লি পো এর কবিতা

~ নির্বাসনের চিঠি -

লি পো (এজরা পাউন্ড) ~

অনুবাদঃ ইমরুল হাসান

রাকুহো’র সো-কিন, পুরানা বন্ধু, আমি তোমারে মনে করতেছি এখন

তুমি যে স্পেশাল একটা শুঁড়িখানা বানায়া দিছিলা আমারে

ব্রীজের দক্ষিণ পাশে, টেন-শিনে, তার কথা।

হলুদ সোনা আর শাদা মুক্তা দিয়া

গানগুলি আর হাসিগুলির লাইগা টাকা দিতাম আমরা,

আর মাসের পর মাস মদ খাইতাম,

রাজা-বাদশাদের কথা ভুইলা গিয়া।


বুদ্ধিমান লোকেরা আসতো ভাইসা, সাগর থিকা

আর পশ্চিমের বর্ডার দিয়া,

আর ওদের লগে, আর স্পেশালি তোমার লগে,

কোন লেনদেন তো ছিলো না আমার;

আর সাগর পাড়ি দিয়া বা পাহাড় ডিঙাইয়া

অরা তো পাইতো না কিছুই

যদি অরা খালি দোস্তিটা না পাইতো আমরার।


আমরা কইতাম আমরা’র হৃদয়ের আর মনের কথা

কইতাম কোন পস্তানি ছাড়া।


আর তারপরে আমারে পাঠাইয়া দিলো সাউথ উই’য়ে,

দম আটকাইয়া আসা লরেলের উদ্যানে,

আর তোমারে পাঠায়া দিলো রোকো-হোকো’র উত্তরে

যদিও আমরার আর কিছুই নাই আমাদের ভিতরের চিন্তাগুলি আর মেমোরিগুলি ছাড়া।


আর যখন বিচ্ছেদের সবচে খারাপ টাইমটা আইলো

আমরা দেখা করলাম, আর একসাথে ঘুরতে গেছিলাম সান-গো’তে,

পুরা ছত্রিশটা ভাঁজের ঘুর্ণি আর পাকানির ভিতর দিয়া পানির;

হাজারটা ফুল ফোটা একটা ভ্যালিতে…

ওইটা আছিল প্রথম ভ্যালি,

আর এইরকম দশ হাজার ভ্যালি আছিলো

পাইনের বাতাস আর আওয়াজে ভরা।


রূপার জিন আর সোনার রাসগুলি নিয়া

মাটিতে সিজদা দিয়া পড়ছিলো,

পুবের-কান এর জমিদার আর তার গোলামেরা;

আর শিই-ইয়ো’র ‘সত্যি-মানুষ’ও আইছিলো দেখা করতে আমার লগে,

একটা মুক্তা-লাগানো মাউথ-অর্গান বাজাইতে বাজাইতে।

সান-কো’র উঁচা বাড়িগুলিতে তারা শুনাইছিলো

আরো শেনিন মিউজিক আমারারে;

অনেক বাজনার জিনিস ছিলো, যারা বাচ্চা ফনিক্সের মতো আওয়াজ করতেছিল।

আর কান-চাও এর জমিদার, মদ খাইয়া

নাচতেছিল কারণ তার লম্বা জামার হাতা

ঠিক থাকতেছিল না, বাজতে থাকা মিউজিকের সাথে।

আর আমি, জড়ায়া গেছিলাম জরি’র ভিতর, ঘুমায়া গেছিলাম মাথা রাইখা তার কোলে

আর আমার আত্মা এতো উপরে উঠছিল যে মনে হইতেছিল বেহেশতে ঘুরতেছে সে।


আর দিন শেষ হওয়ার আগে আমরা ছড়াইয়া পড়ছিলাম তারাগুলির মতো অথবা বৃষ্টির মতন।

আমারে চইলা যাইতে হইতো, অনেক দূরে পানির উপর দিয়া,

তোমারে ফিরতে হইতো তোমার নদীর ব্রীজের কাছে।

আর তোমার বাপ, যিনি আছিলেন চিতাবাঘের মতোন সাহসী

আছিলেন হেই শিও’র গর্ভণর আর অসভ্য বিদেশিদের উনি থামাইছিলেন।

আর একবার মে মাসে উনি তোমারে পাঠাইছিলেন আমার লাইগা, এই এতো দূরে;

আর ভাঙ্গা চাকাগুলি আর অন্যসবকিছু নিয়া, আমি বলবো না যে, এইটা কঠিন আছিলো না…

ভেড়ার নাড়ি-ভুঁড়ির মতোন পাকানো রাস্তা দিয়া আসাটা।

আর আমি তো তখনো যাইতেছিলাম, ওই বছরের শেষের দিকে

উত্তরের কাটা কাটা বাতাসের ভিতরে,

আর ভাবতেছিলাম খরচের কথা তো তুমি ভাবোই নাই…

আর নিজেই দিতে চাইছো সেইটা।


তারপরে কি সমাদরটাই না হইলো!

লাল জেডের কাপগুলি, খাবার সুন্দর কইরা সাজানো, একটা নীল মুক্তা-লাগানো টেবিলে;

আর আমি মাতাল হয়া গেছিলাম, আর কোন চিন্তা আছিলো না ফিরা-যাওয়ার;

আর তুমি আমারে নিয়া হাঁইটা গেছিলা প্রাসাদের পশ্চিম দিকে,

পুরান মন্দিরের কাছে, সেইখানে পানি ছিল নীল জেডের মতন ক্লিয়ার,

নৌকাগুলি ভাসতেছিলো, আর মাউথ-অর্গান আর ড্রাম বাজানোর আওয়াজ,

ঢেউ তুলতেছিলো ড্রাগনের মতোন মিশে যাইতেছিল পানিতে সবুজ-ঘাসের মতোন

আনন্দ হইতেছিল, বেশ্যারা যাইতেছিলো আর আসতেছিলো কোন বাঁধা ছাড়াই,

উইলোর দানাগুলি ঝরতেছিলো স্নো’র মতন,

আর সিঁদূরের মতন মেয়েরা মাতাল হইতেছিলো সূর্যাস্ত নিয়া,

আর একশ ফিট ডিপ পানি প্রতিবিম্ব দেখাইতেছিলো সবুজ ভ্রু’গুলার-

নতুন চাঁদের আলোতে দেখতে পাওয়া সবুজ রং-করা ভ্রুগুলা সুন্দর অনেক,

বেহেশতি শোভার মতন রং করা – আর মেয়েরা একজন আরেকজনের সাথে গাইতেছিলো গান,

নাচতেছিলো স্বচ্ছ জরি’র জামা পইড়া,

আর বাতাস তুলে দিতেছিলো গান, বাঁধা দিতেছিল তারে

মিশাইয়া দিতেছিলো মেঘগুলির নিচে,

আর তারে দেখা হইবো না কখনোই।


আর এই সবকিছুই শেষ হয়া আসছিলো,

আর তারে দেখা হইবো না কখনোই।


আমি কোর্টে গেছিলাম পরীক্ষা দেয়ার লাইগা,

লাইউ’র ভাগ্য ট্রাই করতে, চোইও গান গাইছিলাম

আর কোন প্রমোশন পাই নাই,

আর ফিরা গেছিলাম শাদা-মাথা নিয়া পুবের পাহাড়গুলিতে।


আর যদি কোনসময় আমরার দেখা হয়, পরে, দক্ষিণের ব্রীজের মাথায়।

ভীড় ভাইঙ্গা গেছে তখন – তুমি চইলা গেছো সান প্যালেসের উত্তরে।

আর যদি তুমি জিগাও এই বিচ্ছেদ আমি পার করি কেমনে?

এইটা ফুলগুলির মতন, বসন্তের শেষে যারা ঝইড়া যায়,

কনফিউজড, একটা বিভ্রান্তির ভিতর ঘুরতে থাকে।

কথা বলার কি মানে! আর কথা-বলার তো কোন শেষ নাই –

হৃদয়ে কোনকিছুই তো ফুরায়া যায় না।


পোলাটারে আমি ডাকি,

অরে ওর হাঁটু গাইড়া বইসা লিখতে বলি আর সিল মারতে,

আর পাঠাই এক হাজার মাইল দূরে, চিন্তা করতে।


/২০১৭

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন