোবাসতে চাই

যা ভালোবাসতে

আমার অনেক সময় লেগে গেছে।

 

আমার সাবালক

একাকিত্বের উপাসনাঘর

এই গৃহ,

এই একাকিত্ব

আমার আপনার,

যেমন আপনার

আমার জীবন।

এমন গৃহের মতো ঘর

তো আর নেই।





মধুঋতু অন্ধকার

 

তোমার চোখ ক্লান্ত এখন

এখন পৃথিবীও নিঃসাড়।

 

দেখা ঘুচে গেলে

পৃথিবীর কোনো দেশ

তোমাকে খুঁজে পাবে না তো আর।

 

অন্ধকারে পা ফেলবার এই লহমা।

এখানে রাত্রির চোখ আছে

নিজকে চেনার।

 

এখানে তুমি ভালোবাসার

ঊর্ধ্বে নও।

 

আজ রাতে কৃষ্ণগহবর

তোমাকে গর্ভে স্থান দেবে।

 

যতদূর চোখ যায় তার চেয়ে বেশি

দিগন্ত খুলে যাবে।

 

তোমাকে জানতে হবে

পৃথিবী এক মুক্ত স্বদেশ।

 

অন্য ভুবন ছেড়ে তুমি

তোমার নিজস্ব পৃথিবী

চিনে নাও।

 

কখনো কখনো রাত্রি আর

নিঃসঙ্গতার মধুর কারাবাস থেকে

জেনে নিতে হয়

 

যা-কিছু প্রাণময় নয়

তা তোমার জন্য কম।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন