আমি ও নর্তকী
কচুরিপানার নিচে ডুবে থাকা জল
সেও নয় কোনোদিন অতটা শীতল
যতটা ঠান্ডা চোখে আমাকে তাকাও
অথচ তুমি তো আছো আমার জিকিরে
মৃদু ঢেউ যেরকম টোকা দেয় তীরে
একই পথ ঘুরে আসে খেয়া পারে নাও।
তেমনই জলের মতো ঘুরেফিরে আসি
ব্যথা হয়ে বাজি আর হুকুমের হাসি
করে নাও দুঠোঁটের বিপরীত বাঁকে
নাচের মুদ্রা করে পরো গো আমাকে।
দেবালয় জুড়ে বাজা তোমার ঘুঙুর
আমাকেই গায় যেন। যে নাচের সুর
ঝংকার তোলে তব— দেহের আনাচ—
কানাচে লুটিয়ে থাকা, আমি সেই নাচ।
অনুষঙ্গ
হয়তো মরণ হবে মোলাকাত শেষে
বন্ধুর রাঙাহাসি করে যাবে খুন
ফুলের সুবাসে আমি মরে যেতে পারি
অথবা সে রূপ দেখে, যেমন আগুন
কিংবা এমন মৃদু জানবে না কেউ
যেমন নীরবে ঝরে শেফালির ফুল
বৃষ্টির মতো তার সহজ পতন
একা বুক ফেটে মরে রৌদ্রে শিমুল
যেমন মরণ হয় সাগরের কাছে
নদীটির পথ চলা ফুরোয় যখন
এমন মরণও আছে বেঁচে যাওয়া খুব
চিরকূটে লিখে রাখে কেন সে কখন
যদি সে মরণ আসে মরে যাবো আমি
ঘোলাজল আর মরা নদীর দোহাই
জড়িয়ে ধরবো গলা শত্রুর মতো
যেভাবে তোমার প্রেমে রোজ মরে যাই
মরণযাত্রা কালে সাথী হবে কারা
পারি যদি মৃত্যুর আগে লিখে দিতে
মানে সে সহজ মরা জুটে যায় যদি
আমার কাফন হবে মায়ের শাড়িতে
জলের শরীর খুঁড়ে বানায়ো কবর
ভালো হয় বৃষ্টিতে নব বরষার
একটু বিষাদ দিয়ো কফিনেতে মুড়ে
এ জীবন চেঁছে স্মৃতি তোমার আমার
মায়ের দুধের ঘ্রাণ, প্রেম স্মৃতি ছাড়া
আর কী কবরে নিব আর কী কী চাই
একটি গোলাপ দিও, খালি হাতে বলো
খোদার সামনে আমি কেম্নে দাঁড়াই!
সোশাল ডিসিপ্লিন
পশুর নামের নদী, আসলে জলজ
শুশুক আর কুমিরেরা মিলেমিশে থাকে
ফুড চেইনও যথারীতি রয়েছে বহাল
খেয়ে নেয়, যার যাকে যতোটুকু লাগে।
পাশেই সুন্দরবন। কী কাণ্ড সেখানে!
হরিণির রূপে মজে, এক বোকা বাঘ
ভুলেছে নখর আর জঠরের ক্ষুধা
এমনকি ভুলে নিজ ডোরাকাটা দাগ।
এই নিয়ে তোলপাড় পাশব সমাজে
এও মানা যায় নাকি এতো অনাচার
ইন্ট্রারেসিয়াল! আচ্ছা তা হলেও হতো
জীবন বিরুদ্ধ এ যে! এর সুবিচার—
আবশ্যক জেনে, গুরু বললেন ক্ষোভে
প্রেমে পড়া লাগে বাছা? মাংসের লোভে!
প্রতিসমা
তোমার শরীর হোক, অবলীন, পাপে পূর্ণ হোক
দুইটি কাতর চোখ। এই বলে কলঙ্ক রটুক
কুচুয়া কুলটা নারী। ঘৃণাভরে বেপাড়ার লোক
তোমার বাড়ির পথ যেন না মাড়ায়। যতোটুক
বিপাকে পড়লে পরে মানুষ বিবেক বিক্রি করে
নিটোল চোখের পানি, এমনকি প্রেমিকার বুক
তারচে বিপদে পড়ো। মুখে যেন চুনকালি পড়ে।
যতো অঘটন একে একে তার সকলই ঘটুক।
নাহলে কী করে বলো উপযুক্ত হবে বা আমার
আমার কুখ্যাতি যদি না বাড়ায় তোমার গৌরব!
যতটা অসৎ আমি, মাপকাঠি যতো শঠতার
ততোটা বদমাইশ হতে পারো যদি, আসো। সব
ঠিকঠাক করে নিব, গড়ে তুলবো সেম বদভ্যেস।
তবে না বলবে লোকে, দুজনকে মানিয়েছে বেশ।
কৃষ্ণ পাথর
কতো পথ ঘুরে ঘুরে তীর্থ যাত্রা শেষে
দেহ হতে মুছে ফেলে কতো চেনা পাপ
আবার এসেছি ফিরে তব পদমূলে
তোমার কাবাকে ঘিরে আমার তাওয়াফ
দহনের কাল চলে, শুনি দশদিকে
মানুষের প্রেম নেই। ঈর্ষার নখর—
হতে ছুঁড়ে মারে যেন স্বীয় ইবলিশে
ছুঁড়ে মারে ঘৃণা আর নিরীহ পাথর।
মোক্ষ-মুক্তি দূরে থাক, স্বর্গ বা নরক
আমার তেমন কোনো মনোবাঞ্চা নাই
তোমার পরশ লোভে শধু এতোদূর
এসেছি তীর্থের কাক, আখেরী দাওয়াই—
এতো চুমু দিই তবু মিটেনা তো সাধ
তুমি কি মানুষ, না কি, হাজরে আসাদ।
রোমন্থন
দূরে কাছেই বৃষ্টি হলো আজ
বাড়ির ছাদে ভিজতেছিলে, শোনো-
ফোটেনি তাও দেহের কারুভাঁজ,
ওসব আবার বৃষ্টি হলো কোনো!
না কী, শুধু আমার দেখার ভুল
শাড়িই বোধহয় পরোনি আজ শোকে
হারায় গেছে নতুন কেনা দুল
তাতে আবার মা দিয়েছে বকে
অসাবধানে এমন হবে! বলি-
তোমার ভুলে আমার খেসারত!
ইট বসানো সরু মতোন গলি
ঘুরে এলাম তোমার বাড়ির পথ
সেটুকু পথ বুকে করে হাঁটি
জড়ায় ধরি এমন সরীসৃপ
চোখ যেনো তার শান্ত শীতলপাটি
বুকের মাটি নতুন ভাসা দ্বীপ।
তেমন করেই ভাসতে থাকো যার
স্পর্শে কী সুখ মেঘ কিছুটা জানে
গ্রিলের ফাঁকে সান্ধ্য জানালার
খুঁজছিলে কার তাকায় থাকার মানে!
এসব আমার ভাবাই মোটে কাজ
এতোটুকুই কে জুটাতে পারে!
তুমি আমার স্বপ্নে পাওয়া রাজ
অধিকৃত গোপন অভিসারে।
ফীল
ফিরেছে হস্তীমূর্খের দল
ডানা হতে ছুঁড়ে, ফেলো প্রস্তর-
ধু ধু প্রান্তরে কে শোনে লাব্বায়েক!
চোখ মেলে দেখ-
কাবা শরীফের শূন্যতা আজ ছুঁয়েছে নিখিল।
পাথরের আর কাজ নাই; ছায়া দাও আবাবিল।