খেয়া-পারের তরণী — কাজী নজরুল ইসলাম

 খেয়া-পারের তরণী

 — কাজী নজরুল ইসলাম 

যাত্রীরা রাত্তিরে হতে এল খেয়া পার,  

 বজ্রেরি তূর্যে এ গর্জেছে কে আবার?  

 প্রলয়েরি আহ্বান ধ্বনিল কে বিষাণে!  

 ঝন্‌ঝা ও ঘন দেয়া স্বনিল রে ঈশানে!   

  

 নাচে পাপ-সিন্ধুতে তুঙ্গ তরঙ্গ!  

 মৃত্যুর মহানিশা রুদ্র উলঙ্গ!  

 নিঃশেষে নিশাচর গ্রাসে মহাবিশ্বে,  

 ত্রাসে কাঁপে তরণীর পাপী যত নিঃস্বে।   

  

 তমসাবৃতা ঘোরা ‘কিয়ামত’ রাত্রি,  

 খেয়া-পারে আশা নাই ডুবিল রে যাত্রী!  

 দমকি দমকি দেয়া হাঁকে কাঁপে দামিনী,  

 শিঙ্গার হুঙ্কারে থরথর যামিনী!   

  

 লঙ্ঘি এ সিন্ধুরে প্রলয়ের নৃত্যে  

 ওগো কার তরী ধায় নির্ভীক চিত্তে–  

 অবহেলি জলধির ভৈরব গর্জন  

 প্রলয়ের ডঙ্কার ওঙ্কার তর্জন!   

  

 পুণ্য-পথের এ যে যাত্রীরা নিষ্পাপ,  

 ধর্মেরি বর্মে সু-রক্ষিত দিল্ সাফ!  

 নহে এরা শঙ্কিত বজ্র নিপাতেও  

 কাণ্ডারী আহ্‌মদ তরী ভরা পাথেয়।   

  

 আবুবকর উস্‌মান উমর আলি হায়দর  

 দাঁড়ি যে এ তরণীর, নাই ওরে নাই ডর!  

 কাণ্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা,  

 দাঁড়ি-মুখে সারি-গান –লা-শরিক আল্লাহ!   

  

 ‘শাফায়ত’-পাল-বাঁধা তরণীর মাস্তুল,  

 ‘জান্নাত্’ হতে ফেলে হুরি রাশ্ রাশ্ ফুল।  

 শিরে নত স্নেহ-আঁখি মঙ্গল দাত্রী,  

 গাও জোরে সারি-গান ও-পারের যাত্রী।  

 বৃথা ত্রাসে প্রলয়ের সিন্ধু ও দেয়া-ভার,  

 ঐ হলো পুণ্যের যাত্রীরা খেয়া পার।   

  

 ————————–  

 আহমদ– মোহাম্মদ (সা)।  

 লা-শরিক আল্লাহ– ঈশ্বর ভিন্ন অন্য কেহ উপাস্য নাই।  

 শাফায়ত– পরিত্রাণ  

 জান্নাত– স্বর্গ  

  

====== 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন