রজনী গন্ধার বিদায় — জসীমউদ্দীন

 রজনী গন্ধার বিদায়

— জসীমউদ্দীন

শেষ রাত্রের পান্ডুর চাঁদ নামিছে চক্রবালে,  

 রজনী গন্ধা রূপসীর আঁখি জড়াইছে ঘুম-জালে।  

 অলস চরণে চলিতে চলিতে ঢলিয়া ঢলিয়া পড়ে,  

 শিথিল শ্রানি- চুমিছে তাহার সারাটি অঙ্গ ধরে!  

 উতল কেশেরে খেলা দিতে শেষ উতল রাতের বায়ু:  

 ঘুমাতে ঘুমাতে কাঁপিয়া উঠিছে স্মরিয়া রাতের আয়ু।  

 রজনী- গন্ধা রাতের রূপসী ঝুমিছে শ্রানি-ভরে,  

 অঙ্গ হইতে ঝরিছে কুসুম একটি একটি করে।   

  

 শিয়রে চাঁদের দীপটি ঝুমিয়া হইয়া আসিছে ম্লান,  

 রাত-বিহগীর কন্ঠে এখন মৃদু হোয়ে এল গান।  

 পূর্ব তোরণে আসিছে রুপসী রঙিন উষসী-বালা,  

 হসে- লইয়া রাঙা দিবসের অফুট কুসুম-ডালা।  

 রজনী-গন্ধা ঘুমায় আলসে শিথিল দেহটি তার,  

 লুটাইয়া পড়ে বৃন্তশয়নে স্বপন নদীর পার।   

  

 ভুবন ভোলানো মরি মরি ঘুম- অপরূপ, অপরূপ!  

 বিধাতা বুঝিবা ধ্যান করিতেছে যুগ যুগ রহি চুপ!  

 এ রূপ মহিমা সহিতে পারে না ভোরের রূপসী ঊষা;  

 রজনী ফুলের অঙ্গ হইতে হরিয়া লইছে ভূষা!   

  

 শাড়ীতে তাহার তারা ফুলগুলি দলিয়া পিষিছে পায়ে,  

 ভেঙেছে রাতের পাখির বাঁশরী উদাস বনের বায়ে!  

 শিয়রে চাঁদের মণি দীপ-খানি থাপড়ে নিবায়ে দিল,  

 অঙ্গ হইতে শিশির ফোঁটার গহনা কাড়িয়া নিল।  

 থামিল বনের ঝিঁঝির কন্ঠে ঘুম পাড়ানিয়া সুর,  

 জোনাকী পরীরা দীপগুলি লয়ে চলিল গহনা-পুর।  

 মৃত আত্মারা কবরে লুকাল, মহা রহস্য তার,  

 আঁচলে জড়ায়ে ধীরে ধীরে ধীরে রজনী রুধিল দ্বার।   

  

 চারিদিকে নব আলোকের জয় ; চিরপরিচিত সব,  

 মহা-কোলাহলে আরম্ভ হলো দিনের মহোৎসব।  

 এখন শুধুই লোক জানাজানি মুখ চেনাচিনি আর,  

 দেনা-পাওনার হিসাব করিয়া ‘বানিয়া খুলিল দ্বার।   

  

 কোথায় ঘুমাল রজনী-গন্ধা কিবা রহস্য-জাল,  

 সারারাতি তারে জড়াইয়াছিল ? কে শোনে সে জঞ্জাল।  

 রাতের রজনী-গন্ধা ঘুমায়, চির বিস্মৃতি-পুরে-  

 তবু রয়ে রয়ে কি করণ বাঁশী বেজে ওঠে বহুদুরে।  

  



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন