৫০টি প্রেমের কবিতা সংগ্রহ


 

৫০ টি প্রেমের কবিতা সংগ্রহ


অভিশাপ


-কাজী নজরুল ইসলাম

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,

অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

ছবি আমার বুকে বেঁধে

পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে

ফিরবে মরু কানন গিরি,

সাগর আকাশ বাতাস চিরি'

যেদিন আমায় খুঁজবে -

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,

কাহার যেন চেনা-ছোওয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে, -

জাগবে হঠাৎ চমকে!

ভাববে বুঝি আমিই এসে

ব'সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,

ধরতে গিয়ে দেখবে যখন

শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!

বেদনাতে চোখ বুজবে -

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

গাইতে ব'সে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না,

ব'লবে সবাই - "সেই যে পথিক, তার শেখানো গান না?"

আসবে ভেঙে কান্না!

প'ড়বে মনে আমার সোহাগ,

কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!

প'ড়বে মনে অনেক ফাঁকি

অশ্রু-হারা কঠিন আঁখি

ঘন ঘন মুছবে -

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ'রবে তোমার অঙ্গন,

তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ -

কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!

শিউলি ঢাকা মোর সমাধি

প'ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি'!

বুকের মালা ক'রবে জ্বালা

চোখের জলে সেদিন বালা

মুখের হাসি ঘুচবে -

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

 

প্রস্থান


--হেলাল হাফিজ

এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পএ দিও

এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালীর তাল পাখাটা

খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পএ দিও।

ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত

ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পএ দিও।

কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে

কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে

পত্র দিও, পত্র দিও।

আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেও, আপত্তি নেই।

গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?

আমি না হয় ভালবাসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,

নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে

পাঁচ দুপুরে নির্জনতা খুন করেছি, কি আসে যায়?

এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,

এক মানবী কতোটা বা কষ্ট দেবে

 

প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী

--আবুল হাসান

অতো বড় চোখ নিয়ে, অতো বড় খোঁপা নিয়ে

অতো বড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিশ্বাস নিয়ে

যতো তুমি মেলে দাও কোমরের কোমল সারশ

যতো তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারা

যতো আনো ও-আঙ্গুলে অবৈধ ইশারা

যতো না জাগাও তুমি ফুলের সুরভী

আঁচলে আগলা করো কোমলতা, অন্ধকার

মাটি থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোন

আমি ফিরব না আর, আমি কোনদিন

কারো প্রেমিক হবো না; প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী চাই আজ

আমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো।

নিঃসঙ্গতা

আবুল হাসান

অতোটুকু চায় নি বালিকা!

অতো শোভা, অতো স্বাধীনতা!

চেয়েছিলো আরো কিছু কম,

আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে

বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিলো

মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!

অতোটুকু চায় নি বালিকা!

অতো হৈ রৈ লোক, অতো ভিড়, অতো সমাগম!

চেয়েছিলো আরো কিছু কম!

একটি জলের খনি

তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিলো

একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!



আকাঙ্খা


--আবুল হাসান

তুমি কি আমার আকাশ হবে?

মেঘ হয়ে যাকে সাজাব

আমার মনের মত করে ।

তুমি কি আমার নদী হবে?

যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে

তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে ।

তুমি কি আমার জোছনা হবে?

যার মায়াজালে বিভোর হয়ে

নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে ।

তুমি কি আমার কবর হবে?

যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে

বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর ।



প্রশ্ন


--আবুল হাসান

চোখ ভরে যে দেখতে চাও

রঞ্জন রশ্মিটা চেনো তো?

বুক ভরে যে শ্বাস নিতে চাও

জানো তো অক্সিজেনের পরিমাণটা কত?

এত যে কাছে আসতে চাও

কতটুকু সংযম আছে তোমার?

এত যে ভালোবাসতে চাও

তার কতটুকু উত্তাপ সইতে পারবে তুমি?



কথোপকথন --৪


--পুর্ণেন্দু পত্রী

- যে কোন একটা ফুলের নাম বল

- দুঃখ ।

- যে কোন একটা নদীর নাম বল

- বেদনা ।

- যে কোন একটা গাছের নাম বল

- দীর্ঘশ্বাস ।

- যে কোন একটা নক্ষত্রের নাম বল

- অশ্রু ।

- এবার আমি তোমার ভবিষ্যত বলে দিতে পারি ।

- বলো ।

- খুব সুখী হবে জীবনে ।

শ্বেত পাথরে পা ।

সোনার পালঙ্কে গা ।

এগুতে সাতমহল

পিছোতে সাতমহল ।

ঝর্ণার জলে স্নান

ফোয়ারার জলে কুলকুচি ।

তুমি বলবে, সাজবো ।

বাগানে মালিণীরা গাঁথবে মালা

ঘরে দাসিরা বাটবে চন্দন ।

তুমি বলবে, ঘুমবো ।

অমনি গাছে গাছে পাখোয়াজ তানপুরা,

অমনি জোৎস্নার ভিতরে এক লক্ষ নর্তকী ।

সুখের নাগর দোলায় এইভাবে অনেকদিন ।

তারপর

বুকের ডান পাঁজরে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে

রক্তের রাঙ্গা মাটির পথে সুড়ঙ্গ কেটে কেটে

একটা সাপ

পায়ে বালুচরীর নকশা

নদীর বুকে ঝুঁকে-পড়া লাল গোধূলি তার চোখ

বিয়েবাড়ির ব্যাকুল নহবত তার হাসি,

দাঁতে মুক্তোর দানার মত বিষ,

পাকে পাকে জড়িয়ে ধরবে তোমাকে

যেন বটের শিকড়

মাটিকে ভেদ করে যার আলিঙ্গন ।

ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত হাসির রং হলুদ

ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত গয়নায় শ্যাওলা

ধীরে ধীরে তোমার মখমল বিছানা

ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে সাদা ।

- সেই সাপটা বুঝি তুমি ?

- না ।

- তবে ?

- স্মৃতি ।

বাসর ঘরে ঢুকার সময় যাকে ফেলে এসেছিলে

পোড়া ধুপের পাশে ।



সে


--জীবনানন্দ দাস

আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে;

বলেছিলোঃ 'এ নদীর জল

তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল;

সব ক্লান্তি রক্তের থেকে

স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি;

এই নদী তুমি।'

'এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?'

মাছরাঙাদের বললাম;

গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম।

আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি;

জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে

কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে।

সময়ের অবিরল শাদা আর কালো

বনানীর বুক থেকে এসে

মাছ আর মন আর মাছরাঙাদের ভালোবেসে

ঢের আগে নারী এক - তবু চোখ ঝলসানো আলো

ভালোবেসে ষোলো আনা নাগরিক যদি

না হয়ে বরং হতো ধানসিঁড়ি নদী।



বনলতা সেন


--জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,

সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে

সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন ।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর

হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, 'এতদিন কোথায় ছিলেন?'

পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত

সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;

পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন

তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;

সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী - ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;

থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

আয়াত একটি ফুল

--সজল আহমেদ
অায়াত একটি ফুল
যে ভুলের ঘ্রাণে আমি
অহেতুক করে ফেলি
এককোটি ভুল!
এই আকাশ
আজ চাঁদহীন
আয়াত ঘুমিয়ে গেছে
আমি ঘ্রাণহীন
বসে আছি এই দোষে
পাখিটি ঘুমিয়ে আজ ভিষন রোষে!
অতিষ্ঠ হয় যদি আমার দেবী;
কী দিয়ে তুষ্ট করবো ভাবি!
আমার দেবীর এত রাগ, এত রাগ যে;
দেবী অতিষ্ট হলে কাঁপন ধরে যায় পৃথিবীব্যাপী!






দোতলার ল্যন্ডিং মুখোমুখি ফ্ল্যাট। একজন সিঁড়িতে, একজন দরোজায়


--আহসান হাবীব

: আপনারা যাচ্ছেন বুঝি?

: চ’লে যাচ্ছি, মালপত্র উঠে গেছে সব।

: বছর দু’য়েক হ’লো, তাই নয়?

: তারো বেশি। আপনার ডাকনাম শানু, ভালো নাম?

: শাহানা, আপনার?

: মাবু।

: জানি।

: মাহবুব হোসেন। আপনি খুব ভালো সেলাই জানেন।

: কে বলেছে। আপনার তো অনার্স ফাইনাল, তাই নয়?

: এবার ফাইনাল

: ফিজিক্স-এ অনার্স।

: কি আশ্বর্য। আপনি কেন ছাড়লেন হঠাৎ?

: মা চান না। মানে ছেলেদের সঙ্গে ব’সে…

: সে যাক গে, পা সেরেছে?

: কি ক’রে জানলেন?

: এই আর কি। সেরে গেছে?

: ও কিছু না, প্যাসেজটা পিছল ছিলো মানে…

: সত্যি নয়। উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে…

: ধ্যাৎ। খাবার টেবিলে রোজ মাকে অতো জ্বালানো কি ভালো?

: মা বলেছে?

: শুনতে পাই? বছর দুয়েক হ’লো, তাই নয়?

: তারো বেশি। আপনার টবের গাছে ফুল এসেছে?

: নেবেন? না থাক। রিকসা এলো, মা এলেন, যাই।

: যাই। আপনি সন্ধেবেলা ওভাবে পড়বেন না,

চোখ যাবে, যাই।

: হলুদ শার্টের মাঝখানে বোতাম নেই, লাগিয়ে নেবেন, যাই।

: যান, আপনার মা আসছেন। মা ডাকছেন, যাই।


আমার অত টাকা নাই

--সজল আহমেদ
আমারো তো মনেচায় তোমারে নিয়া একটু বড়সড় রেস্টুরেন্ট এ খাইতে যাই,
কিন্তু দ্যাখো আমার অত টাকা নাই!
চলো বাদাম চাবাই
অথবা ফুচকা চটপটি খাই
এরপর সেকেন্ড কোন
অপশন আমার কাছে নাই।
কারণ আমার অত টাকা নাই।
আমার ও তো মনেচায় তোমারে নিয়া একটু ঘুরি কিম্বা শপিংয়ে যাই
কিন্তু দ্যাখো আমার অত টাকা নাই!
এমনই কপাল বাল
আমার এমন গরীবি হাল!
রিক্সায় চড়তে চড়তে
একটা গাড়ির কথা প্রায়ই ভাবি
কিন্তু দ্যাখো আমি অভাবী;
গাড়ি কেনার মতো অত টাকা আমার নাই,
রিক্সা থামায়ে আছে চলো যাই।
লাচ্ছি খাইতে খাইতে ভাবি
এখন একটা বীয়ার ক্যান হাতে থাকা উচিৎ ছিলো অন্তত...
পকেটে তো গড়েরমাঠ স্বপ্ন দেখি অথচ!
মাঝেমাঝে তোমারে মিসডকল দিতে গিয়া লজ্জা পাই,
আবার ভাবি, এত লজ্জা কিসের?
আমার তো অত টাকা নাই!
ভাবি, কেন আমার অত টাকা নাই?
আমি স্বপ্ন দ্যাখি
স্বপ্ন দেইখা মজা পাই
কারণ আমার অত টাকা নাই!
যেহেতু আমার অত টাকা নাই
সেহেতু আমি দোষ দিবো সব বাপ শালারে
শালা তোর যেহেতু টাকা ছিলো না বেহুদা কেন জন্মাইলি আমারে?
যেহেতু পাপ বাপরেও না ছাড়ে
সমূহঃ খিস্তি জপি বাপের ও তরে.......
তুমি তো স্বপ্ন দ্যাখো, আমাদের বাড়ি হবে, ছাদ হবে
অথবা এও দ্যাখো চাঁদে বসে আমাদের বাড়ির ছাদ দেখবে।
শোনো একটা পাকা পাঁচতলা বাড়ির কথা আমি প্রায়ই ভাবি
বাড়িতে একটা সুইমিং পুল চাই যেখানে নাইতে নামবো তুমি ও আমি।
পাইতে এখনো পোড়াতে হবে কাঠখড় আমরা যা চাই,
বিকজ আমার অত টাকা নাই।
তোমার আঙুলগুলো ধরতে ধরতে ভাবি
কমপক্ষে এক ক্যারেট হীরার একটা আংটি আদপে থাকা তো উচিৎ ছিলো;
অথচ সিটিগোল্ডে তুমি পুরোটা মুড়ে আছো আমার লাগেনা ভালো!
কি আর করা? সব নীরবে দেখে যাই
কারণ ডায়ামন্ড কেনার মতো অত টাকা আমার নাই!
চলো ঐদিকে রাস্তা ধইরা পাশের দোকানে যাই
সিটিগোল্ড আংটিতে করাবো হাত বোঝাই।
দামী সব হোন্ডা দেখে বারবার আফসোসে মরে যাই
অন্তত আমার একটা ডুয়োকাটি এখন পাছার নিচে থাকা লাগে সবকিছুর আগে!
কিন্তু কী?
আমার কোন হোন্ডা নাই
আমি মনেমনে ভো ভো হোন্ডা চালাই
কারণ
তুমি জানো
আমার ঐটা কেনার মতো অত টাকা নাই।
যেহেতু আমি ফকিরনির ঘরের ফকিরনি
সেহেতু দ্বিতীয়ত আমি অশ্লীল গালি দেই আমার নসীবরে.....
শালা সবার টাকা আছে, সবাই করে দুহাতে কামাই
অথচ আমার কেন অত টাকা নাই?
এরপর আমি সমগ্র খিস্তি জপি তোমারে
যেহেতু তুমি আসার পর আমার
শুধু চাহিদাই বাড়ে
টাকা পাইতে ইচ্ছা করে
আর নিজেরে বেশ গরীবের বাচ্চা মনে হইতে থাকে
যেহেতু তুমি শুধু সীমাবদ্ধ "আমার এত এত চাই''
আর এইটা খবো ঐটা খাই
ঐটা কিন্যা দাও ঐটা চাই কিম্বা
কিনে দিতে হবে যত পরে খরচ
সেহেতু গালিশোনা তোমার ফর্জ!
যেহেতু তুমি জানো আমি গরীব
তবুও চাহিদার শেষ নাই
অতএব তোমার নিস্তার নাই
আর আমার যেহেতু টাকা নাই
সেহেতু মুখের ট্যাকশোও হারায়ে ফালাই
দৌঁড়াও তুমি দাও দৌঁড় তুমি
তোমারে দিয়া কার বাল্ফাবো আমি?
তোমারে আর দরকার নাই
বিকজ তোমারে পুষবার মত অত
টাকা আমার নাই।




তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা


--শহীদ কাদরী

ভয় নেই

আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী

গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে

মার্চপাস্ট করে চলে যাবে

এবং স্যালুট করবে

কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

বন-বাদাড় ডিঙ্গিয়ে

কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হয়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে

আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে

ভায়োলিন বোঝাই করে

কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো-

বি-৫২ আর মিগ-২১গুলো

মাথার ওপর গোঁ-গোঁ করবে

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো

প্যারাট্রুপারদের মতো ঝরে পড়বে

কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা।

ভয় নেই...আমি এমন ব্যবস্থা করবো

একজন কবি কমান্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী

এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায়

সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা!

সংঘর্ষের সব সম্ভাবনা, ঠিক জেনো, শেষ হবে যাবে-

আমি এমন ব্যবস্থা করবো, একজন গায়ক

অনায়াসে বিরোধীদলের অধিনায়ক হয়ে যাবেন

সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয় পাহারা দেবে সারাটা বৎসর

লাল নীল সোনালি মাছি-

ভালোবাসার চোরাচালান ছাড়া সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, প্রিয়তমা।

ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে

শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন

আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে

গণচুম্বনের ভয়ে

হন্তারকের হাত থেকে পড়ে যাবে ছুরি, প্রিয়তমা।

ভয় নেই,

আমি এমন ব্যবস্থা করবো

শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন আক্রমণের মতো

অ্যাকর্ডিয়ান বাজাতে-বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে,

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

স্টেটব্যাংকে গিয়ে

গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে

একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান।

ভয় নেই, ভয় নেই

ভয় নেই,

আমি এমন ব্যবস্থা করবো

নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী

কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে

নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা।


বোকার শহর

--সজল আহমেদ
কতকাল হয়ে গেলো শুনিনা তোমার কথা
ছড়ার মতো বিভ্রান্ত শহরে মিলে গেলে ছন্দ-উপকথা
স্মৃতির শহরে বেকুব ঘুরে আর ফিরে
অবশেষে একদিন, একদিন অবশেষে
আশা জমে ভারী হয়ে মরে।
বিশাল সমুদ্র দেখো কত জল বহে;
নিমগ্ন আঁধারে দেখো জোনাকী পোকারা উড়ে
উড়ে যায় কতশত ব্যথাবাহী স্মৃতি
সন্ধ্যের আকাশে মেঘের সারথি
উঁচুতে দূরে ঐ উড়ে যায় বক
আজানের ধ্বনীতে কাকেরা অবাক
অব্যক্ত যন্ত্রণায় ভীত আমার শরীর
অহেতুক মরে যাব, অসুখের ভীড়
একেকটা স্মৃতি যেন আকাশসম ভারী
আমার বুকে কেন খোদা জমা এত আহাজারি?
কাঁপে না কী প্রভূ তোমার আসমান?
কাঁপেনা? কাঁপেনা?
আমি কেন কাঁদি প্রভূ তুমি কী বুঝোনা?
জগদ্দল ভারী বুকে বিঁধে ব্যথার কিরিচ
বাঁচতে চাই না আমি দিওনা আশিস।
ফুল পরে ঝরে গাছের শরীরে ব্যথা
ঝরে পরে বয়োসন্ধিতে শুকনা পাতা
গাছের বেদনা কেন ফুল ঝরে পরে
জোনাকি তলিয়ে যায় কৃষ্ণ আঁধারে
আর বাজেনা কানে ঝিঁঝিঁর আওয়াজ
হৃদয় সমুদ্রে খড়া চোখে বিরহের ঝাঁঝ
কাঁদি কেন এত আমি; এত কেন কাঁদি?
সমুদ্রে পানি অত যা কেঁদেছি অবধি
আমার মাঝে বারে বারে আমি যা দেখেছি
অন্যকোথায় কিংবা বাইরের জগৎ অত দুঃখ পোষেনি
পোষেনি পোষেনি কেউ আমার মতো কুকুর
অনাহারী থাকেনা রাত-ভোর-দুপুর!
ওগো বিশাল আকাশ আমার সাক্ষী থেকে যা
যা কেঁদেছি ওতক সমাপ্ত; খোদার কসম আর আমি কাঁদবোনা।

একটি খোলামাঠে এক কোটি আশা
ভীড় ভেঙে উপছে পরে বেদনা-ব্যথা
নদীর জলেতে নেই সম্বল আর আশা
ফিরে দেখা পরিণতি মিছে ভালোবাসা
কুচক্রিরা সদা জল বহে মুখে
আশা যদি ভেঙে যায় বেদনা বুকে
ফিরে ফিরে আর আমি তাকাবোনা
জলের ছিটায় এ ঘুম ভাঙাবোনা
আশ্চর্য এক পাখি উড়ে দূরে গেলে
আকাশের অজানায় যায় ডানা মেলে
দূরের পাখি তাঁর দূরেতেই বাসা
দূরের পাখিতে কেন মিছে ভালোবাসা
আর যদি ভুল করি ডেকোনা আমায়
চোখ মেলে ডানা খুলে ডাকবোনা তোমায়
কিংবা জলেতে কেউ ঘুম ভাঙা চোখে
যদি কেউ এভাবে ডানামেলে ডাকে
এসোনা এসোনা ফিরে কারো ডাকে তুমি
তোমাকে আর ভালোবাসবো না আমি।


তুই কি আমার দুঃখ হবি?


--আনিসুল হক

তুই কি আমার দুঃখ হবি?

এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল

রুখো চুলে পথের ধুলো

চোখের নীচে কালো ছায়া

সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।

তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?

মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?

তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর

নির্জনতা ভেঙে দিয়ে

ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে

ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?

একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা

কেমন যেন বিষাদ হবি?

তুই কি আমার শুন্য বুকে

দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?

নরম হাতের ছোঁয়া হবি?

একটুখানি কষ্ট দিবি,

নীচের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?

একটুখানি কষ্ট দিবি

প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়

কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?

একটুখানি কষ্ট দিবি

তুই কি একা আমার হবি?

তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?

রাত্রি

অমিয় চক্রবরতি

অতন্দ্রিলা,

ঘুমোওনি জানি

তাই চুপি চুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে

বলি, শোনো,

সৌরতারা-ছাওয়া এই বিছানায়

—সূক্ষ্মজাল রাত্রির মশারি—

কত দীর্ঘ দুজনার গেলো সারাদিন,

আলাদা নিশ্বাসে—

এতক্ষণে ছায়া-ছায়া পাশে ছুঁই

কী আশ্চর্য দু-জনে দু-জনা—

অতন্দ্রিলা,

হঠাত্ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জ্যোত্স্না,

দেখি তুমি নেই ||



যাত্রাভঙ্গ


-নির্মলেন্দু গুন

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে

মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না

এক কে করি দুই।

হেমের মাঝে শুই না যবে,

প্রেমের মাঝে শুই

তুই কেমন কর যাবি?

পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া

আমাকেই তুই পাবি।

তবুও তুই বলিস যদি যাই,

দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।

তখন আমি একটু ছোঁব

হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর

বিদায় দুটি পায়ে,

তুই উঠবি আমার নায়ে,

আমার বৈতরণী নায়ে।

নায়ের মাঝে বসবো বটে,

না-এর মাঝে শোবো,

হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ

দুঃখ দিয়ে ছোঁব।



প্রেমিক


--জয় গোস্বামী

তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন

আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।

পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে

গেছে।

আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে

আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।

গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে

দিচ্ছে না।

তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে

আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে

সারাদিন।

এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও

যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ

কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।

তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,

সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …

অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা

আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি

কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!

শেষের কবিতা

হে বন্ধু, বিদায়।

মোর লাগি করিয়ো না শোক-

আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে বিশ্বলোক।

মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই,

শূন্যের করিব পূর্ণ, এই ব্রত বহিব সদাই।

উৎকন্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে

সেই ধন্য করিবে আমাকে।

শুক্লপক্ষ হতে আনি

রজনীগন্ধার বৃন-খানি

যে পারে সাজাতে

অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ রাতে,

যে আমারে দেখিবারে পায়

অসীম ক্ষমায়

ভালোমন্দ মিলায়ে সকলি,

এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।

তোমারে যা দিয়েছিনু তার

পেয়েছে নিঃশেষ অধিকার।

হেথা মোর তিলে তিলে দান,

করুণ মুহুর্তগুলি গন্ডুষ ভরিয়া করে পান

হৃদয় অঞ্জলি হতে মম।

ওমো তুমি নিরুপম,

হে ঐশ্বর্য্যবান,

তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান;

গ্রহন করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।

হে বন্ধু বিদায়।



সত্যবদ্ধ অভিমান


--সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ

আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি ?

শেষ বিকেলের সেই ঝুল বারান্দায়

তার মুখে পড়েছিল দুর্দান্ত সাহসী এক আলো

যেন এক টেলিগ্রাম, মুহূর্তে উন্মুক্ত করে

নীরার সুষমা

চোখে ও ভুরুতে মেশা হাসি, নাকি অভ্রবিন্দু ?

তখন সে যুবতীকে খুকি বলে ডাকতে ইচ্ছে হয়--

আমি ডান হাত তুলি, পুরুষ পাঞ্জার দিকে

মনে মনে বলি,

যোগ্য হও, যোগ্য হয়ে ওঠো--

ছুঁয়ে দিই নীরার চিবুক

এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ

আমি কি এ হাতে আর কোনোদিন

পাপ করতে পারি ?

এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে , ভালোবাসি--

এই ওষ্ঠে আর কোনো মিথ্যে কি মানায় ?

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে পড়ে ভীষণ জরুরী

কথাটাই বলা হয়নি

লঘু মরালীর মতো নারীটিকে নিয়ে যাবে বিদেশী বাতাস

আকস্মিক ভূমিকম্পে ভেঙ্গে যাবে সবগুলো সিঁড়ি

থমকে দাঁড়িয়ে আমি নীরার চোখের দিকে....

ভালোবাসা এক তীব্র অঙ্গীকার, যেন মায়াপাশ

সত্যবদ্ধ অভিমান--চোখ জ্বালা করে ওঠে,

সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে

এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে, ভালোবাসি--

এই ওষ্ঠে আর কোন মিথ্যে কি মানায় ?

যা চেয়েছি যা পাবো না

--সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

যা চেয়েছি, যা পাবো না

-কী চাও আমার কাছে ?

-কিছু তো চাইনি আমি ।

-চাওনি তা ঠিক । তবু কেন

এমন ঝড়ের মতো ডাক দাও ?

-জানি না । ওদিকে দ্যাখো

রোদ্দুরে রুপোর মতো জল

তোমার চোখের মতো

দূরবর্তী নৌকো

চর্তুদিকে তোমাকেই দেখা

-সত্যি করে বলো, কবি, কী চাও আমার কাছে ?

-মনে হয় তুমি দেবী...

-আমি দেবী নই ।

-তুমি তো জানো না তুমি কে !

-কে আমি !

-তুমি সরস্বতী, শব্দটির মূল অর্থে

যদিও মানবী, তাই কাছাকাছি পাওয়া

মাঝে মাঝে নারী নামে ডাকি

-হাসি পায় শুনে । যখন যা মনে আসে

তাই বলো, ঠিক নয় ?

-অনেকটা ঠিক । যখন যা মনে আসে-

কেন মনে আসে ?

-কী চাও, বলো তো সত্যি ? কথা ঘুরিয়ো না

-আশীর্বাদ !

-আশীর্বাদ ? আমার, না সত্যি যিনি দেবী

-তুমিই তো সেই ! টেবিলের ঐ পাশে

ফিকে লাল শাড়ি

আঙ্গুলে ছোঁয়ানো থুতনি,

উঠে এসো

আশীর্বাদ দাও, মাথার ওপরে রাখো হাত

আশীর্বাদে আশীর্বাদে আমাকে পাগল করে তোলো

খিমচে ধরো চুল, আমার কপাল

নোখ দিয়ে চিরে দাও

-যথেষ্ট পাগল আছো ! আরও হতে চাও বুঝি ?

-তোমাকে দেখলেই শুধু এরকম, নয়তো কেমন

শান্তশিষ্ট

-না দেখাই ভালো তবে ! তাই নয় ?

-ভালো মন্দ জেনে শুনে যদি এ-জীবন

কাটাতুম

তবে সে-জীবন ছিল শালিকের, দোয়েলের

বনবিড়ালের কিংবা মহাত্মা গান্ধীর

ইরি ধানে, ধানের পোকার যে-জীবন

-যে জীবন মানুষের ?

-আমি কি মানুষ নাকি ? ছিলাম মানুষ বটে

তোমাকে দেখার আগে

-তুমি সোজাসুজি তাকাও চোখের দিকে

অনেকক্ষণ চেয়ে থাকো

পলক পড়ে না

কী দেখো অমন করে ?

-তোমার ভিতরে তুমি, শাড়ি-সজ্জা খুলে ফেললে

তুমি

তারা আড়ালে যে তুমি

-সে কি সত্যি আমি ? না তোমার নিজের কল্পনা

-শোন্ খুকী

-এই মাত্র দেবী বললে-

-একই কথা ! কল্পনা আধার যিনি, তিনি দেবী-

তুই সেই নীরা

তোর কাছে আশীর্বাদ চাই

-সে আর এমন কি শক্ত ? এক্ষুনি তা দিতে পারি

-তোমার অনেক আছে, কণা মাত্র দাও

-কী আছে আমার ? জানি না তো

-তুমি আছো, তুমি আছো, এর চেয়ে বড় সত্য নেই

-সিঁড়ির ওপরে সেই দেখা

তখন তো বলোনি কিছু ?

আমার নিঃসঙ্গ দিন, আমার অবেলা

আমারই নিজস্ব--শৈশবের হাওয়া শুধু জানে

-দেবে কি দুঃখের অংশভাগ ? আমি

ধনী হবো

-আমার তো দুঃখ নেই--দুঃখের চেয়েও

কোনো সুমহান আবিষ্টতা

আমাকে রয়েছে ঘিরে

তার কোনো ভাগ হয় না

আমার কী আছে আর, কী দেবো তোমাকে ?

-তুমি আছো, তুমি আছো, এর চেয়ে বড় সত্য নেই !

তুমি দেবী, ইচ্ছে হয় হাঁটু গেড়ে বসি

মাথায় তোমার করতল, আশীর্বাদ...

তবু সেখানেও শেষ নেই

কবি নয়, মুহূর্তে পুরুষ হয়ে উঠি

অস্থির দু'হাত

দশ আঙুলে আঁকড়ে ধরতে চায়

সিংহিনীর মতো ঐ যে তোমার কোমর

অবোধ শিশুর মতো মুখ ঘষে তোমার শরীরে

যেন কোনো গুপ্ত সংবাদের জন্য ছটফটানি

-পুরুষ দূরত্বে যাও, কবি কাছে এসো

তোমায় কী দিতে পারি ?

-কিছু নয় !

-অভিমান ?

-নাম দাও অভিমান !

-এটা কিন্তু বেশ ! যদি

অসুখের নাম দিই নির্বাসন

না-দেখার নাম দিই অনস্তিত্ব

দূরত্বের নাম দিই অভিমান ?

-কতটুকু দূরত্ব ? কী, মনে পড়ে ?

-কী করে ভাবলে যে ভুলবো ?

-তুমি এই যে বসে আছো, আঙুলে ছোঁয়ানো থুতনি

কপালে পড়েছে চূর্ণ চুল

পাড়ের নক্সায় ঢাকা পা

ওষ্ঠাগ্রে আসন্ন হাসি-

এই দৃশ্যে অমরত্ব

তুমি তো জানো না, নীরা,

আমার মৃত্যুর পরও এই ছবি থেকে যাবে ।

-সময় কি থেমে থাকবে ? কী চাও আমার কাছে ?

