জীবনের হিসাব — সুকুমার রায়ের ছড়া

 


জীবনের হিসাব

বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে

মাঝিরে কন, "বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে ?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে ? জোয়ার কেন আসে ?"
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যাল্‌ফেলিয়ে হাসে ।
বাবু বলেন, "সারা জনম মরলিরে তুই খাটি,
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি ।

খানিক বাদে কহেন বাবু, "বলত দেখি ভেবে
নদীর ধারা কেম্‌‌নে আসে পাহাড় হতে নেবে ?
বল্‌ত কেন লবণপোরা সাগরভরা পানি?"
মাঝি সে কয়, "আরে মশাই, অত কি আর জানি ?"
বাবু বলেন, "এই বয়সে জানিসনেও তাকি ?
জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি ।"

আবার ভেবে কহেন বাবু, "বলত ওরে বুড়ো,
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো ?
বলত দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন ?"
বৃদ্ধ বলে, "আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন ?"
বাবু বলেন, "বলব কি আর, বলব তোরে কি তা,-
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা ।"

খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে,
বাবু দেখেন নৌকাখানি ডুব্‌ল বুঝি দুলে ।
মাঝিরে কন, "একি আপদ ! ওরে ও ভাই মাঝি,
ডুব্‌ল নাকি নৌকা এবার ? মরব নাকি আজি ?"
মাঝি শুধায়, "সাঁতার জানো ?" মাথা নাড়েন বাবু,
মূর্খ মাঝি বলে, "মশাই, এখন কেমন কাবু ?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,
তোমার দেখি জীবনখানা ষোল আনাই মিছে ।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন