জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে কবি জীবনানন্দ দাশ নিহত হন।
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ এই কবিতাটি যিনি লিখেছিলেন তিনি হচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের এক অমর কবি জীবনানন্দ দাশের মা কুসুম কুমারী রায়। জীবনানন্দ দাশের জন্ম বরিশাল শহরে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯।
মৃত্যু ২২ অক্টোবর কলকাতায় (ট্রামের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে তিন দিন পর হাসপাতালে মৃত্যু হয়)।
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ এই কবিতাটি যিনি লিখেছিলেন তিনি হচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের এক অমর কবি জীবনানন্দ দাশের মা কুসুম কুমারী রায়। জীবনানন্দ দাশের জন্ম বরিশাল শহরে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯।
মৃত্যু ২২ অক্টোবর কলকাতায় (ট্রামের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে তিন দিন পর হাসপাতালে মৃত্যু হয়)।
তিনি ছিলেন কাজী নজরুলের সমবয়সী। জীবনানন্দ দাসই লিখেছিলেন, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজতে যাই না আমি।’
আজ থেকে ৭৮ বছর আগে লিখেছেন কালজয়ী এবং সকল সময়ের আধুনিক কবিতা ‘বনলতা সেন।’ যা আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম সৃষ্টি। রবীন্দ্রত্তোর বাংলা কবিতার জগতকে যাঁরা সমৃদ্ধ করে গেছেন জীবনানন্দ দাশ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। জীবনানন্দ দাশের পূর্ব পুরুষের বাড়ি ছিল ঢাকার বিক্রমপুর পরগনার পদ্মাতীরবর্তী গুয়াপাড়ায়। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার ছোট সন্তান। তাঁর ডাক নাম ছিল ‘মিলু’।
মিলু ভগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁকে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য বাবা-মা নিয়ে যান লখেœৗ, আগ্রা এবং গিরিধিতে। পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত বরিশালে বসতি স্থাপন করেন। তিনি ছিলেন সে সময়ের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। ছিলেন ব্রহ্মসমাজের অনুসারী। তিনি তাঁর নাম থেকে গুপ্ত উপাধি বাদ দেন। এর পর থেকে তাঁর পরবর্তী বংশধররা দাশ উপাধি ব্যবহার করেন। মা ছিলেন রায় পরিবারের মেয়ে। জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন স্কুল শিক্ষক (১৮৬৩-১৯৪২)।
তিনি একজন ভাল প্রবন্ধকার এবং ‘ব্রহ্মবাদি’ সাময়িকীর প্রকাশক ছিলেন। জীবনানন্দের বয়স যখন ৮ বছর তখন তাঁকে বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। ১৯১৫ সালে তিনি ওই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন প্রথম বিভাগ নিয়ে। এরপর কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯১৯ সালে ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে তিনি অনার্স পাস করেন। ১৯২১ সালে এমএ করেন দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে। একই সময় তিনি আইন পড়েন। এ সময়ই তিনি কলকাতা সিটি কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। এরপর চলে আসেন বাগেরহাট পিসি কলেজে। সেখানে ভাল না লাগায় চলে যান দিল্লী। সেখানে যোগ দেন রামজোস কলেজে। সেখানে অধ্যাপনা করা অবস্থায় ছুটিতে বরিশাল আসেন। এ সময় (১৯৩০ সাল) তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন লাবণ্যপ্রভা গুপ্তের সঙ্গে। বিবাহজনিত দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে দিল্লীর ওই কলেজ থেকে তাঁর চাকরি চলে যায়। এর পর তিনি যোগদান করেন বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে। তাঁর সময়ই ১৯৩৫ সালে ব্রজমোহন কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফিলেশন লাভ করে। এ সময়ই তিনি তাঁর বিখ্যাত সনেট কবিতা ‘বনলতা’ সেন রচনা করেন। ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নোয়াখালী এবং ত্রিপুরায় বহু লোক নিহত হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার পেশায় যোগ দেন। তিনি এ সময় রচনা করেন ‘হিন্দু-মুসলমান’ কবিতাটি। একই সময় তিনি ‘স্বরাজ’ নামের একটি পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। জীবনানন্দ দাশের জীবদ্দশায় ২শ’ ৬৯টি কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রয়াণের পর আরও ১শ’ ৬২টি কবিতা প্রকাশিত হয়। তিনি ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। ভোরের নির্মল আকাশ, শিশির ভেজা ঘাস, ধানের ক্ষেতের উদ্দাম হাওয়ার মতন, নদীর চরের চিল ডাকা বিষণ দুপুর প্রকৃতির নানা বর্ণবৈচিত্র জীবনানন্দের কবিতায় ধরা দিত। ১৯৫৩ সালে তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৫-তে তাঁর লেখা ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ মরণোত্তর আকাদেমী পুরস্কারে ভূষিত হয়।
১৯৫৪ সালের ২০ অক্টোবর বিকেলে তিনি ট্রামের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৮ দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ : ঝরা পালক (১৯২৭), ধূসর পা-ুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন (১৯৪২), মহান পৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪), রূপসী বাংলা (লেখা ১৯৩৪, প্রকাশ ১৯৫৭), বেলা অবেলা (১৯৬১), সুদর্শনা (১৯৭৩), আলো পৃথিবী (১৯৮১), মনোবিহঙ্গ (১৯৭৯)।
উপন্যাস ও গল্প : পূর্ণিমা, কল্যাণী, চারজন, বিরাজ,সতীর্থ, বাঁশমতির উপাখ্যান, প্রীতিনীড়, কারু-বাসনা, মৃণাল। তাঁর ছোটগল্প একান্ত কামনার বিলাস, সঙ্গ, নিসর্গ, রক্তমাংসহীন, জামরুল তলা, মেয়ে-মানুষ, পূর্ণিমা, নকলের খেলা, হাতের তাস, ছায়ানট, চাকরি নাই, উপেক্ষার শীত, বই, মহিষের শিং, বৃত্তের মত, সাধারণ মানুষ, পালিয়ে যেতে ইত্যাদি যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা পায়। জীবনানন্দ দাশ ইংরেজীতে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। জীবনানন্দ দাশ তাঁর একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘কবিতা ও জীবন একই জিনিসের দু’টি ব্যতিক্রমী ধারা, জীবন এমনই যা আমরা লুকাতে চাই তাই বাস্তবতা, কিন্তু শ্রোতার অসামঞ্জস্য ও ভঙ্গুর জীবন ব্যবস্থা কবির কখনও সফলতা অথবা শ্রোতার কল্পনা। কবিতা কখনই বাস্তবতার পরিপূর্ণ কাঠামো ধারণ করতে পারে না। আমরা নতুন জগতে প্রবেশ করি।'
Download
Jibonananda Dasher Shreshtho Kobita in pdf
মিলু ভগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁকে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য বাবা-মা নিয়ে যান লখেœৗ, আগ্রা এবং গিরিধিতে। পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত বরিশালে বসতি স্থাপন করেন। তিনি ছিলেন সে সময়ের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। ছিলেন ব্রহ্মসমাজের অনুসারী। তিনি তাঁর নাম থেকে গুপ্ত উপাধি বাদ দেন। এর পর থেকে তাঁর পরবর্তী বংশধররা দাশ উপাধি ব্যবহার করেন। মা ছিলেন রায় পরিবারের মেয়ে। জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন স্কুল শিক্ষক (১৮৬৩-১৯৪২)।
তিনি একজন ভাল প্রবন্ধকার এবং ‘ব্রহ্মবাদি’ সাময়িকীর প্রকাশক ছিলেন। জীবনানন্দের বয়স যখন ৮ বছর তখন তাঁকে বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। ১৯১৫ সালে তিনি ওই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন প্রথম বিভাগ নিয়ে। এরপর কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯১৯ সালে ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে তিনি অনার্স পাস করেন। ১৯২১ সালে এমএ করেন দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে। একই সময় তিনি আইন পড়েন। এ সময়ই তিনি কলকাতা সিটি কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। এরপর চলে আসেন বাগেরহাট পিসি কলেজে। সেখানে ভাল না লাগায় চলে যান দিল্লী। সেখানে যোগ দেন রামজোস কলেজে। সেখানে অধ্যাপনা করা অবস্থায় ছুটিতে বরিশাল আসেন। এ সময় (১৯৩০ সাল) তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন লাবণ্যপ্রভা গুপ্তের সঙ্গে। বিবাহজনিত দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে দিল্লীর ওই কলেজ থেকে তাঁর চাকরি চলে যায়। এর পর তিনি যোগদান করেন বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে। তাঁর সময়ই ১৯৩৫ সালে ব্রজমোহন কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফিলেশন লাভ করে। এ সময়ই তিনি তাঁর বিখ্যাত সনেট কবিতা ‘বনলতা’ সেন রচনা করেন। ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নোয়াখালী এবং ত্রিপুরায় বহু লোক নিহত হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার পেশায় যোগ দেন। তিনি এ সময় রচনা করেন ‘হিন্দু-মুসলমান’ কবিতাটি। একই সময় তিনি ‘স্বরাজ’ নামের একটি পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। জীবনানন্দ দাশের জীবদ্দশায় ২শ’ ৬৯টি কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রয়াণের পর আরও ১শ’ ৬২টি কবিতা প্রকাশিত হয়। তিনি ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। ভোরের নির্মল আকাশ, শিশির ভেজা ঘাস, ধানের ক্ষেতের উদ্দাম হাওয়ার মতন, নদীর চরের চিল ডাকা বিষণ দুপুর প্রকৃতির নানা বর্ণবৈচিত্র জীবনানন্দের কবিতায় ধরা দিত। ১৯৫৩ সালে তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৫-তে তাঁর লেখা ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ মরণোত্তর আকাদেমী পুরস্কারে ভূষিত হয়।
১৯৫৪ সালের ২০ অক্টোবর বিকেলে তিনি ট্রামের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৮ দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ : ঝরা পালক (১৯২৭), ধূসর পা-ুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন (১৯৪২), মহান পৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪), রূপসী বাংলা (লেখা ১৯৩৪, প্রকাশ ১৯৫৭), বেলা অবেলা (১৯৬১), সুদর্শনা (১৯৭৩), আলো পৃথিবী (১৯৮১), মনোবিহঙ্গ (১৯৭৯)।
উপন্যাস ও গল্প : পূর্ণিমা, কল্যাণী, চারজন, বিরাজ,সতীর্থ, বাঁশমতির উপাখ্যান, প্রীতিনীড়, কারু-বাসনা, মৃণাল। তাঁর ছোটগল্প একান্ত কামনার বিলাস, সঙ্গ, নিসর্গ, রক্তমাংসহীন, জামরুল তলা, মেয়ে-মানুষ, পূর্ণিমা, নকলের খেলা, হাতের তাস, ছায়ানট, চাকরি নাই, উপেক্ষার শীত, বই, মহিষের শিং, বৃত্তের মত, সাধারণ মানুষ, পালিয়ে যেতে ইত্যাদি যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা পায়। জীবনানন্দ দাশ ইংরেজীতে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। জীবনানন্দ দাশ তাঁর একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘কবিতা ও জীবন একই জিনিসের দু’টি ব্যতিক্রমী ধারা, জীবন এমনই যা আমরা লুকাতে চাই তাই বাস্তবতা, কিন্তু শ্রোতার অসামঞ্জস্য ও ভঙ্গুর জীবন ব্যবস্থা কবির কখনও সফলতা অথবা শ্রোতার কল্পনা। কবিতা কখনই বাস্তবতার পরিপূর্ণ কাঠামো ধারণ করতে পারে না। আমরা নতুন জগতে প্রবেশ করি।'
Download
Jibonananda Dasher Shreshtho Kobita in pdf