-মৃত্যু ?

-ছিঃ , বলতে নেই

-তবে স্নেহ ? আমি বড় স্নেহের কাঙাল

-পাওনি কি ?

-বুঝতে পারি না ঠিক । বয়স্ক পুরুষ যদি স্নেহ চায়

শরীরও সে চায়

তার গালে গাল চেপে দিতে পারো মধুর উত্তাপ ?

-ফের পাগলামি ?

-দেখা দাও ।

-আমিও তোমায় দেখতে চাই ।

-না !

-কেন ?

-বোলো না । কক্ষনো বোলো না আর এ কথা

আমি ভয় পাবো ।

এ শুধুই এক দিকের

আমি কে ? সামান্য, অতি নগণ্য, কেউ না

তুবি এত স্পর্ধা করে তোমার রূপের কাছে--

-তুমি কবি ?

-তা কি মনে থাকে ? বারবার ভুলে যাই

অবুঝ পুরুষ হয়ে কৃপাপ্রার্থী

-কী চাও আমার কাছে ?

-কিছু নয় । আমার দু'চোখে যদি ধুলো পড়ে

আঁচলের ভাপ দিয়ে মুছে দেবে ?




আয়াত-১

--সজল আহমেদ

।।এক।।
আয়াত! এক শতাব্দি পরে মনে করো আমাদের দেখা হয়ে গ্যালো ধরো, পায়রার পারে।
সূর্যটা তখন ডুবছিলো
রক্তিম ছায়া ছিলো
জলের অতলে যাচ্ছিলো
সূর্য, কিয়ৎক্ষণ পৃথিবীর তরে
তাঁর সব মায়া ছেড়ে।
আমি তখন বেঁচেছিলাম একমাত্র তোমাকে শেষ দেখা দেখতে,
তুমি ও তাই।
আমি পাখি হয়ে গ্যাছি।
তুমি ও পাখি।

।।দুই।।
মনেকর, তুমি আমাকে দেখে উচ্ছাসিত হয়েছিলে!
আমাদের এখানে কোলাহল ছিলো, মুগ্ধতা ছিলো, দুজনার দু-চোখে তাকিয়ে আমাদের আবেগের জল গড়িয়ে ছিলো পায়রার পারেরে!

।।তিন।।
মেঘ তার উন্মুক্ত ডানায় ভর করে এসেছিলো সাদাকাশ ঘাসফুলেদের এ প্রান্তরে।
আয়াত, আমরা লাজুক ছিলাম, আমাদের পবিত্র প্রেমের সাক্ষী স্বরূপ সলিলে কাটছিলো সাঁতার সাদা একজোড়া রাজহাঁস।

।।চার।।
আয়াত! কী জলে ভেজালে সেই মাঠের সবুজঘাসে আজো একমাত্র তোমারে খুঁজি!
কী আনন্দের অশ্রু আমাদের গড়ায়
চোখ ছানাবড়া হয়;
উন্মুক্ত পৃথিবীর বুকে আমরা খুঁজছি একটি প্রিয় স্থান, যেখানে এই শেষ বয়োসে আরো একশতাব্দি ধরে বাঁচবো আমরা!

।।পাঁচ।।
আয়াত চলো পাহাড়ের ঐ খাড়া পাহাড়ের চূড়ায়, যেখানে মেঘের খেলা দেখা যায়।
উন্মুক্ত আকাশে প্রার্থনা করবো আরো একগুচ্ছ নতুন দিনের;
রাত জাগরণ শিহরণ জাগাবে দুটো চাঁদ এক পৃথিবীর
আয়াত তুমিও হাসবে।
আমি ও।
আমরা হাসবো।

।।ছয়।।
অরুণাভ ভোরের সূর্যের মতো মিশে যাও লোমকূপে জমিত ঘাম হয়ে বেরিয়ে এসে;
অনুভূতি চুষে নাও
আমরা একটি বাসাতে দুটোপাখি কোলাহল করে একসময় ঘুমিয়ে পরি, দীর্ঘপথ পারি দেবার অকলঙ্কিত প্রয়াস মাত্র।
পর্দা খোলো, আর ডেকে বুকে লও তৃষ্ণার্ত এ কায়া।
ভাজখোলা চিঠি।
স্বরবর্ণে অঙ্কিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন